MONDA MITHI — SOURAV DUTTA | REMAL — NATUNPATA | 1 JUNE 2024

মণ্ডা মিঠাই – সৌরভ দত্ত | হাওড়ায় রিমাল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও ধ্বংসপ্রাপ্ত‌ জৈব বৈচিত্র্যের তথ্যানুসন্ধান – নতুনপাতা | ১ জুন ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHI  SOURAV DUTTA  REMAL  NATUNPATA  1 JUNE 2024

মণ্ডা মিঠাই

হাওড়ায় রিমাল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও ধ্বংসপ্রাপ্ত‌ জৈব বৈচিত্র্যের তথ্যানুসন্ধান

সৌরভ দত্ত

নতুনপাতা


মানুষের সীমাহীন লোভ, প্রাকৃতিক সম্পদ শেষ করার প্রবণতা‌ বিশ্ব উষ্ণায়নকে তরান্বিত করেছে। পরিবেশ ধ্বংসের কু-প্রভাবের তার ফলস্বরূপ দেখা যায় পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানব সভ্যতার উপর সীমাহীন আঘাত হেনেছে।অতীতে আয়লা, আমফান, বুলবুল, ফণি এর মতো একাধিক ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গের বুকে।যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বাড়িঘর,অরণ্যভূমি  বন্যপ্রাণ ও মানুষের জীবন জীবিকা।বিশেষত আয়লা ও আমফান ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে শেষ হয়ে গিয়েছিল জীবকূলের অনেক প্রজাতি। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বিধ্বংসী রেমেল সাইক্লোনের প্রভাবে সমূহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা।শহর হাওড়া ও জেলার গ্রামগুলিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। রিমেল সাইক্লোনের ফলে‌ মারাত্মক ক্ষতি‌‌ হয়েছে পাখি‌‌ও‌ বিভিন্ন সরীসৃপ প্রজাতির। বিশেষত শাখাশ্রয়ী কপোত-কপতীদের বাসা‌গুলি একেবারে ধ্বংস‌প্রাপ্ত হয়েছে।হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের পক্ষ থেকে বর্ষণ চলাকালীন ঝোড়ো হাওয়া উপেক্ষা করেই  হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের ফলে‌ স্থানিক  জৈব-বৈচিত্র্যের যে‌ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে সম্বন্ধে সরজমিনে পরিদর্শন ও নমুনা চিত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল।আমফান ঝড়ে এমনিতেই‌ শতবর্ষ প্রাচীন বট, অশ্বত্থ, বকুল,পাকুড় প্রভৃতি বড় বড় বৃক্ষ জাতীয় গাছ উপড়ে পড়েছিল‌। প্রশাসনিক উদাসীনতায় সেগুলো প্রতিস্থাপন করা যায়নি‌। ফলত‌ অচিরেই সেগুলো অদৃশ্য ‌হয়েছে। বাঁধ বা রাস্তার ধারে কমেছে পথিকজনদের গাছের ছায়া। সেই বিধ্বংসী ঝড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল অনেক পাখির বাসা, ডিম। সাম্প্রতিক রিমেল ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এমনিতেই বেশ কয়েকদিন ধরে সরকারি‌ ও বেসরকারি তরফে‌ সতর্কতা জনিত নিষেধাজ্ঞা জারি করা‌ হয়। হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের তরফে ঘূর্ণিঝড়ে বাসা হারানো বন্যপ্রাণীদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন এর তাগিদে চালু করা হয়েছিল আপদকালীন হেল্পলাইন নম্বর। হাওড়ার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় প্রভূত ক্ষতি হয়েছে জৈব বৈচিত্র্য বা Biodiversity--এর অন্তর্গত সরীসৃপ, উভচর, পতঙ্গ,পক্ষী ও সামগ্রিক জীবকূলের ।নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র চ্যূত হয়েছে অনেক জীবজন্তু। নারকেল ,সুপুরি, আম, জাম, জামরুল, বট, অশ্বত্থ ,মেহগনি, কদম, প্রভৃতি অনেক গাছ‌ অচিরেই মাটিতে ভেঙে পড়েছে।ফলত ছত্রভঙ্গ হয়েছে‌ বহু পাখিদের বাসা,ডিম ও বাচ্চা। হাওড়া জেলা যৌথ পরীবেশ মঞ্চের তরফে দু’তিনটি পাখির বাসা উদ্ধার করা হয়েছিল। সেগুলো ইতিমধ্যেই জঙ্গলের গাছে‌‌ পুনর্স্থাপন করা হয়েছে।এছাড়াও হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের বন্যপ্রাণ উদ্ধারকারীরা ঝড়ে বাসা ভেঙে যাওয়ায় বিপন্ন –চিল,বেনে বৌ,খুড়ুলে পেঁচাকে প্রভৃতিকে উদ্ধার করেছিল। এছাড়াও  রিমেলের প্রকোপে গাছের উঁচুতে‌ থাকা– কাক, কোকিল, ঘুঘু, লক্ষ্মী পেঁচা, কুড়ুলে পেঁচা, কন্ঠী নিচপেঁচা, বুলবুলি,দুধরাজ,সিপাহী বুলবুলি, বসন্তবৌরি, বেনেবউ, হাঁড়ি চাঁচা, চাক দোয়েল, চাতক, টুনটুনি, কাঠঠোকরা, শালিক, মাছরাঙা, দোয়েল, ফিঙে, ছাতারে, শামুকখোল, গো-বক , মাঝারি বক প্রভৃতি পাখিদের বাসস্থান ধ্বংস হয়েছে। প্রত্যেক‌ প্রজাতির পাখিদের বাসস্থানের প্রকৃতিটি যদিও সম্পূর্ণ আলাদা।বেশিরভাগ পাখির বাসায় জল ঢুকে যাওয়ার পাখির বাচ্চা ও ডিমগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। মৃত্তিকা সংলগ্ন বা জলজ ভাসমান উদ্ভিদের উপর বাসা বাঁধা–ডাহুক, পানকৌড়ি,সরাল এর মতো হাঁস জাতীয় পাখিদের বাচ্চা ও বাসস্থানের প্রভূত ক্ষতিসাধন হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে।এরফলে আগামী দিনে পরিবেশে হুইসলিং‌ পাখির সংখ্যা কমবে বলে অনুমান করা‌ হচ্ছে।স্তন্যপায়ী গোত্রের বন্যপ্রাণী প্রাণী শিয়াল, মেছো বিড়াল,গন্ধগোকূল,ভাম,খটাশ ,কাঠবিড়ালি প্রভৃতির ছানা বাসা‌ হারিয়ে জলে ভিজে কম্পমান অবস্থায় লোকালয়ে চলে এসে‌ কোনো কোনো বাড়ির ঘুলঘুলি,চিলেকোঠা,শেডের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল।কোথাও রাস্তায় গাছ বা গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে।এছাড়াও এলাকার বিস্তীর্ণ জঙ্গল জলমগ্ন হওয়ায় বিভিন্ন উভচর, সরীসৃপ, পতঙ্গ ও অঙ্গুরীমাল গোত্রের প্রাণীরা–দাঁড়াশ সাপ,মেটুলি সাপ, সোনা ব্যাঙ, কোলাব্যাঙ, স্থলশামুক, কেন্নো, ঘুর্ঘুরে পোকা, সাদা‌ উচ্চিংড়ে, মাকড়শা প্রভৃতিকে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। এমনকি ইদানিং ঝড় পরবর্তী সময়ে  কালো, রোমশ যুক্ত ,অষ্টপদ বিশিষ্ট ট্যারেন্টুলা মাকড়শাও ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে গ্রামীণ হাওড়ায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রাণভয়ে বাঁচতে রাস্তায় এ ধরনের বন্যপ্রাণীরা চলে আসার মৃত্যু ঘটতে পারে‌ বলে‌ পরিবেশ কর্মীদের সূত্রে আশংকা করা‌‌ হচ্ছে। বেশকিছু ফুল-ফলের গাছ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।যার মধ্যে‌ উল্লেখযোগ্য–জামরুল, কাঁঠাল, লেবু, পেয়ারা, আম, কলা, আঁশফল,নারিঙ্গা, কাঠবাদাম,ডুমুর,বাঁদর লাঠি,গোলঞ্চ,কামিনী,কাঁঠালি চাঁপা,কলকে প্রভৃতি গাছের ফল-ফুল-পাতা ছিঁড়ে উড়ে গিয়ে অন্যত্র বেশ কিছুটা দূরে পড়েছে। রিমেল সাইক্লোনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব পশ্চিমবঙ্গ তথা‌ হাওড়া জেলার অরণ্য সভ্যতা ও বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু মুখে ঠেলে দিয়েছে। উদ্বেগজনক ভাবে ফিশিং ক্যাট,গন্ধগোকুল,গোসাপের মতো প্রাণীরা প্রাণভয়ে লোকালয়ে চলে আসছে।যা খুব দুশ্চিন্তার বিষয়। পরিবেশবিদ‌ ও প্রজাপতি গবেষক ড.সৌরভ দোয়ারী বলেন –“এধরনের ঝড়ের পর সাধারণত যেধরনের দৃশ্য দেখা যায় এবারেও তার অন্যথা হয়নি। পাখির বাসা ভেঙে পড়াটাই সবচেয়ে উদ্বেগের। কারণ বাসা গুলি দেখে বোঝাই যাচ্ছে এতে ডিম বা ছানা ছিল। ক্রমশ বড় ও ঝোপঝাড়যুক্ত গাছ কমে যাওয়ায় এধরনের ঘটনা আরো বাড়ছে। ভবিষ্যতে আরো বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছি।”

[ তথ্য : হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ ]

Comments :0

Login to leave a comment