STORY — BIDHUYTH RAJGURU | MITHAR JATHARE — NATUNPATA | 9 JUNE 2024

গল্প — বিদ্যুৎ রাজগুরু | মিথ্যার জঠরে — নতুনপাতা | ৯ জুন ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

STORY  BIDHUYTH RAJGURU  MITHAR JATHARE  NATUNPATA  9 JUNE 2024

গল্প

মিথ্যার জঠরে
বিদ্যুৎ রাজগুরু

নতুনপাতা

         মোহনদের গাঁয়ে হাট বসে সপ্তাহে দুদিন। সোমবার আর শুক্রবার। এই দুদিন এলাকার কৃষিজীবী পরিবারগুলি হাটে তাদের উৎপাদিত শাকসবজি শস্য নিয়ে হাজির হয়। মোহন এই গাঁয়ের একজন দিনমজুর। কিছুটা খেতিজমিও আছে। মোহনরা চার ভাই। একসময় একান্নবর্তী পরিবার ছিল। হৈ-হুল্লোড় করে সুখ-দুঃখকে সাথী করে বেশ দিন কাটত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার ভেঙে গিয়েছে। আকাশ বিকাশ দুই সন্তান আর স্ত্রী নির্মলাকে নিয়ে সাধের সংসার পেতেছে মোহন। ভাগ-বাঁটোয়ারা করে কয়েক বিঘা জমিও রযেছে। মুলিবাঁশের বেড়ায় তৈরি দুটো ঘর। টিনের ছাউনি। আর একচিলতে বারান্দার একপাশে চালা ঘরে নির্মলার রান্না ঘর। পোক্ত বাঁশের বাঁধুনি দিয়ে গ্রামীণ লম্বা বাঁশের বেস্ক। আর একটা কাঠের হাই বেঞ্চ। অতিথি আপ্যায়ন থেকে রাতের খাওয়াদাওয়া সবই চলে এখানে। এক রকম ডাইনিং টেবিল। টিনের ছাউনি গরমে তেতে ওঠে সহজে। গাঁয়ের বাঁশ আর কদম গাছের ফুরফুরে নির্মল বাতাস কখনো স্বস্তি এনে দেয়। আর শীতের রাতে বাষ্পীভূত জল ভোর রাতে ঝরে পড়ে বিকাশ আকাশদের চোখে-মুখে। ঘুমঘোর কেটে যায় তখন ওদের। গাঁয়ের কিছুটা শেষের দিকে ওদের বাস। সামনে একটা শিবমন্দির। আর একটা খোলা মাঠ পেরিয়ে মসজিদ। মসজিদের পাশ দিয়ে আলপথে কিছুটা এগিয়ে গেলে মোহনদের ভাগের খেতিজমি। সারা বছর কিছু না কিছু শাকসবজি উৎপাদন হয়। স্কুলফেরৎ আকাশ কখনো বিকাশকে সঙ্গে নিয়ে হাটবারে গাঁয়ের হাটে বসে। মোহন দিনমজুরের কাজ করে। রাজমিস্ত্রির জোগানদার। কারণ কয়েক বিঘা জমির উপর নির্ভর করে তো আর সংসার চলে না। ফি বছর উৎপাদন আর জোগানের সূত্র না মিললেই অতি ফলনে উৎপাদিত কৃষি পণ্য রাস্তায় ফেলে দিতে হয়। মনে পড়ে গত বছর ফুলকপি রাস্তায় ফেলে গাঁয়ের কৃষকরা পথ অবরোধ করেছিল। বিডিও সাহেবের আশ্বাসে পথ অবরোধ ওঠে। কিন্তু গাঁয়ের চাষিদের সুরহা হয় কৈ? হাটের দিনগুলোতে সেই তেল চিটচিটে বস্তা আর শাকসবজি নিয়ে মোহন অপেক্ষা করত আকাশের জন্য। ওকে বসিয়ে দিয়ে আবার কাজে ফেরা। সোমবার আর শুক্রবার হেডমাস্টারের ঘরের সামনে সত্য মিথ্যা কিছু বলে স্কুল থেকে সোজা আকাশের হাটে ফেরা। আর পসরা সাজিয়ে বসে ক্রেতার অপেক্ষা। হাটে যাব বললে তো আর স্কুল থেকে ছুটি পাওয়া যায় না। তাই কখনো স্কুলে না আসা। কোনোদিন স্যারের কাছে পেটের ব্যথা বলে টিফিনের পর ছুটি মজুরের চেষ্টা। দেখতে দেখতে আকাশ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পড়ার মতো সময় বা সামর্থ্য ছিল না। আকাশ এখন সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছে। সে নিজেই ঠিক করেছে শাকসবজি উৎপাদন করবে আর দিন মজুরের কাজ করবে। 

        গাঁয়ের প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডী পার হযে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছে ছোট ভাই বিকাশ। গাঁয়ের প্রাইমারি স্কুলের অবনী মাস্টারের হাত ধরে পঞ্চম শ্রেনিতে ভর্তি হওয়া। আকাশের মতো এত স্মার্ট ছিলনা বিকাশ।লাজুক স্বভাবের ধীর স্থির। পঞ্চম থেকে অষ্টম বিনা বাধায় উতরে গিয়েছে। নবম শ্রেনিতে এক বছর থাকতে হয়েছে। টিচার দেখলেই নিজেকে লুকিয়ে রাখে বিকাশ। সামনের বেঞ্চের সহপাঠীদের মাথার আড়ালে নিজের মুখ লুকিয়ে রাখতে পছন্দ। আকাশ বিকাশের বাবা মোহন রাজমিস্ত্রির জোগানদারের কাজ করতে করতে একটা আবাসনে কাজ পেয়েছে কিছুদিন। গাঁয়ের থেকে পাঁচ কিমি পথ ভেঙ্গে সাইকেলে রোজ যেতে হয়। মোহনের সাইকেলটা বেশ পুরানো। প্যাডেলে ভর দিতে দিতে এগিয়ে যাওয়া। কিছুটা এগিয়ে গেলেই সাইকেলের চেন খুলে যায়। আবার নেমে চেন লাগিয়ে চলা। মাঝে মধ্যে তেল কিংবা মবিল দিতে হয়। কাজেই তৈলাক্ত চেনে হাত দিলেই হাতটা চ্যাটচ্যাটে হয়ে যায়। সেই তেল চ্যাটচ্যাটে হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরে শহরের দিকে এগিয়ে চলা। সকাল আটার মধ্যে আবাসনে ঢুকতে হয়। কেয়ারটেকারের কাজ। অবাসনের বাবুদের ফাইফরমাশ তো আছেই। কখনো বাবুদের ছেলেদের বেসরকারি স্কুলবাসগুলো ধরিয়ে দিতে যেতে হয়। দিনের শেষে সন্ধ্যা নামে। কাজের শেষে ঘরে ফেরার পালা। আলো ঝলমল শহর থেকে বেরিয়ে সাইকেলকে সঙ্গী করে কিছুটা হেঁটে আবার সাইকেলে চাপা। শহুরে আলোর থেকে হঠাৎ অন্ধকার গাঁয়ের পথে চলতে গেলে একটু ধাতস্থ হতে হয়। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। 
 

[ আগামী সংখ্যায় সমাপ্ত ]

Comments :0

Login to leave a comment