NATUNPATA : BOOK TOPIC : KHIRER PUTUL : SOURAV DUTTA — 9 OCTOBER 2024, WEDNESDAY

নতুনপাতা : বইকথা : ক্ষীরের পুতুল - রূপকথার অন্যদেশ : সৌরভ দত্ত : ৯ অক্টোবর ২০২৪, বুধবার

ছোটদের বিভাগ

NATUNPATA  BOOK TOPIC  KHIRER PUTUL  SOURAV DUTTA  9 OCTOBER 2024 WEDNESDAY

নতুনপাতা : বইকথা

ক্ষীরের পুতুল - রূপকথার অন্যদেশ
সৌরভ দত্ত

অবনীন্দ্রনাথের কল্প সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন–‘ক্ষীরের‌ পুতুল’।শিশু মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে এ বইটিকে অন্যতম কমিক্সের রূপ দেওয়া যায়।ক্ষীরের পুতুল চিনির পুতুল, দুয়োরানির ভাগ্য এবং একটি অসাধারণ উপাখ্যান। ব্রাহ্মসমাজ প্রেস থেকে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়‌।দীপনগরের রাজার দুই রানী ছিল, সুও রানী এবং দুয়ো রানী। রাজা সুও রানীকে ৭টি অলংঙ্কৃত প্রাসাদ, ৭০০ জন দাসী, ৭ টি রাজ্যের সেরা অলঙ্কার, ৭ টি বাগান, ৭ টি রথ দান করেছিলেন। উপন্যাস এর‌ পরতে পরতে রয়েছে রূপকথার জগতের আলোকিত উদ্ভাস‌। তিনি দুয়ো রানীকে অবহেলা করেছিলেন এবং তাকে একটি ভাঙা ঘর, একটি বধির ও বোবা দাসী, ছেঁড়া কাপড় এবং একটি নোংরা বিছানা দিয়েছিলেন।এক রাজার দুই রানী, দুও আর সুও। রাজবাড়িতে সুওরানীর বড়ো আদর, বড়ো যত্ন। সুওরানী সাতমহল বাড়িতে থাকেন। সাতশো দাসী তাঁর সেবা করে, পা ধোয়ায়, আলতা পরায়, চুল বাঁধে। সাত মালঞ্চের সাত সাজি ফুল, সেই ফুলে সুওরানী মালা গাঁথেন। সাত সিন্দুক-ভরা সাত-রাজার-ধন মানিকের গহনা, সেই গহনা অঙ্গে পরেন। সুওরানী রাজার প্রাণ।আর দুওরানী— বড়োরানী, তাঁর বড়ো অনাদর, বড়ো অযত্ন। রাজা বিষ নয়নে দেখেন। একখানি ঘর দিয়েছেন— ভাঙাচোরা, এক দাসী দিয়েছেন— বোবা-কালা। পরতে দিয়েছেন জীর্ণ শাড়ি, শুতে দিয়েছেন— ছেঁড়া কাঁথা। দুওরানীর ঘরে রাজা একটি দিন আসেন, একবার বসেন, একটি কথা কয়ে উঠে যান।সুওরানী— ছোটোরানী, তারই ঘরে রাজা বারোমাস থাকেন।একদিন রাজা রাজমন্ত্রীকে ডেকে বললেন— মন্ত্রী, দেশবিদেশ বেড়াতে যাব, তুমি জাহাজ সাজাও।রাজার আজ্ঞায় রাজমন্ত্রী জাহাজ সাজাতে গেলেন। সাতখানা জাহাজ সাজাতে সাত মাস গেল। ছ’খানা জাহাজে রাজার চাকরবাকর যাবে, আর সোনার চাঁদোয়া-ঢাকা সোনার জাহাজে রাজা নিজে যাবেন।মন্ত্রী এসে খবর দিলেন— মহারাজ, জাহাজ প্রস্তুত।রাজা বললেন— কাল যাব।মন্ত্রী ঘরে গেলেন।ছোটোরানী— সুওরানী রাজ-অন্তঃপুরে সোনার পালঙ্কে শুয়েছিলেন, সাত সখী সেবা করছিল, রাজা সেখানে গেলেন। সোনার  পালঙ্কে মাথার শিয়রে বসে আদরের ছোটোরানীকে বললেন— রানী, দেশ-বিদেশ বেড়াতে যাব, তোমার জন্য কী আনব?রানীর ননীর হাতে হীরের চুড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললেন— হীরের রঙ বড়ো শাদা, হাত যেন শুধু দেখায়। রক্তের মতে রাঙা আট-আট গাছ মানিকের চুড়ি পাই তো পরি।রাজা বললেন— আচ্ছা রানী, মানিকের দেশ থেকে মানিকের চুড়ি আনব।রানী রাঙা পা নাচিয়ে নাচিয়ে, পায়ের নূপুর বাজিয়ে বাজিয়ে বললেন— এ নূপুর ভালো বাজে না। আগুনের বরন নিরেট সোনার দশ গাছা মল পাই তো পরি।রাজা বললেন— সোনার দেশ থেকে তোমার পায়ের সোনার মল আনব।রানী গলার গজমতি হার দেখিয়ে বললেন— দেখ রাজা, এ মুক্তো বড়ো ছোটো, শুনেছি কোন দেশে পায়রার ডিমের মতো মুক্তো আছে, তারি একছড়া হার এনো।রাজা বললেন— সাগরের মাঝে মুক্তোর রাজ্য, সেখান থেকে গলার হার আনব। আর কী আনব রানী?তখন আদরিনী সুওরানী সোনার অঙ্গে সোনার আঁচল টেনে বললেন— মা গো, শাড়ি নয় তো বোঝা! আকাশের মতো নীল, বাতাসের মতো ফুরফুরে, জলের মতো চিকন শাড়ি পাই তো পরে বাঁচি।রাজা বললেন— আহা, আহা, তাই তো রানী, সোনার আঁচলে সোনার অঙ্গে ছড় লেগেছে, ননীর দেহে ব্যথা বেজেছে। রানী, হাসিমুখে বিদায় দাও, আকাশের মতো নীল, বাতাসের মতো ফুরফুরে, জলের মতো চিকন শাড়ি আনিগে।ছোটোরানী হাসিমুখে রাজাকে বিদায় করলেন।রাজা বিদায় হয়ে জাহাজে চড়বেন— মনে পড়ল দুখিনী বড়োরানীকে।দুওরানী— বড়োরানী, ভাঙা ঘরে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে কাঁদছেন, রাজা সেখানে এলেন।অনন্য সাধারণ একটি গল্পের প্লট তৈরি করেছে ‘ক্ষীরের পুতুল’ উপন্যাস ম্যাজিক রিয়েলিটির জগতকে‌‌ উন্মোচন করে। মৃণালিনী দেবীর ডায়েরিতে এই ক্ষীরের পুতুলের উল্লেখ আছে। আনন্দ পাবলিশার্স এর এই‌ সংস্করণে চোখ‌ ধাঁধানো শিল্পের নিদর্শন বইটি।
লেখক–অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
প্রকাশক–আনন্দ পাবলিশার্স 

Comments :0

Login to leave a comment