দাবি আদায়ে আপোষহীন লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় পদযাত্রায় শামিল হলেন শ্রমজীবী ও কৃষক ক্ষেতমজুর সহ সাধারণ মানুষ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় চারটি স্থানে মিছেলে মানুষের অংশগ্রহণ ছিল নজর কাড়া। মহিলাদের অংশগ্রহণও ছিল উল্লেখযোগ্য। পদযাত্রার সাথে একাধিক এলাকায় হয় পথসভাও।
পথসভার মধ্য দিয়ে পদযাত্রা সূচনা হয় খড়্গপুর গ্রামীন ১ নম্বর ব্লকের মোহনপুরে কাঁসাই নদীর ব্রীজ সংলগ্ন মাঠে থেকে। সভায় সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক বলেন, বর্তমান সময়ে গ্রাম গুলি আজ পুরুষহীন। কারণ এরাজ্যে কাজ নেই। বেকারত্বের যন্ত্রনায় জর্জরিত পরিবারগুলি। বামফ্রন্ট সরকারের হাত ধরে গরীব মানুষের হাতে জমি তুলে দেওয়া শুধু নয়, জাতিগঠনের বুনিয়াদ তৈরীর জন্য গ্রামে গ্রামে প্রাথমিক স্কুল সহ প্রতিটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় গড়ে ওঠে ৩-৫টি মাধ্যমিক ও দুটি করে হাইস্কুল। তারপর আইসিডিএস কেন্দ্র। ব্লকে ব্লকে কলেজ গড়ে ওঠে। আজ তৃণমূলের রাজত্বে ৮ হাজার প্রাথমিক স্কুল বন্ধ। সেই স্থান পূরণ করছে বেসরকারি এবং আরএসএস পরিচালিত স্কুল। সেখানে টাকা দিয়ে আজ শিশুদের পড়াতে বাধ্য করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে তৃণমূল সরকার। আর সেখানকার শিক্ষকদের ৩-৪ হাজার টাকায় মাসিক ভাতায় পড়াতে হয়। আমাদের লড়াই আজ রুটি রুজির সংকট মোকাবিলার এবং জাতিগঠনের বুনিয়াদকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এক সময় স্কুল কলেজে পড়ুয়া উপছে যেতো, সময় মতো শিক্ষক নিয়োগ হতো স্বচ্ছ ভাবে। কৃষক ও ক্ষেতমজুর ঘরের শিক্ষিত বেকার যুবকরা উন্নততর জীবন যাত্রায় কাজ চাইতেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বুঝে ছিলেন, কৃষির ভিত্তির উপর শিল্পায়ন জরুরী তবেই বাংলার অগ্রগতি উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে সম্ভব। আর মমতা ব্যানার্জী সিঙ্গুর, শালবনী, নয়াচর করতে দিলেন না। আজ সেই মমতা ব্যানার্জীর রাজত্বে নতুন কোনো শিল্প যেমন হয়নি, তেমনি বাম আমলের গড়ে ওঠা ৬ হাজারের বেশি শিল্প কাটখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের জেলায় বিদ্যাসাগর শিল্প তালুক, খড়্গপুর শিল্পতালুকে ১৭ টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। অধিকৃত জমিতে শিল্প না করে স্টেডিয়াম নির্মাণ সহ বৃহৎ অংশের জমি ফেলে রেখেছে। জমি দাতা পরিবারের কাজ মিলেনি। কাজের অবাবে আজ এক একটা গ্রাম পরিযায়ী গ্রামের তকমা লাভ করেছে। পঞ্চায়েত হয়েছে আখের গোছানোর হাতিয়ার, পাশাপাশি পাটাদার বরগাদারদের উচ্ছেদ করে সেই জমি লিজে খাটিয়ে টাকা তুলছে তৃণমূল। বাম আমলে নিজ ভূমি নিজ গৃহ প্রকল্প থমকে। এই খড়্গপুরের খেমাশুলি মৌজায় ৭৩টি পরিবারের নামে এই প্রকল্পে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী কাগজ তুলে দিলেও আজ ৯ বছরেও সেই পরিবার এখনও পর্যন্ত ঘর পাওয়া তো দূরের কথা জমি টুকুও পায়নি। সেই বরাদ্দ টাকা লুঠ হয়ে গেছে। জেলা জুড়ে এই ঘটনা প্রতিটি ব্লকে একাধিক রয়েছে। তিনি বলেন,মানুষ এর থেকে পরিত্রান চাইছেন। বাংলায় ধর্মীয় জিগিরের অনুশাসন থেকে মুক্তি চাইছে। চাইছেন রুটি রুজির ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সৌভ্রাতৃত্বের বাংলা। এই লড়াই বাংলা বাঁচানোর লড়াই। এই লড়াইতে আরও মানুষকে সামিল করার আহ্বান জানিয়ে বাংলা বাঁচাও পদযাত্রা এগিয়ে চলে বুথ থেকে বুথের মধ্যদিয়ে। খড়্গপুর গ্রামীণ ব্লক সহ জেলায় ডেবরা ব্লকের গোলগ্রাম গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার চক্ বাজি থেকে পূর্ব সাতকোনা, চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের কুয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পিংলাশ, নামো- খলকপুর, চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের ক্ষীরপাইয়ের ভৈরবপুর থেকে বাঁকা দীর্ঘ পথে বাংলা বাঁচাও পদযাত্রা সংগঠিত হয় শতশত মানুষের লাল ঝান্ডার দীপ্ত মিছিলে।
Bangla Bachao Jatra
লাল ঝান্ডার দীপ্ত মিছিলে বাংলা বাঁচাও পদযাত্রা পশ্চিম মেদিনীপুরে
×
Comments :0