শঙ্কর ঘোষাল
কতটা বুকের পাটা অপরাধীদের বাড়লে এইভাবে পুলিশ কর্মী নিয়োগের পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র বিক্রির দোকান করা খুলে বসেছিল। বাইরের জেলা থেকে সেখানে দলে দলে মানুষ প্রশ্নপত্র কিনতে এসেছে। এই সরকারের সময়ে একটা নিয়োগের পরীক্ষাও এখানে সুষ্ঠুভাবে হয়নি। আগেও পুলিশে নিয়োগ হয়েছে দুর্নীতি করে। সোমবার পূর্ব বর্ধমানে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি এদিন পার্টির শাহেদুল্লাহ-বিজয় ভবনে জেলা কমিটির সভায় যোগ দিতে এসে বলেছেন, শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি দেখলাম কি রকম হলো? সেই রকমই পুলিশের রিক্রুটমেন্টের পরীক্ষার আগে ক্যাম্প করে পঞ্চায়েত থেকে জলের ব্যবস্থা করে, জানিনা পুলিশ পাহারা ছিল কিনা? তৃণমূলের নেতা, পঞ্চায়েত সব মিলে এই অপরাধ মূলক কাজ করেছে। গোটা সিস্টেমটাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আগে দেখেছি শূন্য পেয়ে ডাবলুবিসিএস অফিসার হয়েছে।
মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মূল সমস্যাকে আড়াল করে বিভেদের জন্য ওরা মুখোমুখি দাঁড় করায় একটা অংশের মানুষকে অন্য মানুষের বিরুদ্ধে। বামপন্থীদের অভিন্ন স্বার্থ পথঘাট, নদী বাধঁ, নদী ভাঙ্গন, প্রকৃতি, পরিবেশ, কাজ, মজুরী শ্রম, কৃষকের সমস্যা, তাঁর সারের সমস্যা, আলুচাষ, পাটচাষ সমস্যা এই গুলি দৈনন্দিন সমস্যা। উত্তরবঙ্গে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলো, লুট যা হচ্ছে, কর্পোরেট লুট শুধু আমাদের ব্যাঙ্ক, রেললাইন, পোস্টঅফিস, রাস্ট্রায়াত্ব শিল্প নিলাম হচ্ছে তাই নয় আমাদের নদী, জমি সব কিছু মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের উপরও আক্রমন নামিয়ে আনা হয়েছে। ওরা ভাগ করছে বিভিন্ন জাতপাত, ধর্মের ভিত্তিতে। আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে তাঁদের কাছ থেকে রসদ সংগ্রহ করছি, তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছি।
তিনি বলেছেন, "শ্রমকোড চালু করলো দিল্লি। আর তৃণমূল বলছে পশ্চিমবঙ্গে এটা লাগু হবে না। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এখানে বলতে পারে ওয়াকফ আইন এখানে মানবো না? চুপিসাড়ে মমতা ব্যানার্জি কেন্দ্রের সব জনবিরোধী আইনগুলি চালু করে দিচ্ছে। এখানে তৃণমূলে মমতা ব্যানার্জি ছাড়া সব মন্ত্রী সাইনবোর্ড। এদের কথা শাসকদলে কোনও কার্যকরী হয়না। আসল সাইনবোর্ড পিসি-ভাইপো। তৃণমূল দল আজ পর্যন্ত স্বীকার করেছে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি? বীরভূমের অনুব্রত জেলে গিয়েছিল। প্রথমে মমতা ব্যানার্জি তাকে ২১জুলাই মঞ্চে তুললেন না, তারপর বীরভূমে গিয়ে বললেন আগের মতো সব হবে ডিসিআর কাটবে, গোরু পাচার, কয়লা পাচার, বালি, পাথর পাচার হবে। মমতা ব্যানার্জি বলেছেন যারা টাকা দিয়ে চাকরী পেয়েছেন সেই অযোগ্যদের বাঁচাবো। যার ফলে সব এক হয়ে গেলো কাঁকর আর গম। সবকে একসাথে পেশাই করে দিলেন।
লোকসভায় এসআইআর নিয়ে আলোচনা ওঠার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পরিপেক্ষিতে মহম্মদ সেলিম বলেন, "বিধানসভায় চিটফান্ড নিয়ে আলোচনার সময় গোরাঙ্গ চ্যাটার্জি, দেবলীনা হেমব্রম’রা সোচ্চার হয়েছিলেন তখন তাঁদের উপর আক্রমন করা হয়েছিল। পাশেই পিজি হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা করাতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এটা হচ্ছে গণতন্ত্র নিধনের ঘটনা। কে ক’টা মন্দির, মসজিদ তৈরি করবে সেদিকে আবার ছোটাছুটি শুরু হয়েছে। এটা নতুন নয়, আমরা বলছি দেশকে বাঁচাতে হলে বাংলাকে বাঁচাতে হবে। বাংলাকে বাঁচানো মানে এখানকার মানুষের ঐক্যকে মজবুত করতে হবে। ঐক্য সম্প্রীতি কিসের ভিত্তিতে হবে তাঁর যে দৈনন্দিন জীবন যন্ত্রনা, জীবনবোধ তাঁর যে অভাব, অভিযোগ, চাহিদা, সমস্যা সেটাকে মাথায় রেখে। দক্ষিণপন্থীরা সেখান থেকে পাশ কাটাতে চায় মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিদিন এমন কিছু সমস্যা তৈরি করা হয় যেগুলি পরস্পর বিরোধী, তাতে একটা অংশের মানুষকে আর একটা মানুষকে দাঁড় করায়।"
মহম্মদ সেলিম বলেছেন এসআইআর যেদিন ঘোষনা হলো সিপিআই(এম) প্রথম তার বিরোধীতা করলো। আমরা সব বামপন্থীরা দল’রা জমায়েত করে প্রতিবাদ করি এসআইআর’র বিরুদ্ধে। আমরা প্রথম বলেছিলাম মৃতদের নাম বাদ দিয়ে বাকিদের মধ্যে ফর্ম বিলি করতে। মৃত, অবৈধ ভোটারদের ফর্ম ছাপিয়ে বিএলও’দের উপর চাপ তৈরি করা হয়েছে। পরে সিইও মানলো ডিজিটাল’এ এটা সম্ভব আগেই মৃতদের নাম বাদ দেওয়া। পরে সেটা মানলো নির্বাচন কমিশন। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে? পশ্চিমবঙ্গে ভোট এখনও দেরি আছে এত তাড়াহুড়ো কিসের? ভোটার, বিএলও, মানুষের মধ্যে চাপ আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। এই সব কাজ সময় নিয়ে ভেবে চিন্তা করে করা উচিত ছিল। এখনও তাদের উদ্দেশ্যে নিয়ে সন্দেহ আছে।
এদিন এই সভায় পার্টির পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন বলেছেন, "বাংলা বাঁচাও যাত্রা ১২ ডিসেম্বর পূর্ব বর্ধমানের হেমাতপুর হয়ে এই জেলায় প্রবেশ করবে। কুসুমগ্রাম, সাতগেছিয়া হয়ে মেমারীতে সভা হবে। গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে প্রচার চলবে। গঙ্গার ভাঙ্গন, তাঁতশিল্পীদের জীবন যন্ত্রনা থেকে কৃষক, খেতমজুর, সাধারন শ্রমজীবী মানুষের জীবন যন্ত্রনার কথা ফুটে উঠবে এই বাংলা বাঁচাও যাত্রায়। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাইক মিছিল করে প্রচার কর্মসূচীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।"
Comments :0