উৎসবে অনুভবে
গল্প
সজল-কাজল
সৌরীশ মিশ্র
নতুনপাতা
---------------------------------
"এবারে পরের প্রশ্ন। এইটাও ফিল্ম রিলেটেড কোশ্চেন। আশা করছি, এই প্রশ্নটারও কারেক্ট অ্যান্সার পাব আপনাদের কাছ থেকে। আর এতোক্ষণে তো বুঝেই গেছেন আপনারা, সঠিক উত্তর দিলেই আপনারা পেয়ে যাবেন একেবারে হাতে গরম পুরস্কার। তাহলে প্রশ্নটা করি..." মাইকে ভেসে আসে কথাকটা এক পুরুষকণ্ঠে।
"দাদা, পুজো প্যান্ডেলের স্টেজে ক্যুইজ় হচ্ছে না কি!" সজল বলল কাজলকে।
"তাই তো মনে হচ্ছে রে। কিন্তু, কেউ তো আমাদের বলে নি!" বলে কাজল।
"হয় তো হঠাৎই ঠিক হয়েছে।"
"তা হবে।"
"দাদা যাবি?" সজল বলল কাজলকে।
"যাবি? চল্। তবে বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না কিন্তু। বাবা-মা চিন্তা করবে।"
"না, না, একটুখানি থাকবো। একটু থেকেই চলে আসবো।"
"ঠিক আছে, চল্ তবে।"
সজল-কাজল দুই যমজ ভাই এক ছুট লাগায় ওদের পাড়ার যেখানে দুর্গাপুজো হচ্ছে সেই দিকে।
মহানবমীর বিকেল। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে দু'প্যাকেট চিপস কিনতে এসেছিল সজল-কাজল। আর চিপস কিনে খেতে-খেতে ফেরার পথে সজল-কাজলের কানে আসে মাইকে ভেসে আসা কথাগুলো। তারপর হয় ঐ দুই ভাই-এর মধ্যে ঐ কথোপকথন। আর এখন ওরা ছুটে চলেছে ওদের দুর্গাপুজো প্যান্ডেলের এক পাশে অনুষ্ঠানের জন্য যে স্টেজটা করা হয়েছে সেই দিকে।
মিনিট খানেক লাগল ওদের স্টেজের সামনে পৌঁছতে। ওরা সেখানে পৌঁছে দেখল, স্টেজে একজন আংকেল মাইক হাতে, স্টেজের সামনে চেয়ারে বসা দর্শকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন একটা একটা করে। আর দর্শকরা হাত তুলে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে সেই সব প্রশ্নের।
সজল আর কাজল এসে বসেছে একদম সামনের সারির দুটো চেয়ারে। ওরা আসার পর দুটো প্রশ্ন করেছেন ক্যুইজ় মাস্টার। কিন্তু, দর্শকেরা কোনোটারই সঠিক উত্তর দিতে পারে নি। সজল-কাজলের দু'জনেরই ক্যুইজ় ব্যাপারটায় ইন্টারেস্ট আছে খুব। তারা তাই নানান বিষয়ে নানান রকম ইন্টারেস্টিং ইনফরমেশন কালেক্ট করারও চেষ্টা করে এবং তা নিয়ে চর্চাও করে নিয়মিত নিজেদের মধ্যে। ওরা দু'জনই ওদের স্কুলের ক্যুইজ় ক্লাবের মেম্বারও। তবু, ঐ দুটো প্রশ্নের উত্তরগুলো অজানা ছিল ওদেরও।
"দাদা, খুব শক্ত প্রশ্ন করছে রে।" সজল ফিসফিস করে বলে কাজলকে।
ঠিক তখনই, স্টেজ থেকে ঐ ক্যুইজ় মাস্টার ফের বলে উঠলেন, "এইবার যে প্রশ্নটা করব সেটাই এই স্পট ক্যুইজ়ের শেষ প্রশ্ন। এই কোশ্চেনটার দুটো পার্ট। এবং, এর কেউ যদি দুটো উত্তর নাও দিতে পারেন একটাও দিতে পারেন তাহলেও তিনি একটা প্রাইজ় পাবেন। আর দুটো দিলে তো কথাই নেই। তার হাতে উঠবে দু'-দু'টো প্রাইজ়। তাহলে প্রশ্নটা করি।" বলে একটু থেমে হাতে ধরা একটা কার্ডে চোখ রাখেন ক্যুইজ় মাস্টার। তারপর ফের বলতে থাকলেন, "কোশ্চেনটা হল- ক'দিন আগে ওয়ান ডে ক্রিকেটে ইন্ডিয়ানদের মধ্যে সব থেকে কম বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ড করলেন কে? এবং এই প্রশ্নের সেকেন্ড পার্ট হচ্ছে, কার রেকর্ড ভেঙে তিনি এই নজির গড়লেন?"
প্রশ্ন করা শেষ হতেই দর্শকাসন থেকে হাত উঠল বেশ কয়েকটা। তার মধ্যে সজল-কাজল দুই ভাই-এর হাতও ছিল।
"বাঃ, অনেকগুলো হাত উঠেছে তো দেখছি। দেখি, প্রথম কাকে চান্স দেওয়া যায় উত্তর দেওয়ার।" বলেই দর্শকাসনে এদিক থেকে ওদিকে তাকাতে থাকলেন ক্যুইজ় মাস্টার ভদ্রলোক। আর দেখতে দেখতেই, হঠাৎই তাঁর চোখ পড়ল সজল আর কাজলের দিকে। আর ওদের দেখেই তিনি বলে উঠলেন, "আমি দেখতে পাচ্ছি, দু'জন খুদে পার্টিসিপেন্টও হাত তুলেছে প্রশ্নটার উত্তর দেওয়ার জন্য। দেখে তো মনে হচ্ছে, ওরা ট্যুইনস্। কি ঠিক বলছি তো?" প্রশ্নটা সজল-কাজলের উদ্দেশে করেন ক্যুইজ় মাস্টার।
সজল-কাজল হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।
"তা তোমরা জানো উত্তর দুটো?"
"হ্যাঁ জানি। আমরা দু'জনই জানি।" স্মার্টলি বলে কাজল।
"তাহলে, বলো দেখি? তুমি ফার্স্ট পার্টটার উত্তর দাও আর তুমি দাও সেকেন্ড পার্টটার।"
"স্যার, ফার্স্ট প্রশ্নের অ্যান্সার স্মৃতি মান্ধানা।" ক্যুইজ় মাস্টারের কথা মতোন প্রথমে বলে ওঠে কাজল।
"আর, সেকেন্ডটার অ্যান্সার বিরাট কোহলি।" এবার বলে সজল।
"অ্যাবসোলুটলি কারেক্ট। ওদের দু'জনকে দুটো প্রাইজ় দিয়ে দাও তো।" শেষ বাক্যটা স্টেজে এককোনায় এতোক্ষণ বসেছিলেন একজন, তাঁকে বললেন ক্যুইজ় মাস্টার। সেও দ্রুত পায়ে স্টেজ থেকে নেমে দুটো গিফ্ট-র্যাপারে মোড়া প্রাইজ় হাতে তুলে দিলেন সজল-কাজলের।
"ওদের জন্য একটা জোড়ে হাততালি হয়ে যাক।" ফের বলে ওঠেন ক্যুইজ় মাস্টার।
আর তখনই, দর্শকাসনে থাকা সবাই এমনকি ক্যুইজ় মাস্টারও করতালি দিয়ে ওঠেন এক সাথে।
সজল আর কাজলের মনে মনে খুবই আনন্দ হলেও সাথে ভীষণই লজ্জাও করতে থাকল এই সব দেখে-শুনে।
ওরা লাজুক-লাজুক মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল ওদের প্রাইজ়গুলো হাতে ধরে।
---------------------------------
Comments :0