Flood Teesta Farmers

নামেনি জল, জমিতে পলির স্তর, দুশ্চিন্তায় তিস্তাপারের কৃষকরা

জেলা

জমিতে পলি। চাষ হবে কিভাবে জানেন না কৃষকরা।

দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি

বন্যার পর প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চলল। এখনও জল নামেনি তিস্তার পারের বিভিন্ন এলাকার চাষের জমি থেকে। যেখানে জল নেমেছে সেখানে জমে আছে এক হাত পলির স্তর। কিভাবে এই মাঠে রবিশস্য চাষ হবে তাই নিয়ে ভাবনায় তিস্তাপারের বিস্তীর্ণ এলাকার ক্ষুদ্র চাষিরা।
৫অক্টোবরের প্রবল বন্যায় ফের তিস্তাপারের জনজীবনে এনেছে দুর্যোগের ছাপ। ময়নাগুড়ি ব্লকের বিস্তীর্ণ কৃষি জমি, মালবাজার ব্লকের ক্রান্তি এলাকার কৃষি জমি, সদর ব্লকের বোয়ালমারি, নন্দনপুর ও কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ সাব ডিভিশনের চাষযোগ্য জমি ভেসে গেছে নদীর জলে।
নন্দনপুর বোয়ালমারী এলাকার কৃষক শচীন রায় বলেন, “জমি তৈরি হয়ে গিয়েছিল, শুধু বীজ বপনের অপেক্ষা ছিল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার জলেই সব শেষ। এখন মাটি বালি-কাদায় ঢেকে গেছে। এই জমি ফের চাষযোগ্য হতে সময় লাগবে অন্তত একমাস।”
সরকারি কৃষি দপ্তরের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫ অক্টোবরের বন্যায় প্রায় ১৩,০০০ হেক্টর কৃষিজমি জলমগ্ন হয়েছে। আলু, ধান, পাট, ভুট্টা, সর্ষে ও শাকসবজি নষ্ট হয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রভাব সরাসরি পড়বে আগামী মরশুমের উৎপাদনে। বাজারে সবজির সরবরাহেও টান পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
‘‘বন্যা মানে আমাদের কাছে শুধুই জল নয়। বন্যা মানে ঋণ, ক্ষুধা আর নতুন করে শুরুর ভয়’’, বলছেন মনোরঞ্জন বর্মন। ময়নাগুড়ি ব্লকের বাকালি এলাকার এই ক্ষুদ্র কৃষকের বক্তব্য, গত তিন বছরে তিস্তার ধারা তিনবার বদলেছে। নদী একবার বাঁয়ে, একবার ডাইনে সরেছে। যেখানে গত বছর ধান ছিল, এ বছর সেখানে নদীর বুক।
তিস্তাপারের জমিতে সাধারণত বছরে দুই থেকে তিনবার ফসল হয়। খরিফে ধান, পাট, ভুট্টা। রবিতে হয় গম, সর্ষে, মটরশুঁটি, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ধনেপাতা। মরশুমের শুরুতে সবজির কদর বাজারে বেশি, দামও ভালো। তাই এই মরশুমেই কৃষকরা কিছুটা লাভের আশায় চাষে নামেন। কিন্তু এবারের বন্যায় সেই আশাটুকুও হারিয়েছেন তাঁরা।
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও ফের বীজ সরবরাহের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু বাস্তবে সাহায্য পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা নতুন ফসলের প্রস্তুতি শুরু করতে পারছেন না।

Comments :0

Login to leave a comment