suci

‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে বিজেপি’র কথাই এসইউসি’র সভায়

রাজ্য কলকাতা

জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বিরোধিতা করল এসইউসিআই (সি)। শনিবার তাদের ব্রিগেডে সমাবেশ ছিল। সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ সিপিআই(এম)-কে আক্রমণ করে বলেন,‘‘কংগ্রেস ওই ইন্ডিয়া জোটের নেতা। তৃণমূলও সেখানে গেছে। যে সিপিএম এই রাজ্যে তৃণমূলের বিরোধিতা করে তারাও ওই জোটে গেছে।’’ প্রথমত, ‘ইন্ডিয়া’ কোনও জোট নয়, মঞ্চ। দ্বিতীয়ত, সিপিআই(এম) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, রাজ্য রাজ্যে নির্বাচনের সময় সেই রাজ্যের পরিস্থিতি বিচার করেই পার্টি লড়বে। পশ্চিমবঙ্গে পার্টির লাইন তৃণমূল এবং বিজেপি— দুই শক্তিকে হারানোর লক্ষ্যেই পার্টি লড়ছে। এবং লড়বে। গত বিধানসভা নির্বাচনে আইএসএফ’র সঙ্গে বামফ্রন্টের আসন বোঝাপড়াকে ব্যঙ্গ করে প্রভাস ঘোষ বলেছেন,‘‘এক পীরকে আবার সেকুলার বানানো হয়েছে।’’ 


তবে সমাবেশে একবারও পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বেপরোয়া ভোট লুট, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার প্রশ্নে কোনও কথা বলেননি এসইউসি’র নেতারা। শনিবার ছিল এসইউসি’র ব্রিগেড সমাবেশ। শুক্রবার রাতে শহরে পৌঁছান এসইউসি’র কর্মীদের সল্টলেক, গীতাঞ্জলী,নেতাজী ইন্ডোর এবং আলিপুরের ‘উত্তীর্ণ’ মঞ্চে থাকার বন্দোবস্ত ছিল রাজ্য সরকারের সাহায্যে। এমনকি কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামেও এসইউসি’র কর্মীদের জন্য প্রায় দেড় হাজার ডিম পাঠানো হয়েছিল তৃণমূলের পক্ষ থেকে, অভিযোগ এমনই। প্রসঙ্গত, রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া করে লোকসভা নির্বাচন লড়ার ‘ঐতিহ্য’ আছে এসইউসি’র।


এসইউসি’র সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যের সঙ্গে বিজেপি’র নেতা এবং তৃণমূলের মাঝারি নেতা, কর্মীদের বিশেষ মিল আছে। রাজ্যে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যখন দেখা যাচ্ছে, মানুষের বিজেপি এবং তৃণমূল বিরোধী বামফ্রন্ট-কংগ্রেস-আইএসএফ’র বোঝাপড়ার প্রতি আস্থা বাড়ছে, তখন নবগঠিত ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে তৃণমূল থাকা সত্ত্বেও সিপিআই(এম)’র যাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে মূলত বিজেপি। এছাড়া প্রবল সিপিআই(এম)-বিরোধী তৃণমূলের নেতা, কর্মীরাও ওই বিষয়েই নানা কৌশলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিন ব্রিগেড সমাবেশে এসইউসি’র বক্তব্যে বিজেপি এবং তৃণমূলের সেই কৌশলেরই অনুরণন শোনা গেছে।


এদিন এসইউসি’র সমাবেশ থেকে সিপিআই(এম) বিরোধিতা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, এসইউসি দলটা তৈরি হয়েছিল এই উদ্দেশ্যেই। যখন স্বাধীন ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল তখন শাসকদের টাকায় এই দলটা তৈরি হয় এবং তারা নিজেদের আগমার্কা বলে দাবি করে। তারপর থেকে ওটাই ওদের কাজ। তৃণমূলের হাত ধরে একটা সাংসদ পেয়েছিল, এখন হয়তো আবার আশা করছে যদি তৃণমূলের আশ্রয়ে কিছু পাওয়া যায়। 
এদিন সমাবেশের শুরুতে দলের পতাকা তোলেন এসইউসি নেতা সৌমেন বসু। দলের প্রথম সাধারণ সম্পাদক শিবদাস ঘোষের জীবন সংক্রান্ত একটি ছবির প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন দলের নেতা কান্তিময় দেব। সভা পরিচালনা করেন কে রাধাকৃষ্ণ। দলের অন্যতম নেতা সত্যবান বলেন,‘‘মণিপুরের ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেই রাজ্যের সরকার দায়ী। বিজেপি-কে নিশ্চয়ই ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। কিন্তু তা কেবল নির্বাচনী পথে হবে না। চাই গণআন্দোলন।’’


সমাবেশে পশ্চিমবঙ্গের এবং লাগোয়া রাজ্যগুলি থেকে এসইউসি কর্মীরা এসেছিলেন। তবে দলের কর্মীদের একাংশ অবাক হয়েছেন একটি ঘটনায়। তৃণমূলের এক মুখপাত্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্রে দলের ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে এত প্রচার কেন হলো, কেন একটি ‘নীতিনিষ্ট কমিউনিস্টদের’ দল হিসাবে নেতারা যাকে দাবি করছেন, সেই দলের সমাবেশের প্রচারে তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র এত জায়গা খরচ করলো— তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এসইউসি-রই একাংশ।
 

Comments :0

Login to leave a comment