পশ্চিমবঙ্গকে বামমুক্ত করার আরএসএসের পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে তৃণমূল-বিজেপি’র ছদ্ম লড়াইয়ের ভিন্ন সংস্করণই যেন ফুটে উঠেছে গুজরাটে সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে। কংগ্রেস মুক্ত ভারত নির্মাণের আরএসএসের পরিকল্পনার ইঙ্গিত মিলেছে গুজরাটে। বাংলাকে হিন্দুত্ববাদী আরএসএস আখড়া বানাতে হলে আগে নির্মূল করতে হবে বামপন্থীদের। সেটা সরাসরি আরএসএস-বিজেপি’র পক্ষে সম্ভব নয় বলে মধ্যবর্তী পর্বে ব্যবহার করা হচ্ছে তৃণমূলকে। তেমন কংগ্রেসমুক্ত ভারত গড়তে অন্যত্র ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য দল বা শক্তিকে। দিল্লিকে কেন্দ্র করে কিছু রাজ্যে আম আদমি পার্টির ভূমিকা থেকে এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে যে আম আদমি পার্টিও মধ্যবর্তী পর্বে আরএসএস’র স্বার্থসিদ্ধ করছে। দিল্লির পরে কংগ্রেসকে হটিয়ে পাঞ্জাবে ক্ষমতা দখল করে আম আদমি। এবার তাদের লক্ষ্য ছিল গুজরাটে বিজেপি’র প্রধান বিরোধী শক্তি কংগ্রেসকে দুর্বল করে ফেলা। বিজেপি বনাম আম আদমি’র লড়াইকে প্রচারের তুঙ্গে তুলে দিয়ে কংগ্রেসকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা হয়েছে সাইড লাইনের বাইরে।
                        
                        
সেই প্রাক-স্বাধীনতাকাল থেকে একদিকে কংগ্রেস এবং অন্যদিকে বামপন্থী আন্দোলন স্বাধীন, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী আধুনিক ভারত নির্মাণের শক্তিশালী ভিত তৈরি করেছে। সেই ভিতের উপর দাঁড়িয়ে গড়ে উঠেছে আজকের ভারতের সাংবিধানিক কাঠামো। আরএসএস-বিজেপি চাইছে ভারতীয়ত্বের সেই কাঠামোটাকে ধ্বংস করে হিন্দুত্ববাদী ভিতের উপর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণ করতে। গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে বামপন্থীরা এবং কংগ্রেস যদি শক্তিশালী থাকে তাহলে আরএসএসের সেই উদ্দেশ্য কোনদিনই সফল হবে না। তাই দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের নির্মূল করে দিতে চাইছে। সেটা সম্ভব হলে তারা সহজেই ইতিহাসটাই বদলে দিয়ে নতুন মনগড়া হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস রচনা করতে পারবে। মুছে ফেলতে পারবে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্য-পরম্পরাও।
                        
                        
লক্ষণীয়, আম আদমি নিজেদের বিজেপি’র বিরোধী বলে দাবি করলেও তৃণমূলের মতোই আরএসএস’র নামোচ্চারণ করে না। বিজেপি’র ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে কখনোই সরব হয় না। দিল্লিতে দাঙ্গার সময় তারা মৌনব্রত পালন করেছিল। মুখ খুললেই বিজেপি’র হিংসা, বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে বলতে হবে। তাই নীরবতা শ্রেয়। এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের সময়ও আম আদমি বিজেপি’র অগণতান্ত্রিক হিংস্রতার বিরুদ্ধে কথা বলেনি। বরং বিভিন্ন সময় দেখা গেছে ধর্মকে ব্যবহার করে ভোট পাবার চেষ্টা করেছে। গুজরাট নির্বাচনের সময়ও করেছে।
আরও লক্ষণীয়, যেখানে কংগ্রেস প্রধান শক্তি তৃণমূল বা আম আদমি সেখানেই বেশি সক্রিয় হবার চেষ্টা করেছে। গোয়ায় কংগ্রেস হটিয়ে বিজেপি’র রাস্তা প্রশস্ত করতে ভূমিকা পালন করেছে তৃণমূল ও আম আদমি। তেমনি ত্রিপুরায় বামপন্থীদের নিশ্চিহ্ন করতে হাজির হয়েছে তৃণমূল। অন্যদিকে দিল্লিতে ও পাঞ্জাবে কয়েক বছরের ব্যবধানে সেকাজ করেছে আম আদমি। এবার তাদের লক্ষ্য ছিল গুজরাট।
                        
                        
গুজরাটে গত নির্বাচনে মোদীর দল কার্যত হারতে হারতে গদি রক্ষা করেছিল। এবার সেই আতঙ্ক থেকে রক্ষা পেতে মোদী একাই প্রচারের দায়িত্ব নেন। বিপরীতে কংগ্রেস তথা বিরোধী ভোট কেটে বিজেপি’র সুবিধা করে দিতে ময়দানে নামে আম আদমি। ভোটে বিজেপি’র রেকর্ড সাফল্য এসেছে ঠিকই একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে আসরে আম আদমি না থাকলে বিজেপি’র জয় কঠিন হয়ে যেত। ৩৩টি আসনে কংগ্রেস ও আম আদমি’র প্রাপ্ত ভোট বিজেপি’র থেকে বেশি। অথচ জিতেছে বিজেপি। আরও লক্ষণীয়, আম আদমি কখনো বিজেপি’র বিরুদ্ধে বিরোধী ঐক্যের প্রশ্নে সায় দেয় না। তারা একা একাই লড়াই করে। বিজেপি-কে হারানো তাদের মূল লক্ষ্য নয়, বিজেপি বিরোধী শক্তিকে দুর্বল করাই লক্ষ্য।
 
                                        
                                    
                                
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0