kerala

শূন্যই যখন বিজয়ের প্রতীক

জাতীয়

এন এস সাজিথ: তিরুবনন্তপুরম

রাজ্য গঠনের ৬৮তম বার্ষিকীতে ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রথম রাজ্য হিসাবে চরম দারিদ্র সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করল কেরালা। শনিবার তিরুবনন্তপুরমে অনুষ্ঠিত এক বিশাল সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ঘোষণা করেন, সমষ্টিগত ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে কেরালা চরম দারিদ্রকে জয় করেছে।
বিজয়ন বলেন, ‘নব কেরলাম’ (নতুন কেরালা) উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য কেরালার জীবনমানকে উন্নত দেশগুলির সমতুল্য করা, যা এখন আর দূরে নয়। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি আমেরিকার তুলনায় ০.৫৫ শতাংশ। তবুও অনেক ক্ষেত্রে আমরা আমেরিকাকে ছাপিয়ে গিয়েছি। এটাই আসল ‘কেরালা স্টোরি’। কেরালার শিশু মৃত্যু এবং মাতৃ মৃত্যু হার আমেরিকার থেকে কম। বিজয়ন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১ লক্ষ জন্মে ২২.৩ জন মা মারা যান, অথচ কেরালায় সেই সংখ্যা মাত্র ১৮। কেরালায় প্রতি হাজার জন্মে ৫টি শিশুর মৃত্যু ঘটে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সেই হার ৫.৬। আবার, কেরালায় সাক্ষরতার হার ৯৬.২ শতাংশ, অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা মাত্র ৭৯ শতাংশ। বহুমাত্রিক দারিদ্র কেরালায় প্রায় সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে (০.৫৫ শতাংশ), যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা ৫.৬৮ শতাংশ বলে তিনি জানান। বিজয়ন বলেন, উন্নয়ন মানে কেবল আকাশচুম্বী অট্টালিকা নয়, বরং মানুষের সুখও উন্নয়নের অংশ।
উত্তর প্রদেশে যেখানে মাতৃ মৃত্যুর হার প্রতি ১ লক্ষ জন্মে ১৪১, সেখানে কেরালায় তা মাত্র ১৮। এছাড়া মোদী সরকারের সময়ে তৈরি নীতি আয়োগের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যের দারিদ্রের হার সারা দেশে সর্বনিম্ন। নীতি আয়োগের পরিসংখ্যান অনুসারে, কেরালা টেকসই উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও ভারতের প্রথম স্থানে রয়েছে। 
এদিনের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এম বি রাজেশ সভাপতিত্ব করেন। মুখ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ‘চরম দারিদ্র নির্মূল প্রকল্প রিপোর্ট’ প্রকাশ করেন এবং তা অভিনেতা মাম্মুট্টির হাতে তুলে দেন। মুখ্যমন্ত্রী ‘চরম দারিদ্র-পরবর্তী প্রকল্প নথি’ কেরালা পরিকল্পনা বোর্ডের সহ-সভাপতি ভি কে রামচন্দ্রনের হাতে প্রদান করেন। স্থানীয় স্বশাসন বিভাগের প্রধান সচিব টিঙ্কু বিসওয়াল রিপোর্টটি উপস্থাপন করেন। মুখ্যসচিব ড. ভি পি জয় স্বাগত ভাষণ দেন এবং বিশেষ সচিব টি ভি অনুপমা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি, রাজ্য সম্পাদক এম বি গোবিন্দন সহ বহু বিশিষ্ট জন। 
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজয়ন আরও বলেন, আজ আমরা যে চরম দারিদ্র নির্মূলের ঘোষণা করছি, এটি কেরালার ‘জনকেন্দ্রিক বিকল্প উন্নয়ন মডেল’-এর জয়। যখন সারা দেশে উদারনীতিবাদী নীতিগুলি বৈষম্য বাড়িয়ে তুলছে এবং সম্পদ কেবলমাত্র অল্প কয়েকজনের হাতে জমা হচ্ছে, তখন কেরালা গর্ব করে বিশ্বের সামনে ঘোষণা করছে যে, সহানুভূতিশীল, সাম্যবাদী ও কল্যাণমুখী একটি সমাজ— যেখানে সবাইকে আপন করে নেওয়া হয়— তা সম্ভব। বিজয়ন বলেন, আমরা একে কেবল সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখি না। এই মাটির প্রতিটি মানুষের সাফল্য, যারা ঐক্যবদ্ধভাবে সব সঙ্কট মোকাবিলা করেছে এবং ‘নব কেরলাম’-এর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। এই বিজয় কুদুম্বশ্রী কর্মীদের, যারা তাঁদের আশপাশের চরম দরিদ্র পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করেছেন; সেই স্বেচ্ছাসেবকদের, যারা তাঁদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দিয়েছেন; এবং প্রতিটি সরকারি কর্মচারীর, যারা জনগণের উদ্যোগে অংশ নিয়েছেন। 
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে পিনারাই বিজয়ন দ্বিতীয় সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তই  এই অর্জনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। এদিন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী কেরালাকে ‘চরম দারিদ্র-মুক্ত রাজ্য’ হিসাবে ঘোষণা করেন। বিজয়ন জোর দিয়ে বলেন, আমরা শুধু আজকের সমস্যাগুলো সমাধান করছি না, আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলছি।

Comments :0

Login to leave a comment