নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন অর্থাৎ এসআইআর শুরু হয়েছে। এর আগে বিহারে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এসাআইআর করা হয়েছে। লক্ষণীয় যেসব রাজ্যে নিকট ভবিষ্যতে ভোট নেই সেখানে নিখুঁত প্রস্তুতি নিয়ে, সমস্ত বিষয়গুলি খোলাখুলি আলোচনা করে সব রাজনৈতিক দলগুলির মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের উদ্বেগ ও দুঃশ্চিন্তার নিরসন ঘটিয়ে যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরির পথে পা বাড়ানো দরকার থাকলেও কমিশন তা করেনি। একরকম একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে, নিজেদের খুশি মতো নিয়ম বিধি তৈরি করে ঝড়ের গতিতে এসআইআর করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের প্রবল আতঙ্ক, দুঃশ্চিন্তা ও ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। কমিশনের হাবভাব এবং কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের ভাষ্য থেকে একটা অজানা আশঙ্কা দানা বেঁধেছে সরকারের সাথে যোগসাজশে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকায় নাম রাখা বা তোলার জন্য যেসব নথি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেগুলি বকলমে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের শামিল। তাই বিরোধী মহল থেকে বলা হচ্ছে মোদী সরকার আসলে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে এনআরসি’র প্রাথমিক কাজ সেরে ফেলছে। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, নির্বাচন কমিশনকে ভোটারদের নাগরিকত্ব যাচাই করার অধিকার সংবিধান দেয়নি। সেটা স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কাজ। অমিত শাহ’র নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র দপ্তর সেটা করতে পারছে না বলে গোপনে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে সেটা করিয়ে নিতে চাইছে।
ভারতের নাগরিকদের নাগরিকত্বের কোনও কার্ড দেওয়া হয়নি। বেশ কিছু নথিপত্র আছে যেগুলিকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে গণ্য করা হয়। সেইসব নথি বেশিরভাগ নাগরিকদের কাছে নেই। বিশেষ করে গরিব মানুষ, আর্থ-সামাজিকভাবে পশ্চাৎপদ মানুষ, দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু অংশের মানুষের এই ধরনের নথিপত্র নেই বললেই চলে। এখন নির্বাচন কমিশন যদি ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য সেইসব নথিকে একমাত্র প্রমাণ হিসাবে দাবি করে তাহলে কোটি কোটি ভারতবাসীর পক্ষে আর ভোটার হওয়া সম্ভব নয়। অথচ এরা পাঁচবার, সাতবার এমনকি দশবারও ভোট দিয়েছেন। এদের নাম যদি তালিকায় না থাকে তাহলে তাদের ছেলে মেয়েদের নাম থাকাও কঠিন হয়ে যাবে। তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আধারকে অতিরিক্ত নথি হিসাবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মোট ১২টি নথির মধ্যে একমাত্র আধারই সকল নাগরিকদের কাছে থাকতে পারে।
তাই ভোটার তালিকাকে কোনও অবস্থাতেই নাগরিকত্ব যাচাইয়ের মাপকাঠিতে মাপা যাবে না। একজন ভারতীয়ও যেন ভোটার তালিকা ছুট না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের কাজ নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করা। সেই তালিকায় একজনও মৃত মানুষের নাম থাকবে না, একজনও ভুয়া ভোটারের নাম থাকবে না, একজনও স্থানান্তরিত ভোটারের নাম থাকবে না, তেমনি থাকবে না একই ব্যক্তির একাধিক জায়গায় নাম। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে বা চাপে নয়, কমিশনকে কাজ করতে হবে দিজের দায়িত্বে।
Comments :0