Editorial

দুশ্চিন্তা বাড়ল

সম্পাদকীয় বিভাগ

কার্যত কোনোরকম পূর্বাভাস ছাড়াই পাকিস্তান-সৌদি আরবের মধ্যে সদ্য স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তি নিশ্চিতভাবেই ভারতের হৃদস্পন্দন অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক অবশ্য নতুন কিছু নয়। সৌদি সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের কাজ বরাবরই সামলে আসছে পাকিস্তান। সৌদি সেনাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেবার বিনিময়ে সস্তায় তেল পায় পাকিস্তান। পাক অর্থনীতিতে এই সস্তার তেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবার নতুন করে যে চুক্তি হয়েছে সেটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী। এর অন্যতম প্রধান শর্ত হলো দু’দেশের কোনও একটি দেশ যদি বাইরের আগ্রাসনের শিকার হয় তাহলে ধরে নেওয়া হবে দু’দেশই আক্রান্ত। তার মোকাবিলা করবে দু’দেশ একসঙ্গেই। অনেকটা আমেরিকা ইউরোপের সামরিক জোট ন্যাটোর মতো। ন্যাটো সদস্যদের যে কোনও একটি দেশ সামরিক আগ্রাসনের শিকার হলে সেটা সব সদস্য দেশ আক্রান্ত বলে ধরা হয়।
এখন প্রশ্ন হলো সৌদি আরব আচমকা পাকিস্তানের সঙ্গে এমন চুক্তি করল কেন? আরব দুনিয়ায় আর্থিকভাবে এবং সামরিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ সৌদি। আমেরিকার সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ অস্ত্র ক্রেতা সৌদি। মার্কিন বিশ্বস্ত সহযোগী আগ্রাসী ইজরায়েলের সঙ্গে আরব দুনিয়ার সম্পর্ক তিক্ত হলেও আমেরিকা রেফারির ভূমিকায় থেকে সৌদি আরব সহ আরব দেশগুলির নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিয়ে রেখেছে গোড়া থেকেই। তাই প্যালেস্তাইন সহ সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ইরান প্রভৃতি মুসলিম দেশে আগ্রাসন ও গণহত্যা চালালেও আরব দেশগুলি নীরব থাকে। এতকাল এভাবেই চলছিল। কিন্তু বিগত আড়াই বছর ধরে টানা গাজায় গণহত্যা ও ধ্বংসলীলা চালানোর প্রেক্ষাপটে ইজরায়েলকে কেন্দ্র করে আরব দুনিয়ায় উদ্বেগ ও শঙ্কা বেড়েছে। ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে তাদের দুর্ভাবনা বেড়েছে। এরই মধ্যে ইরানে ইজরায়েলের সামরিক হামলা এবং তাতে আমেরিকার যোগদান আমেরিকা সম্পর্কেও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় ভূরাজনৈতিক সম্পর্কে কিঞ্চিৎ বদল এলে আমেরিকাকে বার্তা দিতে চেয়েছে সৌদি আরব। পাক-ভারত সাম্প্রতিক যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকার অত্যন্ত ঘনিষ্ট হয়ে ওঠা পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি করে মোক্ষম কৌশলগত চাল চেলেছে সৌদি আরব। পাকিস্তানও সেটা সাগ্রহে লুফে নিয়ে ভারতকে পরোক্ষে জোরালো বার্তা দিয়েছে।
সৌদি আরবের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার সময় নরেন্দ্র মোদী সৌদি সফরেই ছিলেন। এই অবস্থায় ভারতের শত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে এমন চুক্তি ভারতের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে শুধু নয়, সৌদি আরবের সঙ্গে আগামী সম্পর্ক কেমন হবে সেটা অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, অপারেশন সিঁদুরের সময় ন্যাটো সদস্য তুরস্ক সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ভারতের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে তিক্ততার ছাপ পড়ে। সৌদি আরবের সঙ্গে তেমন হবে না তো? তাছাড়া পাক-ভারত সম্পর্ক এখন যেখানে দাঁড়িয়ে তাতে যে কোনও সময় সামরিক সংঘাত শুরু হলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। তখন ভারত কর্তৃক পাকিস্তান আক্রান্ত এই যুক্তিতে ভারতের বিরুদ্ধে সৌদি আরবও যুদ্ধে নেমে যাবে না তো? মনে রাখতে হবে পাকিস্তানের সঙ্গে তো বটেই সৌদি আরবের সঙ্গেও চীনের সম্পর্ক ভালো। অতএব মোদীর ভারতকে অনেক সতর্ক হয়ে কূটনীতির চাল চালতে হবে। তা না হলে পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাওয়া দুষ্কর হবে।

Comments :0

Login to leave a comment