Farmers in Dooars

হাতি ও পাখির তাণ্ডব রুখতে অভিনব কৌশল ডুয়ার্সের কৃষকদের

জেলা

ডুয়ার্সের প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর সহাবস্থান দীর্ঘদিনের। তবে বনাঞ্চল সংলগ্ন জনবসতিতে হাতির তাণ্ডবে প্রতি বছরই ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে প্রধান খাদ্য ফসল ধান পাকতে শুরু করায় জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে হাতি ও বিভিন্ন পাখির উৎপাত অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ফসলের নিরাপত্তা নিয়ে যখন কৃষকরা দিশাহারা, ঠিক তখনই অভিনব এবং পরিবেশবান্ধব এক উপায়ে হাতি ও পাখির হাত থেকে নিজেদের ধান ক্ষেত রক্ষায় সফল হচ্ছেন ডুয়ার্সের কৃষকরা। মেটেলি ব্লকের গরুমারা জঙ্গল সংলগ্ন মূর্তি এলাকার ধান ক্ষেতগুলিতে গেলেই এই অভিনব উদ্যোগের বাস্তব রূপ চোখে পড়বে। কৃষকরা তাদের ক্ষেত পাহারা দিতে এবার প্রযুক্তির বদলে সাধারণ, অথচ অত্যন্ত কার্যকর একটি কৌশল অবলম্বন করেছেন।
ধান ক্ষেতের চারপাশে নির্দিষ্ট দূরত্বে খুঁটি পুঁতে তার টাঙানো হয়েছে। এই তারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে প্লাস্টিকের প্যাকেটের ছোট ছোট টুকরো। রাতে হাতির দল ক্ষেতের দিকে এগিয়ে এসে তারে ঘষা লাগালেই প্লাস্টিকের টুকরোগুলো নড়ে ওঠে এবং তারে 'ঝনঝন' শব্দ তৈরি হয়। এই শব্দ দ্রুত 'অ্যালার্ম' হিসেবে কাজ করে ক্ষেত পাহারাদার কৃষকদের সতর্ক করছে। আওয়াজ শুনে সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা সার্চলাইট জ্বালিয়ে অথবা পটকা ফাটিয়ে হাতির দলকে মাঠের কাছাকাছি আসার আগেই নিরাপদে তাড়িয়ে দিতে পারছেন।
স্থানীয় কৃষক সাবুল হক ও সানচেড়িয়া ওঁরাও বলেন, ‘‘ধান পাকতে শুরু করেছে, তাই এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। আগে হাতির অত্যাচারে রাতের ঘুম উড়ে যেত। এখন এই পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে ফসল অনেকটাই রক্ষা পাচ্ছে। দিনের বেলায় ধান ক্ষেতে পাখির উপদ্রব রুখতে এই কৌশল একইভাবে কার্যকর। বাতাসে নড়ে ওঠা ঝুলন্ত প্লাস্টিকের টুকরোগুলো ক্রমাগত আলো প্রতিফলিত করে এবং নড়াচড়া করে। এর ফলে পাখিরা ভয় পেয়ে ধান ক্ষেতে নামতে সাহস পাচ্ছে না। কোথাও কোথাও কৃষকরা আবার ক্ষেতের মাঝে টাঙিয়েছেন লাল কাপড়, যা পাখিদের আরও বেশি ভয় পাইয়ে দূরে রাখতে সাহায্য করছে।’’
কৃষকদের দাবি, এই উদ্যোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি ফসল যেমন রক্ষা করছে, তেমনই হাতি বা পাখির কোনো রকম ক্ষতি হচ্ছে না। ফলে ফসল রক্ষা এবং বন্যপ্রাণী সুরক্ষার একটি সুন্দর ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। ডুয়ার্সের এই অভিনব এবং সফল উদ্যোগ এখন অন্যান্য জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার কৃষকদের কাছেও আদর্শ হয়ে উঠছে। ফসল রক্ষায় কৃষকদের এই স্বতঃস্ফূর্ত উদ্ভাবনী ক্ষমতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

Comments :0

Login to leave a comment