জানা অজানা — নতুনপাতা
১৯৭৮-এর বন্যা ভয়াবহ এক সৃত্মিরেখা
তপন কুমার বৈরাগ্য
১৯৭৮ সালের যে ভয়াবহ বন্যা হয় তার সাক্ষী আমি নিজে থেকেছি। তখন আমি একজন কিশোর। আমাদের গ্রামের নাম সাহাজাদপুর। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খড়ি নদী। যে নদীটা বর্ষায় ভয়ঙ্কর আকার ধারণ
করে।২৩ শে সেপ্টেম্বর অনবরত বৃষ্টি,২৪শে সেপ্টেবরেও সেই বৃষ্টি থামতে চায় না। এদিকে খড়ি নদী ভয়ঙ্কর অবস্থা ধারণ করে। ২৫তারিখ সকাল ৮টার অজয় নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে লাল জল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
কিছু কিছু অঞ্চল ১৮ ফুট উচ্চতা জলের তলায় চলে যায়।বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানিও ঘটে।প্রচুর গবাদি পশুও মারা যায়। নাদনঘাটে কোথাও ডাঙা ছিলো না। মানুষের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম ছিলো
নৌকা।সরকার থেকেও নৌকার ব্যাবস্থা করা হয়েছিল।সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দুর্গত মানুষদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। যাদের দোতলা পাকবাড়ি ছিলো না তারা সব স্কুলে আশ্রয় নেয়।
২৫ শে সেপ্টেম্বর এবং ২৬ শে সেপ্টেম্বর বন্যা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। এরপর জল আস্তে আস্তে কমতে থাকে। মানুষকে তাদের নিজের বাড়িতে ফিরতে প্রায় দুমাস সময় লেগে যায়। সরকার থেকে ভেঙে যাওয়া বাড়িঘর
নির্মাণের ব্যাবস্থা করে দেওয়া হয়। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের বন্যার সময় বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজো অনুষ্ঠিত হয়নি। বন্যার জল নেমে যাওয়ার পরে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।বিশেষ করে পেটের রোগ। বন্যার সময় বেশ
কিছু লোক এই অঞ্চলে গাছেও বাস করেছে। বন্যার পর টিউবওয়েলগুলো অকেজো এবং বিষাক্ত হয়ে পড়ে। বন্যার সময় এবং বন্যার পরে এই অঞ্চলে তীব্র জলকষ্ট দেখা দেয়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জল দানের ব্যাবস্থা করেন।
তবে তাহা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।বন্যার জলে ডুবে মাঠের সব শস্য নষ্ট হয়ে যায়।বন্যার পর সব জিনিসের দাম আকাশ ছোঁওয়া হয়ে যায়।যারা বেঁচে আছেন ১৯৭৮সালের এই বন্যার ক্ষত এখনো তাদের বুক থেকে মুছে যায় নি।
Comments :0