ডেউচা পাচামীতে কয়লা খনি হচ্ছে না। ব্যাসল্ট পাথর তুলে বেচে দেওয়া হবে। শিল্পপতি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে অসত্য প্রচার করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই প্রতারণায় জড়িত কেন্দ্রের সরকারও। দমনের শিকার বীরভূমের ওই অঞ্চলের আদিবাসী, মূলবাসী , তফসিলি সহ প্রতিবাদী বাসিন্দারা। আক্রান্ত প্রতিবাদী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা। তার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়ে গণ কনভেনশনের ডাক দিল বিভিন্ন সংগঠন।
সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। প্রেস ক্লাবে বক্তব্য রেখেছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য ও দলিত শোষণ মুক্তি মোর্চার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রামচন্দ্র ডোম, পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে, কংগ্রেস নেতা এবং সমাজকর্মী প্রসেনজিৎ বসু প্রমুখ।
২৯ অক্টোবর মৌলালি যুবকেন্দ্রে কনভেনশনে যোগ দেবেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। যোগ দেবে বিভিন্ন গণসংগঠন।
এদিন প্রেস ক্লাবে রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা বলছেন। কয়লা খনির নামে পাথর তোলার কারবার করা হচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। এই অসত্য প্রকাশও হয়ে পড়ছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড-কে সামনে রেখে বেআইনি কাজ চলছে। পাথর তোলার জন্য টেন্ডারের ঘোষিত নিয়মও ভাঙা হয়েছে। বনাঞ্চল অধিকার আইনকে অমান্য করছে রাজ্য সরকার। বরাত পেয়ে অন্য সংস্থাকে পাথর তোলার দায়িত্ব দিয়েছে একটি সংস্থা। টেন্ডার বিধি অনুযায়ী তা করা যায় না।’’
তিনি আরো বলেন, " ব্যক্তিগত মালিকানার ২২২৭ একর জমি এখনো অবধি অধিগ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার । তার মধ্যে ৩০০ একর জমিজুড়ে রয়েছে বনাঞ্চল। এই অধিগ্রহণে প্রায় ৪৩০০ টি পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ২১ হাজার মানুষকে উৎখাত করা হচ্ছে।এই সংখ্যার মধ্যে ৭ হাজার আদিবাসী ও ৩ হাজার তফসিলি মানুষ রয়েছেন। রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি ১২ একর জমিতে খননেই কাজ চালানোর সময় স্থানীয় মহিলারা তাই বাধা দেন। তার পর থেকেই ওই অঞ্চলে ১২০০ পুলিশ মোতায়েন করে ব্যারিকেড করে দেয় রাজ্য সরকার। আসলে অস্বচ্ছতার সাথে নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। প্রশাসনকে ব্যবহার করে জমির কাগজ নষ্ট করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছেন মুখ্যমন্ত্রী।"
প্রসেনজিৎ বসু বলেন, ‘‘পরিবেশ বিধি মানা হচ্ছে না। অসত্য প্রচার করছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশকে দিয়ে এসব চলছে। এমনকি বাইরে থেকে স্থানীয় মানুষের আন্দোলনের সংহতিতে যোগ দিতে গেলে ধরপাকড়, মারধর হচ্ছে। আর রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দল নীরব থেকে সমর্থন দিচ্ছে। হাইকোর্টে মামলায় কেন্দ্রের কয়লা খনি মন্ত্রক, পরিবেশ মন্ত্রককেও পক্ষ করা হয়েছে। অথচ এরাজ্যের বিরোধী দল, যারা কেন্দ্রে সরকার চালাচ্ছে, তারা সব জেনেও নীরব। মাত্র ১২ একরের প্রকল্প দেখিয়ে বিপুল জমি থেকে উচ্ছেদ চলছে। যুবকদের চাকরির যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, তা মিথ্যা। মৌলালিতে গণকনভেনশনে ধিক্কার জানানো হবে এই প্রতারণার বিরুদ্ধেই।
পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চের সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে বলেছেন, ‘‘২০-২১ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা হয়েছে। তাঁরা প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তাঁদের জীবিকার কী হবে। সরকারে আসীন সেই শক্তি যারা একদিন প্রকৃত শিল্প প্রকল্পকে বন্ধ করে দিয়েছিল। আর এরাই কয়লা খনি প্রকল্পের নামে মিথ্যা প্রচার করছে। কেবল আদিবাসী নন, বিপুল সংখ্যায় আক্রান্ত হবেন বীরভূমের মহম্মদবাজারে ডেউচা পাচামী এলাকার বাসিন্দা তফসিলি জাতির মানুষও। এই অন্যায়ের বিরোধিতার জন্য কনভেনশন।
এক প্রশ্নে প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক ২০১৯ সালে অনুমতি দিয়েছে ডব্লিউবিপিডিসিএল-কে। ছয় বছরে কয়লা খনির কাজ কতটা এগলো কেন্দ্র জানে না? রাজ্যের বিজেপি নেতারা কি ঘুমাচ্ছেন? তা’হলে তাঁরা প্রতিবাদ করেননি কেন?
এই সংবাদ সম্মেলনে ৩৫ টি গণ, সামাজিক, সংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের তরফে ৬টি দাবি তোলা হয়। তার মধ্যে রয়েছে, ডেউচা-পাচামি অঞ্চলে তথাকথিত কয়লাখনি প্রকল্পের নামে ব্যাসল্ট খনন, জমি অধিগ্রহণ এবং পুলিশ-প্রশাসন-শাসকদলের দমনপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। দাবি করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের মাধ্যমে সংগঠিত বেআইনি খনন, দুর্নীতি ও খনির বরাত হাতবদল নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। দাবি করা হয়েছে যে আদিবাসী ও স্থানীয় গ্রামবাসীদের সম্মতি ছাড়া কোনো খনি প্রকল্প চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। উল্লেখ্য এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের পলিট ব্যুরো সদস্য কার্তিক পালও।
Deucha Pachami
চরম প্রতারণা ডেউচায়, ধিক্কার জানিয়ে গণ কনভেনশন ২৯শে
×
Comments :0