Manuwad Hindutwa

মনুবাদের ফসল

সম্পাদকীয় বিভাগ

বাংলায় প্রবাদ আছে ‘চোরকে বলে চু‍রি কর আর গৃহস্থকে বলে সজাগ থাক’। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার এবং রাজ্যে রাজ্যে ডাবল ইঞ্জিনের সরকারগুলির রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছলনা ও প্রহসনের সঙ্গে এই প্রবাদ হুবহু মিলে যায়। একদিকে প্রশাসনিক নেতারা বড় বড় কথা বলছেন নারী-পুরুষ, উঁচুজাত, নিচুজাত সকলকে সমানভাবে দেখতে। অন্যদিকে সঙ্ঘ পরিবারের রাজনৈতিক পরিসরে হিন্দুত্ববাদের মৌলিক ভিত্তি হিসাবে মনের গভীরে গেঁথে দেওয়া হয় মনুবাদকে। এই মনুবাদী চেতনাই সমাজে জাতি বিদ্বেষ শেখায়, উঁচু জাতকে শেখায় নিচু জাতকে ঘৃণা করতে।
মোদী ঢাক পিটিয়ে ঘোষণা করেন সবকা সাথ সবকা বিকাশ। বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও স্লোগান দিয়ে অথবা লাল কেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মহিলাদের সম্মান-মর্যাদা-অধিকার দেবার কথা বলে হাততালি কুড়ান। নিজের ওবিসি পরিচয় দেখিয়ে ওবিসি-দের কাছের বলে দাবি করেন। কিন্তু সর্বত্র তাঁর দলীয় কর্মী-সমর্থক, তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্তবৃন্দ, সঙ্ঘ পরিবারের ঘেরাটোপে থাকা উৎকট হিন্দুত্ববাদীরা প্রতিনিয়ত দলিত আদিবাসী ওবিসি-দের অপমান, অসম্মান, নির্যাতন করে চলেছে অত্যন্ত কুৎসিত ও বেপরোয়াভাবে। অনেক ক্ষেত্রে অত্যাচারের মাত্রা এতটাই পৈশাচিক স্তরে নামে যে যা দেখে ও শুনে সভ্য পৃথিবীর গা ঘিনঘিন করে ওঠে। অনেকে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় ভারতীয় সভ্যতা বোধহয় এখনও প্রাগৈতিহাসিক অসভ্যতা ও বর্বরতা থেকে উত্তরণ ঘ‍‌টেনি। তথাকথিত হিন্দুত্ববাদী ‘উঁচু জাতের’ মানুষ নিজেদের সমাজে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ভাবে ‘নিচুজাতের’ মানুষকে মানুষ বলেই গণ্য করে না। দেশের আইন-কানুনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আধুনিক উন্নত সমাজ চেতনাকে পেছনে ঠেলে দিয়ে তার দলিত তথা আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা নারী পুরুষের বিরুদ্ধে যা খুশি তাই করার ঔদ্ধত্য দেখায়। এটাই সঙ্ঘ পরিবারের শিক্ষা, এটাই হিন্দুত্ববাদীদের সামাজিক চেতনা, এটাই অন্ধভক্তদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ।
মনুবাদ প্রিয় হিন্দুত্ববাদীরা এইভাবেই সঙ্ঘপরিবারের ঘরানায় হিংসার ও ঘৃণার কারবারী হয়ে ওঠে। হারিয়ে ফেলে মনুষ্যত্ববোধ। উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাট সহ ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্যে এরাই বীর দর্পে দলিত মহিলাদের ধর্ষণ করে, খুন করে। পদে পদে দলিতদের বুঝিয়ে দেয় উঁচুজাতের পদসেবাই তাদের কর্তব্য। অন্যথা যে কোনও নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়া ভবিতব্য। ডাবল ইঞ্জিনের পুলিশ ও সরকার এদেরই পক্ষ নেয়, সুরক্ষা দেয়। তাই গুরুতর অপরাধ করেও এরা পার পেয়ে যায়। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি এদের সমর্থন করে। উত্তর প্রদেশে প্রতিনিয়ত ঘটছে দলিত নারী, দলিত পরিবারের ওপর অত্যাচার। দলিত আদিবাসীদের ন্যূনতম সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। বেআইনি খনন কাজের প্রতিবাদ করার মধ্য প্রদেশের রামরাজত্বে দলিত যুবকের উপর নির্মম অত্যাচার করে মুখে প্রস্রাব করে উচ্চ বর্ণের লোকেরা। এই রাজ্যেও দু’বছর আগে দলিত যুবকের মুখে প্রস্রাবের ঘটনা ঘটে। কয়েকদিন আগে দলিত যুবককে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় উত্তর প্রদেশে। এইভাবে দলীয় কর্মী সমর্থকরা সমাজে হিংসা, ঘৃণা ছড়িয়ে বিভাজন করবে নিকৃষ্ট অপরাধে শামিল হবে আর মোদী মধুর ভাষণ দিয়ে সাধু সাজবেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment