মেডিক্যাল কাউন্সিলের ভোটের দিনই হুমকি দেওয়া হয়েছিল, বিরোধীদের দেখে নেওয়া হবে। কারণ তাঁরা সরকারপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন মেডিক্যাল কাউন্সিল ভোটে ব্যাপক কারচুপি এবং ভোট লুটের। শুক্রবার সেই হুমকিরই প্রতিফলন ঘটালো নবান্ন। এদিন বদলির নোটিস ধরানো হলো বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে, যাঁদের মধ্যে কয়েকজন কাউন্সিলের ভোটে বিরোধীপক্ষের প্রার্থীও ছিলেন। এই বদলিকে রীতিমতো প্রতিহিংসামূলক বলেই মনে করছেন রাজ্যের চিকিৎসকমহল।
                        
                        
স্বাস্থ্য দপ্তরের বদলির তালিকায় বিশেষভাবে নাম রয়েছে ডাঃ বিষাণ বসু, ডাঃ পরাগবরণ পাল, ডাঃ মানসকুমার গুমটা, ডাঃ তুলিকা ঝা, ডাঃ সরস্বতী দত্ত বোধকের নাম। যাঁরা নির্বাচনে ভোট লুট ও ব্যালট বাক্সে কারচুপি রুখতে সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁরা প্রবলভাবে বিরোধিতা করেন শাসক দলের চিকিৎসক নেতাদের অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তারের চক্রান্তের। তালিকায় নাম রয়েছে ডাঃ বিষাণ বসু এবং ডাঃ পরাগবরণ পালের, যাঁরা নির্বাচনে বিরোধী পক্ষের প্রার্থী হয়েছিলেন। এছাড়া বদলির তালিকায় রয়েছে আরও নাম যাঁরা নির্বাচনের সময়ে সরকারপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সে সময়েই হুমকি এসেছিল বদলির। যা কার্যত প্রতিষ্ঠিত হলো এদিন।  
                        
                        
বদলির তালিকা অনুযায়ী ডাঃ বিষাণ বসু, যিনি বর্তমানে কর্মরত ছিলেন কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, তাঁকে বদলি করা হয়েছে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ডাঃ পরাগবরণ পাল বর্তমানে কর্মরত ছিলেন কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতালে। তাঁকে বদলি করা হয়েছে পুরুলিয়ায় দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অন্যদিকে ডাঃ মানসকুমার গুমটা বর্তমানে কর্মরত ছিলেন কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতালে। তাঁকে বদলি করা হয়েছে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
এছাড়া তালিকায় রয়েছে ডাঃ তুলিকা ঝা’র নাম, যিনি রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে কর্মরত ছিলেন, তাঁকে বদলি করা হয়েছে উত্তরবঙ্গে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মেডিক্যাল কাউন্সিলের নির্বাচনের সময়ে সরকার পক্ষের ভোট লুটের দুরভিসন্ধি লক্ষ্য করে তিনি সরকারি লোকজনের হাতে ব্যালট তুলে দিতে অস্বীকার করেছিলেন। 
এছাড়া তালিকার ডাঃ সরস্বতী দত্ত (বোধক) বর্তমানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যিনি কর্মরত ছিলেন, তাঁকে বদলি করা হয়েছে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এই উদ্দেশ্যমূলক বদলির ঘটনার গভীর নিন্দা করেছে অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের বিভিন্ন চিকিৎসকদের বক্তব্য, এই বদলির তালিকায় আরও এমন কিছু নাম রয়েছে যাঁরা নির্বাচনে সরকারপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নিতে পারেননি। এই উদ্দেশ্যমূলক বদলির গভীর নিন্দা জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন।
                        
                        
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালে যে ভোট হয়েছিল তাও ছিল এক চূড়ান্ত প্রহসনে ভরা। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের সেই প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে হাইকোর্টের নির্দেশে নতুন করে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে এবছর। এই প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই ফের একইভাবে সরকারপন্থী প্রার্থীরা নানা অনৈতিক কাজকর্ম করে চলেছে বলে অভিযোগ ওঠে। 
চিকিৎসক মহলের বক্তব্য ছিল, যে কমিটির হাতে স্বচ্ছ নির্বাচন করার দায়িত্ব হাইকোর্ট দিয়েছিল, সেই কমিটির ৫ জনই নিজেদের সরকারপন্থী ঘোষণা করার পর বিশ্ব বাংলা লোগো এবং অশোকস্তম্ভ ব্যবহার করে নির্বাচন লড়তে নেমে পড়েছেন। চিকিৎসকদের কাছে ব্যালট পৌঁছাতে শুরু হলে আগের বারের মতো আবারও ফাঁকা ব্যালট জমা দেওয়ার হুমকি আসতে থাকে। ফাঁকা ব্যালট সংগ্রহের চেষ্টা চলে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে বদলি করে এবং পদোন্নতি আটকে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে। ফাঁকা ব্যালট না জমা দিলে পিজিটি ডাক্তারদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখানো হয় বলে ব্যাপক অভিযোগ ওঠে।
                        
                        
এরপর নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যেই ব্যাগে করে হাজার হাজার ভুয়ো ব্যালট ফেলার চেষ্টা করে সরকারপন্থীরা। শাসক গোষ্ঠীর ওই ছাপ্পা ভোট দেওয়ার চক্রান্ত প্রতিহত করতে দিনরাত ব্যালটবাক্স পাহারা দিতে থাকেন চিকিৎসকরা।   
গণনা শুরু হলে নানারকম, নানা রঙের খাম ও অজস্র ভুয়ো জাল ব্যালট চিহ্নিত হয়। প্রথমে গোছা গোছা ছাপ্পা ব্যালট ড্রপ বক্সে ঢোকানো, আর তারপর বিভিন্ন প্রকার রঙিন ব্যালটে ভুয়ো ভোটদান, ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে অশান্তি সৃষ্টি— সব মিলিয়ে চরম উত্তেজনা চলেছে এবার মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্বাচনে। এমনকি গণনার সময়েও অনাবশ্যকভাবে দিনের পর দিন দেরি করা, ব্যাপক অনিয়ম ও গাফিলতি নজরে এসেছে চিকিৎসক মহলের। নির্বাচন স্থলেই প্রতিবাদী চিকিৎসকদের ওপর নেমে এসেছিল হুমকির পর হুমকি। এবার সেই পথ ধরেই এই বদলির নোটিস বলে বক্তব্য রাজ্যের চিকিৎসক মহলের।
                                        
                                    
                                
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0