বিহারের ভোটের আগে ঘুসপেটিয়ে নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠানো হবে প্রচার চালিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এসআইআর হওয়ার পরও একজন বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করতে পারেনি কমিশন। কিন্তু ক্রমাগত বিদ্বেষ প্রচার করেছে বিজেপি।
পশ্চিমবঙ্গে কোটি কোটি বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীর অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজেপি'র যে ভাষ্য সেই সম্পর্কে কেন্দ্র সরকারের তথ্য বলছে অন্য কথা। মোদী-শাহ থেকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারিদের মুখেও একই রব। শুভেন্দু অধিকারি সহ বিজেপি বলে চলেছে যে পশ্চিমবঙ্গের জনবিন্যাসই বদলে দিয়েছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যাও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ২০১১’র জনগণনার তথ্য বা সাম্প্রতিক নীতি আয়োগের পরিসংখ্যানই সেই দাবিতে সায় দিচ্ছে না।
২০০১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ভারতে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির গড় ২৪.৬ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গে তা ২১.৮ শতাংশ, জাতীয় গড়ের থেকে ২.৮ শতাংশ কম। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির জাতীয় গড় ১৭.৭ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে তা ১৩.৮ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে ৩.৯ শতাংশ কম। সদ্য প্রকাশিত নীতি আয়োগের 'সামারি রিপোর্ট ফর দ্য স্টেট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল'-এ বলা হয়েছে, '২০২৩ সালের সেন্সাস পপুলেশন প্রজেকশন অনুসারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জাতীয় গড় ০.৯ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে তা ০.৫ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে ০.৪ শতাংশ কম।' অর্থাৎ কেন্দ্র সরকারের তথ্য প্রমাণ করে, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশীদের ব্যাপক অনুপ্রবেশ নিয়ে সর্বৈব মিথ্যাচার করছে মোদি-শাহ এবং এরাজ্যের বিজেপির নেতারা। রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য চলছে বিদ্বেষের প্রচার।
পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ঘটেছে তা সীমান্ত বাহিনীর অপদার্থতার জন্য। দালাল চক্র থাকে যার মাধ্যমে অনুপ্রবেশ হয়। রাজ্যের শাসকদলের নেতারাও এই চক্রের সাথে যুক্ত। কিন্তু এই অনুপ্রবেশ কারীদের একটা বড় অংশ অবশ্যই আসে অর্থনৈতিক কারণে এবং উপার্জনের তাগিদে। যদি পশ্চিমবঙ্গে কয়েক কোটি রোহিঙ্গার বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা প্রবেশ করে তাহলে এর সরাসরি প্রভাব পর্বে সমাজে। খাদ্য সংকট দেখা যাবে। বাসস্থানের সমস্যা হবে। কিন্তু তা দেখা যায়নি পশ্চিমবঙ্গে।
সম্প্রতি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন ১ কোটি ২০ লক্ষ রোহিঙ্গা পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রসংঘের তথ্য অনুযায়ী গোটা পৃথিবীতে সেই সংখ্যক রোহিঙ্গা নেই।
২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে, "ভারতে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা সম্পর্কে কোনও তথ্য সরকারের কাছে নেই।" এদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সম্পর্কে ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী দেশে শরণার্থী শিবিরে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা আছেন। পশ্চিমবঙ্গে ৩৬১টি রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে। তাহলে কোন তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোটি কোটি মুসলিম অনুপ্রবেশের গল্প বলছেন বিজেপি নেতারা?
অনুপ্রবেশের কারণেই পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২ রাজ্যে এসআইআর ঘোষণা করেছে মুখ্য নির্বাচনী অধিকারক জ্ঞানেশ কুমার। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী রয়েছে এই অভিযোগ মোদী শাহ থেকে শুরু করে শুভেন্দু শমীক সবার গলায়। কিন্তু সিপিআইএম বারংবার বলে এসেছে ভোটার তালিকায় নিয়মিত রিভিশন করলে সকল মৃত ও স্থান্তারিত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া যায়। কিন্তু কমিশন সেই কাজ করেনি। নামের তালিকা দেওয়া হলেও বাদ যায়নি মৃত ভোটারের নাম। আসলে এসআইআর করে মানুষের নাগরিকত্বের যাচাই করতে চাইছে কমিশন। সেই নিয়েও সোচ্চার হয়েছে সিপিআই(এম)। তারা দাবি করেছে সকল মৃত ও স্থায়ী ভাবে স্থানান্তরিত ভোটারদের নাম বাদ দিতে হবে তালিকা থেকে। একজন বৈধ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া যাবেনা।
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ভারতে নয়া ফ্যাসিবাদ সম্পর্কিত আলোচনায় বলেন, ‘‘নয়া ফ্যাসিবাদের আক্রমণ চলছে। প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি। নাগরিকত্ব নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করতে এই এসআইআর তার সাম্প্রতিক নজির।’’
Comments :0