অনির্বাণ দে: হরিহরপাড়া
২০০৮ সালে অনেক স্বপ্ন নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল হরিহরপাড়া হাজি একে খান কলেজের। কলেজের প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছিলেন শিক্ষানুরাগী থেকে এলাকার কৃষকরাও। সকলের যৌথ প্রচেষ্টার পরে ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে সেই কলেজে প্রথম বর্ষের ১,৫০৮টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩৬০টি আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে। ফাঁকা ৭৫ শতাংশ আসন।
এই হরিহরপাড়াতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে হরিহরপাড়ার স্বরূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লোচনমাটি গ্রামের জুনিয়ার হাইস্কুল। যাঁরা অনেক স্বপ্নে গ্রামে স্কুলের জন্য জমি দিয়েছিলেন। তাঁরা আগাছা আর জঙ্গলে ঢাকা ফাঁকা স্কুল বিল্ডিং দেখে শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
মুর্শিদাবাদ জেলার ২৫টিরও বেশি স্কুল কয়েক বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এটাই কি রাজ্যের ভবিষ্যৎ? নাকি এর উল্টোদিকে হাঁটতে হবে। রাজ্যকে বাঁচাতে সব মানুষকে জুড়তে হবে। এই আলোচনা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা বাঁচাও যাত্রা।
বুধবার দুপুরে হরিহরপাড়া কিষাণ মান্ডির সামনে থেকে বাংলা বাঁচানোর দাবি নিয়ে বিশাল মিছিলে সামনের সারিতে হেঁটেছেন মীনাক্ষী মুখার্জি, জামির মোল্লা, শতরূপ ঘোষ, দেবাঞ্জন দে-রা। একপাশে জনবসতি আর আরেক পাশে হলুদ সর্ষে ফুলে ঢাকা মাঠ ছাড়িয়ে এগিয়ে গিয়েছে মিছিল।
মাঝে কোথাও কলেজ ছাত্রীরা, কোথাও আশাকর্মীরা মিছিলে সামনে এসে জানিয়েছেন নিজেদের দাবি। সেই দাবি জুড়ে নিয়েছে বাংলা বাঁচাও যাত্রা।
যে হরিহরপাড়া প্রগতির দিকে এগচ্ছিল, সেখানেই লুটের সাম্রাজ্য বিছিয়েছে তৃণমূল, বাংলা বাঁচাও যাত্রা-য় শামিল হয়ে বলেছেন প্রাক্তন বিধায়ক ইনসার আলি বিশ্বাস।
হরিহরপাড়ায় লুটের ছবিটা বহরমপুর থেকে আসার রাস্তার দু’পাশ দেখলেই বোঝা যায়। বাংলা বাঁচাও যাত্রা-য় সিপিআই(এম) নেতাদের বলেছেন বহরানের ফারুক সেখ, আব্বাস মন্ডলরা। যে রাস্তার দু’পাশে ছিল বড় বড় গাছ। সেই রাস্তা বড় করার নামে সব গাছ কেটেছে তৃণমূল নেতারা। গাছের টাকা যায়নি সরকারি কোষাগারে। আর সবুজও হয়েছে ধ্বংস।
এদিন বাংলা বাঁচাও যাত্রাও চলার পথে আওয়াজ তুলেছে সবুজ বাঁচানোর। জলাভূমি, নদী, বিল বাঁচানোর। দাবি উঠেছে রাস্তার হাল ফেরাতে হবে। পঞ্চায়েতে লুট বন্ধ করতে হবে। এলাকায় কাজ দিতে হবে।
ডিসেম্বরের শুরুতেই হরিহরপাড়ার শহরবাসা, রাইপুর গ্রামে ঘুরেছেন এসএফআই-র নেতা কর্মীরা। দেখেছেন, বন্ধ হয়ে গিয়েছে শহরবাসা আপার প্রাইমারি স্কুল। বন্ধের মুখে প্রাইমারি স্কুলও। সেদিন উঠোনে বসেই এসএফআই নেতারা বলেছেন, হরিহরপাড়ায় ৮টি স্কুল বন্ধ। আরও প্রায় ১৫টি স্কুল বন্ধের মুখে। এটা চলতে দেওয়া যায় না।
এদিন সেই দাবি থেকেই হরিহরপাড়ার তরতিপুর হাইস্কুলের ছাত্র রাকবুল সেখ, মহম্মদ সুমন সেখরা এসেছিল বাংলা বাঁচাও যাত্রায়। “স্কুল বাঁচাও” অ্যাপ্রন পরে সরব হয়েছে নিজেদের দাবি নিয়ে।
কুটির শিল্প বাঁচানোর আর্তি নিয়ে যাত্রায় জুড়েছেন তরতিপুরের গামছা শিল্পীরা।
মুর্শিদাবাদজুড়ে লুটের গদিতে বসে তৃণমূল। বিজেপি খেলছে তৃণমূল বিরোধী ভোট কাটতেই। দুই দলের হাতিয়ার ধর্ম নিয়ে বিভাজনই। হরিহরপাড়াতেও বাংলা বাঁচাও যাত্রা ছুঁয়েছে সেই বাস্তবতা। স্লোগান তুলেছে, সব মানুষকে একজোট করার।
Comments :0