সুভাষ পারিয়াল
তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। গ্রামের যুবকরা রাজ্যে কাজ না পেয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হলেন। আবার এদের মধ্যে কেউবা কফিন বন্দী হয়ে গ্রামে ফিরছেন। এই বিষয়ে বিজেপি’র মুখে কুলপ। ওরা ব্যাস্ত বিভাজনের রাজনীতিতে। গ্রামে এক সময়ে যাদের এক প্যাকেট বিড়ি কেনার ক্ষমতা ছিল না। তৃণমূলের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন অসাধু উপায়ে ভেড়ির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছে। গোটা পশ্চিমবঙ্গ সহ হিঙ্গলগঞ্জজুড়ে যেভাবে মানুষের ওপর বিশেষ করে মহিলাদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে তৃণমূল। সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে কোমরবেঁধে লড়াইয়ের আহ্বান জানালেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখার্জি। শুক্রবার হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ চৌমাথার মোড়ে এক জনসভায় মীনাক্ষী বলেন, জোর করে গরিব মানুষের জমিও কেড়ে নিয়েছে তৃণমূল। প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়েছে গত ১৫ বছরে। গ্রামের মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব হয়েছেন আর তৃণমূলীরা নামে বেনামে বিভিন্ন জায়গায় বিঘা বিঘা জমি, দামি গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিটি বুথে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে জানকবুল লড়াই করে লালঝান্ডাকে আরও শক্তিশালী করুন। সিপিআই(এম) হিঙ্গলগঞ্জ দক্ষিণ এরিয়া কমিটির ডাকে এদিনের সভায় হিঙ্গলগঞ্জের দূর দূর গ্রাম থেকে কৃষক, খেতমজুর, মহিলা ছাত্র, যুবরা লালঝান্ডা কাঁধে নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে জনসভাস্থলে এসেছেন। অনেকে নদী পথেও এসেছেন। মীনাক্ষী বলেন, গ্রামে ঢুকেই যে তিনতলা বা চারতলা বাড়ি দেখবেন তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান অথবা পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি। এই অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে গ্রামের মানুষ দলমত নির্বিশেষে এক হয়ে লড়াইের আবেদন তিনি জানিয়েছেন। হিঙ্গলগঞ্জের ২৫৪ টি বুথেই কোমরবেঁধে এই লড়াই গড়ে তুলুন।
জনসভায় মীনাক্ষী মুখার্জি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাষ রায়চৌধুরী, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক পলাশ দাশ, ঝন্টু মজুমদার প্রমুখ। সভাপতি ছিলেন রবি বিশ্বাস।
এদিন আভাষ রায়চৌধুরী বলেন, গোটা দেশ ও রাজ্যে গরিব খেটে খাওয়া মানুষের বিরুদ্ধে এক নীতি নিয়ে চলেছে তৃণমূল ও বিজেপি। রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা, রেল, বীমা, ব্যাঙ্ক,বিমানবন্দর, খনি আদানী আম্বানীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আর এই রাজ্যের সরকার প্রায় ৯০ শতাংশ গড়ে ওঠা একটি কারখানাকে ধ্বংস করে রাজ্যের যুবকদের স্বপ্ন কে ভেঙে চুরমার করেছে। রাজ্যে শিল্পায়ানের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে শিল্প সম্মেলন করছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই রাজ্যে শিল্প তো আসেইনি বরং যে শিল্পগুলি এই রাজ্যে গড়ে উঠেছিল তার বেশিরভাগ তোলাবাজির চোটে হয় বন্ধ হয়েছে নচেৎ অন্যরাজ্যে চলে গেছে।
পলাশ দাশ বলেন, গ্রামের গরিব মানুষের মতো নদী বাঁধগুলির অবস্থা খুবই শোচনীয়। যে কোন মূহুর্তে নদী বাঁধ ভেঙে গ্রামকে ভাষিয়ে দিতে পারে। ফলে মানুষ গৃহহীন যেমন হবেন তেমন গরিব কৃষকের ফসলের সর্বনাশ হবে। খেতমজুরদের কাজ থাকবে না। বামফ্রন্টের আমলে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছিল। শুধু চাষাবাদ নয় গ্রামের রাস্তাঘাট, নদীর ওপর কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে সেতু তৈরি হয়েছিল। গ্রামের গরিব মানুষের ঘরের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার লক্ষে একের পর এক স্কুল খোলা হয়েছিল। সেই সময়ে মিড ডে মিলের ব্যাবস্থাও করা হয়। শিক্ষার মানোন্নয়ন হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতো। প্রতিবছর ছিল টেট, এসএসসি পরীক্ষা। গ্রামের প্রচুর ছেলে মেয়ে স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকার সুযোগ পেয়েছিল। আর বর্তমানে গ্রামের কোন স্কুলে যদি হাজার খানেক ছাত্র বা ছাত্রী থাকে তাহলে ৭ জন শিক্ষক বাকিরা প্বার্শ শিক্ষক। এই অবস্থা পরিবর্তন করতে সকলকে একজোট হয়ে অর্জিত অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবিতে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হবে।
Comments :0