EDITORIAL

নেপোয় মারে দই

সম্পাদকীয় বিভাগ

কথায় বলে ‘নেপোয় মারে দই’। কেউ ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টাI নিরলস পরিশ্রম করে সাফল্য অর্জন করেন। আবার কেউ গায়ে হাওয়া লাগিয়ে সেই সাফল্যের কৃতিত্ব জাহির করেন। সেই ১৯৬০-র দশকে প্রতিষ্ঠিত ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর গবেষক-কারিগররা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চন্দ্রায়ন-৩’কে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করাতে সফল হয়েছেন। প্রত্যক্ষভাবে ইসরোর বিজ্ঞানী গবেষকরা এই কাজে যুক্ত থাকলেও তাঁদের নানাভাবে সাহায্য করার জন্য যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার অসংখ্য মানুষ। সমগ্র প্রকল্পের জন্য নানা ধরনের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ নির্মাণ ও সরবরাহ করেছেন তারা। বস্তুত এদের সকলের সম্মিলিত অবদান ভারতের চন্দ্র বিজয়। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এরা সকলেই যেন গৌণ। একমেব অদ্বিতীয় হিসাবে মুখ্য হয়ে উঠেছেন একজন, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দে‍‌শের প্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়া, এমনকি সোশাল মিডিয়াতেও এই মহান সাফল্যের মুকুট প্রধানমন্ত্রীর মাথাতেই দিতে সকলে ব্যস্ত। গোটা কেন্দ্রীয় সরকার এবং শাসকদল সর্বশক্তি নিয়ে বাজারে নেমেছে বিজ্ঞান ও গবেষণাকে হিন্দুত্বের বেদীতে নৈবেদ্য আকারে সাজিয়ে মোদীকে পুরোহিত বানাতে। এখন পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে যে প্রচার হয়েছে তাতে চন্দ্রযানের থে‍‌কে মোদীর ছবি বে‍‌শি এবং আকারে বড়। গোটা দেশে পোস্টার, ফেস্টুন, হোর্ডিংয়ে চন্দ্রাভিযান শুধু মোদীময়। সংবাদপত্র ও টিভি’তেও মোদীই সব। গণেশের হস্তী মস্তক বৈদিক যুগের প্লাস্টিক সার্জারির নিদর্শন বলে ডাক্তারদের সভায় যিনি ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি যে চন্দ্র জয়ের কৃতিত্ব দখলের কাঙাল হবেন তা‍তে সন্দেহ কি।

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গোটা রাজধানীকে মোদীর সাফল্যের প্রদর্শনীতে রূপান্তরিত করা হয় শত শত কোটি টাকা খরচ করে। সেখানেও চন্দ্রায়নকে ঢেকে ফেলেছে মোদীর ছবি। সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডাকার পেছনেও সচেতনভাবে কাজ করেছে মোদী বন্দনা-মোদী স্তুতি। সেখানে ভারতের চন্দ্র জয়ের সমগ্র সাফল্যটাকেই মোদীর সাফল্য বলে দৃষ্টিকটূভাবে বিজ্ঞাপিত করা হয়। শাসক মন্ত্রী-সাংসদরা মোদীর প্রশংসা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেননি। বিজ্ঞানী-গবেষকরা কার্যত কোনও কল্কে পেলেন না। তেমনি পর্দার আড়ালে রেখে দেওয়া হলো অসংখ্য সহযোগীদের। চন্দ্রাভিযানের জন্য যেসব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ প্রয়োজন তার অনেকটাই তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হেভি ইঞ্জিনিয়া‍‌রিং। তাদের তৈরি লাঞ্চপ্যাড থেকেই চন্দ্রায়ন মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল। যে ইঞ্জিনিয়ারিং ও কর্মীরা সেসব বানিয়েছেন মোদী সরকার গত ১৫ মাস তাদের বেতন দেয়নি। দুর্ভাগ্যের হলেও সত্য এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে তুলে দেবে বলে সরকার সরাসরি তাদের বরাত দেয়নি। বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বরাত দিয়ে হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে বানিয়ে এনে চন্দ্র জয় সফল করা হয়েছে। সংসদে যখন এই সাফল্যের জন্য মোদী স্তুতি চলছে তখন দিল্লির রাজপথে বসে বকেয়া বেতনের দাবি করছেন ১৫ মাস বেতন না পাওয়া শ্রমিকরা। এরচেয়ে‌ অমানবিক কদর্যতা আর কি হতে পারে।

Comments :0

Login to leave a comment