STORY — SOURISH MISHRA — KASH — NATUNPATA | 27 SEPTEMBER 2025, 3rd YEAR

গল্প — সৌরীশ মিশ্র — কাশ — নতুনপাতা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  KASH  NATUNPATA  27 SEPTEMBER 2025 3rd YEAR

গল্পনতুনপাতা

কাশ
সৌরীশ মিশ্র


"বাবাই, এই রাস্তায় এলে যে! আমরা বাড়ি যাচ্ছি না এখন?" সদা-ব্যস্ত তে-মাথার মোড়টা থেকে সাইকেলটাকে প্রতিদিনের মতোন ডানদিকে বাঁক নিয়ে অশোকপুরের রাস্তাটা না ধরে, তার ঠিক পাশের, রথতলার রাস্তাটা ওর বাবা অম্লানবাবু ধরতেই কথাকটা বাবাকে বলল দশ বছরের মেঘ।
"এই রাস্তাটা দিয়েও আমাদের বাড়ি যাওয়া যায়। তবে একটু ঘুরতে হয় এই যা।" বলেন অম্লানবাবু।
"তাহলে তো যে রাস্তাটা দিয়ে আমাকে তুমি স্কুলে নিয়ে যাও-আসো, সেই রাস্তাটা দিয়ে গেলেই ভালো হোতো বাবাই। তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছে যেতাম আমরা।" বলে মেঘ।
"এই রাস্তাটায় এলাম, তোকে একটা জিনিস দেখাবো বলে।" বলেন অম্লানবাবু।
"কি দেখাবে বাবাই?" ফের বলে মেঘ।
"দেখতেই পাবি। একটু সবুর কর্।" বলতে বলতেই বাঁহাতের কবজি ঘুরিয়ে তাঁর হাতঘড়িতে চোখ রাখলেন অম্লানবাবু। না, হাতে সময় আছে। মনে মনে নিজেকেই নিজে কথাকটা বললেন তিনি। তবু, তিনি আরও একটু জোড়ে প্যাডেল করতে থাকলেন। আর সাইকেলটাও সাথে সাথেই চলতে শুরু করে দিল বেশ দ্রুতই।
মেঘকে স্কুল থেকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে, স্নান করে, খেয়ে, তাঁর স্কুলে যাবেন অম্লানবাবু। যেমন প্রতিদিন যান আর কি! এটাই তাঁর রুটিন। তিনি যে স্কুলে শিক্ষকতা করেন সেটা তাঁর বাড়ি থেকে একদম কাছে। সাইকেলে যেতে অম্লানবাবুর মিনিট পাঁচেকের মতোন লাগে মোটে।
অম্লানবাবুর সাইকেল ছুটে চলেছে এখন রথতলার কুচকুচে কালো পিচের রাস্তাটা ধরে। এই রাস্তাটা সারাদিন ফাঁকাই থাকে মূলতঃ। এর প্রধান কারণ অবশ্যই, এই রাস্তার আশেপাশে জনবসতি তেমন গড়ে ওঠে নি এখনো। রাস্তার দু'দিকে শুধু একের পর এক ফাঁকা মাঠ আর ফাঁকা মাঠ।
এই রাস্তায় অম্লানবাবু কোনোদিন নিয়ে আসেননি মেঘকে। তাই, সবই এ'দিকে অচেনা তার। রাস্তার চারপাশে কি কি আছে তাই দেখছে সে এখন খুব আগ্রহ নিয়ে।
আরো কিছুটা এগিয়ে এবার সাইকেলের গতি কমালেন অম্লানবাবু। তারপর ব্রেক চেপে থামিয়েই দিলেন পুরো সাইকেলটা। পা রাখলেন মাটিতে। তারপর ছেলেকে তাঁর ডানহাতটা উঁচিয়ে একটি দিকে ইশারা করে বললেন, "ঐ দিকে দ্যাখ্।"
মেঘ তাকায়। আর তাকাতেই তার সেইদিকেই চোখ আটকে যায়। সে দেখে, ঐ দিকে বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে ফুটে রয়েছে অসংখ্য কাশফুল।
"এতো কাশফুল!" বিস্ময় মাখানো কণ্ঠস্বরে বলে ছোট্ট মেঘ।
"আমাদের বাড়ির আশেপাশে তো অল্প-স্বল্প কাশফুল ফুটে থাকতে দেখেছিস তুই। কিন্তু, কাশবন তো দেখিসনি কখনো। তাই তোকে নিয়ে এলাম দেখাতে। কাল একটা কাজে এসেছিলাম এ'দিকে। তখনই চোখে পড়ে কাশবনটা। আর তখুনি ঠিক করি, আজ স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় দেখিয়ে নিয়ে যাবো তোকে। আমি জানতাম, তোর ভাল লাগবে খুব। আরে, ঐ দ্যাখ্ দ্যাখ্, কেমন হওয়াতে দুলছে সব কাশফুলগুলো!"
দৃশ্যটা মুহূর্তে মুগ্ধ করে দেয় মেঘকে। 
"কি সুন্দর!" অজান্তেই মেঘের মুখ থেকে বেড়িয়ে যায় শব্দদুটো।
"সত্যিই অপূর্ব।" ছেলের কথায় সায় দিয়ে বলে ওঠেন অম্লানবাবুও।

Comments :0

Login to leave a comment