পশ্চিমবঙ্গের অপশাসনের রাজনীতির বদলের লড়াইয়ে রাস্তায় মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ চাই। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে লুটে খাওয়ারা। অত্যাচার চলছে খেটে খাওয়ার উপর। অপশাসনের রাজনীতি ছাতা ধরছে লুটে খাওয়াদের মাথায়। এই রাজনীতিকে বদলাতে লড়াই করছে সিপিআই(এম)।
বুধবার মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’-র মহাসমাবেশে একথা বললেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখার্জি। হরিহরপাড়ায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা, রাজ্য কমিটির সদস্য শতরূপ ঘোষ, প্রতিকুর রহমানও।
এদিন রাতে ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ মুর্শিদাবাদ থেকে নদীয়ায় প্রবেশ করবে।
মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, "আমাদের রাজ্যে কাজ নেই। এই মুর্শিদাবাদ জেলায় বিভিন্ন ব্লকে ৪০ বছরের নিচে ছেলেদেরকে দেখতে পাওয়া যায় না। তারা সব বাইরের রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে চলে গিয়েছে। রেজিনগর, বেলডাঙ্গা, জঙ্গিপুর, বহরমপুর- এই চার জায়গায় সরকারের অধিগৃহীত জমি আছে। এখানে পাটচাষিদের থেকে পাট কিনে তা প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা তৈরি হওয়ার কথা ছিল। সেই কারখানায় কাজ করার কথা ছিল মুর্শিদাবাদের ছেলেমেয়েদেরই। তার জন্য বামফ্রন্ট সরকার এই মুর্শিদাবাদ জেলায় এই চারটি জায়গায় জমি অধিগ্রহণ করেছিল। ফুড পার্ক, কোল্ড স্টোরেজের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছিল। তার কোনটাই বাস্তবায়িত করেনি তৃণমূল সরকার।"
মীনাক্ষী বলেন, ‘‘১৫ বছর হয়ে গেল এই সরকারের আমলে কোনও কাজ নেই গোটা রাজ্যে। উল্টে ২২ হাজার কারখানায় তালা পড়েছে। হরিহরপাড়ায় তাঁতিপাড়ায় গিয়েছিলাম। যাঁরা হ্যান্ডলুমে গামছা বোনেন সারাদিনে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা রোজগার করেন। আর যাঁরা হাতের মাকু দিয়ে গামছা বুনছেন, দিনে যদি সর্বোচ্চ চারটি গামছা বুনতে পারেন, তা হলে গামছা প্রতি ১০ টাকা করে দিন শেষে ৪০ টাকা তার মোট রোজগার হয়। বর্তমানে ৪০ টাকায় এক কিলো ভালো চালও হয় না। মুর্শিদাবাদ জেলার ভবিষ্যৎ এমন হওয়ার কথা ছিল না।’’
মীনাক্ষী বলেন, ‘‘অর্থের অভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে মেয়েরা। শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যাচ্ছে, কমছে রক্তের পরিমাণও। প্রসূতি মা বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে প্রতিদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এই সময়কালেই বেড়েছে মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার। এই নিয়ে সরকারের কোন উদ্যোগই নেই। প্রতি গ্রামে আইসিডিএস সেন্টার থাকার কথা। সেখান থেকে পুষ্টিকর খাবার যেমন ভাত, ডাল, সয়াবিন, ডিম পাওয়ার কথা। এই হরিহরপাড়ার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখুন কটা আইসিডিএস সেন্টার থেকে এই রকমের পুষ্টিকর খাদ্য পাওয়া যাচ্ছে। আর এই প্রতিটির পেছনেই রয়েছে তৃণমূলের দুর্নীতির রাজনীতি। যে রাজনীতি, মুর্শিদাবাদকে প্রতিদিন গরিব করছে। মুর্শিদাবাদে পড়ে থাকা জমিতে কারখানা তৈরি করতে দিচ্ছে না। মুর্শিদাবাদের মায়েদের স্বাস্থ্যকে দুর্বল করছে। মুর্শিদাবাদের সদ্যোজাত শিশুদের অপুষ্টির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সেই রাজনীতির বদল করতে লাল ঝান্ডা রাস্তায় নেমেছে।’’
সভায় শতরূপ ঘোষ বলেন, "শুধু বাংলা কে বাঁচানো নয়। নতুন বাংলা গড়তে চায় সিপিআই(এম)। নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এই ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা‘ করছি। সুপ্রিম কোর্টের রায় রয়েছে সম কাজে সম বেতন দিতে হবে। সরকারি ক্ষেত্র, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, রেল, বিমা- সব জায়গায় চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মী রয়েছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে তো কোনও কথাই নেই। আজ কাজ আছে তো কাল নেই। কাজের নির্দিষ্ট সময় নেই। দিনের পর দিন যুব সমাজ কে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখা হচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন করে নতুন বাংলা গড়তে চাই আমরা।"
Bangla Bachao Yatra
লুটের রাজনীতি কেড়ে নিচ্ছে শিশুর পুষ্টি, মায়ের স্বাস্থ্যকে: বদলের আহ্বানে মীনাক্ষী
হরিহরপাড়ার সমাবেশে বলেছেন মীনাক্ষী মুখার্জি। ছবি: অনির্বান দে।
×
Comments :0