Editorial

ধর্ষকের ধর্ম খোঁজে বিজেপি

সম্পাদকীয় বিভাগ

বিজেপি’র রাজনীতি যে কতটা নিম্নমানের ও কদর্য হতে পারে তা আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছেন এরাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং অমিত মালব্য পরিচালিত বিজেপি’র আইটি সেল। দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যা ল কলেজের দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাও তাদের নোংরা রাজনীতি থেকে রেহাই পায়নি। ধর্মীয় ও জাতপাতের বিভাজনই যেহেতু বিজেপি’র রাজনীতির মূল ভিত্তি তাই সীমাহীন মুসলিম বিদ্বেষ ও ঘৃণাকে হাতিয়ার করে বিভাজনকে তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর করার চেষ্টা করে। তারজন্য যে কোনও ঘটনা বা ইস্যুকে বিদ্বেষ ও ঘৃণার মোড়কে পুড়ে ধর্মীয় বিভাজন ও মেরুকরণে মরিয়া হয়ে ওঠে। সামনে যেহেতু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন তাই বেপরোয়াপনা ও মরিয়াপনা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
মেডিক্যা ল পডুয়ার দলবদ্ধ ধর্ষণে গোটা রাজ্য স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদমুখর। রাজ্যের মহিলাদের নিরাপত্তার উলঙ্গ চেহারা ফের উন্মোচিত। রাস্তায় বামপন্থীরা সহ সব বিরোধীরা। প্রতিবাদ করছে বিজেপি-ও। কিন্তু তাদের প্রতিবাদে ধর্ষণ বা ধর্ষক যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে অনেক বে‍‌শি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ষকের ধর্ম পরিচয়। ধর্ষক যদি মুসলিম হয় তাহলে হিন্দুত্ববাদীরা প্রতিবাদের ঝড় তুলবে। কিন্তু ধর্ষক যদি ধর্ম পরিচয়ে হিন্দু হয় তাহলে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা সুড়সুড় করে গর্তে ঢুকে যাবে।
দুর্গাপুরের ঘটনায় যখন পাঁচজন গ্রেপ্তার হয় তখন বিরোধী দলনেতা এবং তাদের আইটি সেল চার ধৃতের নাম লিখে সমাজমাধ্যমে প্রচারের ঝড় তুলেছিল। বেমালুম চেপে গিয়েছিল পঞ্চম অভিযুক্তের নাম। কারণ ধর্ম পরিচয়ে সে হিন্দু। হিন্দু ধর্ষককে সচেতনভাবে আড়াল করে বিজেপি সামনে এনেছিল চার মুসলিমকে।
মোদী সরকারের খাস তালুক দিল্লিতে অবস্থিত সাউথ এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যেই ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের চেষ্টায় নির্যাতন করা হয় এবং চারদিন পরও অমিত শাহর পুলিশ চার অভিযুক্তের কাউকে গ্রেপ্তার না করায় বিজেপি কিন্তু কোনও প্রতিবাদ আন্দোলনে নেই। কারণ সেখানে অভিযুক্তদের মধ্যে কোনও মুসলিম নেই। তাছাড়া প্রতিবাদ করলে তো মোদী-শাহ’র বিরুদ্ধেই করতে হবে।
সদ্য প্রকাশিত জাতীয় অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দেশে শীর্ষে আছে মোদী ঘোষিত ডাবল ইঞ্জিনের সরকারগুলি। সবার উপরে জ্বলজ্বল করছে উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রের নাম। নারী নির্যাতনের ঘটনাতেই শীর্ষে আছে ডাবল ইঞ্জিনের সরকারগুলি। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার। গত এক দশকে তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে মোদী জমানায় দেশে নারীদের সম্মান-মর্যাদা হ্রাস পেয়েছে। নারীদের বিপন্নতা বেড়েছে। নারীদের বিরুদ্ধে প্রায় সব ধরনের অপরাধ বেড়েছে। হিন্দুত্ববাদের মনুবাদী অভিমুখ নারীদের সম্মান করতে শেখায় না। নারীদের কর্তব্য সীমাবদ্ধ করে দেয় সন্তান উৎপাদন, প্রতিপালন ও পুরুষের সেবার মধ্যে। হিন্দুত্ববাদীরা প্রকাশ্যেই বলে বেড়ায় মহিলাদের কাজ পুরুষদের আনন্দ দেওয়া। এমন কথা বলা যায় যে মুসলিম মহিলাদের কবর থেকে তুলে এনেও ধর্ষণ করা যায়। নিচুজাতের মহিলাদের উঁচুজাতের পুরুষের ধর্ষণ পবিত্র কাজ। এমন এক সামাজিক ও ধর্মীয় কদর্য চেতনা সচেতনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে হিন্দুত্ববাদীরা। তারই প্রতিফলন মহিলাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, খুন, অপহরণ সহ যাবতীয় অপরাধ দ্রুতহারে বেড়ে চলা।

Comments :0

Login to leave a comment