বইকথা
মালঞ্চমালা: পাপ-পুণ্যের দ্বন্দ্বে ভরা ছোটদের নাট্যগ্রন্থ
সৌরভ দত্ত
নতুনপাতা
শিশুকিশোর উপযোগী লেখার ক্ষেত্রে কথা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জুড়ি মেলা ভার।দ্বেজ পাবলিশিং থেকে ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল নীললোহিতের ছোটদের নাটক মালঞ্চমালা। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কৃষ্ণেন্দু চাকী। নাটকটির মধ্যে ছড়ানো রয়েছে হরেক মনিমাণিক্য।এক দেশে এক রাজা ছিল ।রাজার বড় দুঃখ তাঁর সন্তানহীনতা।হাতিশালে হাতি ,ঘোড়াশালে ঘোড়া সজ্জিত থাকলেও কিংবা রাজ্যে ফৌজদারি উপদ্রব না থাকলেও সন্তান না থাকার দুঃখ তাঁকে ব্যথাতুর করে তোলে। একদিন রাজা ও রানি সোনার পালঙ্কে শুয়ে আছেন সবেমাত্র ঘুম এসেছে তাঁরা দুজনেই শুনতে পেলেন দৈববাণী যা আসলে কালপুরুষের গান:”শোনো শোনো মহারাজ, শোনো মহারানি/এখনো যেওনা ছেড়ে এই রাজধানী/ভাবেন যদি মনে মনে কী করেছো পাপ/পাপের খন্ডন হলে যাবে অভিশাপ ”--এই গান শেষ হলে চমকিত হলেন রাজা।রাজা রানিকে উদ্দেশ্য করে বললেন–“রানি, তুমি কী পাপ করেছো?”প্রত্যুত্তরে রানি বলল–আমি তো কিছু পাপ করিনি। এমনকি একটা পিঁপড়ে পর্যন্ত মারিনি।রানি উল্টে রাজাকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি কাউকে হত্যা করেছেন কিনা।রাজা কিঞ্চিত বিচলিত হয়ে বলেন–“যদিও আমি লোক মেরেছি বহু/কিন্তু সে তো যুদ্ধ/যুদ্ধে তুমি মা করো সমস্তটাই শুদ্ধ ”।এর মাঝে মঞে মন্ত্রীর প্রবেশ তিনি বলেন–“এ কী কথা শুনি আজ/পাপ করবেন মহারাজ/এ তে কানে শোনাও মহাপাপ ”।রাজা বলেন–“বলো দেখি সত্য করে/কারাগারে আছে ক’জনা”। এভাবেই পাপ-পুণ্যের দ্বন্দ্বে এগোতে থাকে নাটকটি।কোটাল মহারাজের জয়ধ্বনি দিতে থাকেন।কথক বলেন–“পরদিন রাতে আবার রাজা আর রানি একই স্বপ্নে শুনলেন দৈববাণী ”। নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কে মালঞ্চমালার প্রবেশ–“যদি বা কিছু পুণ্য করে থাকি/না করে থাকি পাপ/তাহলে কেউ ছুঁয়ো না এসে আমাকে/দেব যে অভিশাপ ”।ভূত-পেত্নি নাচতে থাকে।ভূত বলে–“দে দে ওর হাড় মাংস খাই/তারপর ওকে খোকা ভূত বানাই”। একসময় দৃশ্যপটে দেখা যায় যমদূতকে–“হে-হে-হে-হে-হে-হে/ অভিশাপের ভয় দেখায় এই মেয়েটা কে হে?” অকুতোভয় মালঞ্চ চেঁচিয়ে ওঠে –“পাই নাকো ভয় তোমাদের এই ধমকে/থেকে নিয়ে এসো তোমাদের রাজা যমকে”--বাইরে শনশন হাওয়া বয়, বাতাস নিচু হয়ে আসে। ফিসফিস শব্দ শোনা যায়:“ও মালঞ্চ, মালঞ্চ লোক,মরা পতিকে ছাড়”।রাত্রি শেষ হলে বনদেবীকে মালঞ্চ বলে–“কোথা বন্দেগী,সি বলে দাও তুমি/কেমনে যে পার হবো এই বনভূমি ”।বন্দেগী সবার উদ্দেশ্যে বলেন–“তোরা সবাই সাথে করে মালঞ্চকে নিয়ে মা/দেখিস মেন শাস্তি পায় সে পাপী রাজা!”এরপর কথক শোনান–ভয়-ভীতি দূর হয়ে সব পলাতক প্রজা ঘরে ফিরে আসে।রাজ্যজুড়ে মহোৎসবে মেতে ওঠে সবাই। মালঞ্চমালা সে দেশের রানি রূপে অভিষিক্ত হন।
নাট্যগ্রন্থ: মালঞ্চমালা
রচয়িতা: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: কৃষ্ণেন্দু চাকী
প্রকাশকাল: বইমেলা জানুয়ারি ১৯৯৪
প্রকাশক:দেজ পাবলিশিং, কলকাতা-৭৩
Comments :0