ভ্রমণ — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
আমতা আমতা করে হামতা...
অভীক চ্যাটার্জী
আকাশের গায়ে কান পেতে যদি কথা শোনা যেতো, সেদিন আমিও শুনতে পেতাম এক অদ্ভুত বজ্রনির্ঘোষ! "ওপরে তো উঠে পড়েছো বাছাধন! এবার দেখি নামো কি করে?"
যাই হোক, আমরা বেশ কিছুক্ষণ একসাথে ছবি তুলে মুহূর্তকে উপভোগ করে এক সময় ফেরার পথ ধরলাম। যদিও মেঘ না থাকলে এই টপ থেকে হিমালয়ের ইন্দ্রসন শৃঙ্গ দেখা যায়,কিন্তু আমরা তা দেখতে পাইনি।তবে ফেরার পথ ধরতেই বুঝতে পারলাম, এ পথ অতি বন্ধুর। খুব বড় বড় পাথরের উপর পা ফেলে খুব সাবধানে একটু একটু করে নামতে হয়। একটা পাথরের উপর পৌঁছে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হয়। তার উপর রয়েছে ঢিলে পাথরের বিপদ। একবার ঢিলে পাথরে পা পড়লেই পা জখম হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। আর একটু বেশি যদি অসাবধান হয়ে পড়ি, তাহলে ভবলীলা সাঙ্গ হওয়াও বিচিত্র নয়। আমরা একে একে একটু একটু করে পা ফেলে নেমে আসতে লাগলাম। সবাই সবার হাত ধরে সাহায্য করছে। বলে দিচ্ছে সঙ্গীর পরবর্তী পদক্ষেপ। কে বলবে, আমরা একে অপরকে খুব বেশি হলে ৪ দিন হলো চিনি,এ যেন এক অন্য বৃহত্তর পরিবার। বন্ধুত্বের এক অন্য সংজ্ঞা পাওয়া যায় ট্রেকিং এ এলে। এই ব্যাপারটা আমি আগেও দেখেছি।
বড় পাথরের রাজ্য শেষ হয়ে এবার আমরা পৌঁছলাম স্পিতী উপত্যকার ধুলোময় রাজ্যে। এবারের রাস্তা আরও বিপদসঙ্কুল। পায়ের নিচের মাটি খুবই আলগা। আর তার সাথে নিচের দিকে অনেকটাই ঢালু। তাতে পা হড়কে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। আমরা পায়ে পায়ে পা টিপে টিপে নামতে শুরু করলাম। কোথাও কাদা হয়ে আছে জল পড়ে, কোথাও মাটি একেবারে ঝুরো। আমার পা বেশ কয়েকবার হড়কালো। সামলে নিলাম। দেবরাজ বেশ কয়েকটা জায়গা হাতে ধরে পার করে দিলো। এভাবেই একটু একটু করে নেমে আসলাম আমরা সেই ঝুরো পাহাড়ের ভয়াবহ পাকদন্ডি বেয়ে।
চলবে
Comments :0