চণ্ডীগড়কে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ঘোষণা করতে চেয়ে শীতকালিন অধিবেশনে বিল আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে পাজ্ঞাব জুড়ে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। আপ সহ বিরোধী দল গুলো অংশ নিয়েছে প্রতিবাদে। সংবিধানের ২৪০ অনুচ্ছেদের আওতায় চণ্ডীগড় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যার ফলে সরাসরি চণ্ডীগড়ের কোন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি হস্তক্ষেপ করতে পারবে, কিন্তু পর্দার আড়াল থেকে তা নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় সরকারই।
লোকসভা এবং রাজ্যসভার বুলেটিনে বলা হয়েছে, সংবিধান (১৩১তম সংশোধনী) বিল ২০২৫ সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে পেশ করা হবে, যা ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ থেকে শুরু হবে।
বিলটি চণ্ডীগড় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে ২৪০ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লক্ষদ্বীপ, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ এবং পুদুচেরি (যখন এর বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয় বা স্থগিত করা হয়) এর মতো অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে।
চণ্ডীগড় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে একটি স্বাধীন প্রশাসকের দরজা খুলে যাবে, যেমন অতীতে এর একজন স্বাধীন মুখ্য সচিব ছিলেন।
এই বিলটি আনার পদক্ষেপ কংগ্রেস, আকালি দল এবং আপের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
সংবিধানের ২৪০ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতিকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ এবং পুদুচেরির কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির শান্তি, অগ্রগতি এবং কার্যকর শাসনের জন্য আইন তৈরি করার ক্ষমতা প্রদান করে।
তবে, এতে বলা হয়েছে যে যখন ২৩৯ক অনুচ্ছেদের অধীনে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের আইনসভা হিসেবে কাজ করার জন্য একটি সংস্থা তৈরি করা হয় (যেমন পুদুচেরিতে হয়), তখন রাষ্ট্রপতি আইনসভার প্রথম সভার দিন থেকে কার্যকরভাবে কোনও আইন তৈরি করবেন না
সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বলেন, ‘বিজেপি সরকার পাঞ্জাবের রাজধানী ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে, এটি একটি গুরুতর অন্যায়।’
মান এক বিবৃতিতে বলেন, চণ্ডীগড় ছিল, আছে এবং সর্বদা রাজ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মূল রাজ্য হিসেবে পাঞ্জাবের রাজধানী চণ্ডীগড়ের উপর একমাত্র অধিকার রয়েছে, তা কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
পাঞ্জাব কংগ্রেস সভাপতি অমরিন্দর সিং রাজা ওয়ারিং এই পদক্ষেপকে সম্পূর্ণ অযাচিত বলে চিহডনিত করেছেন এবং পাঞ্জাব থেকে চণ্ডীগড় ছিনিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে রাজ্যের মানুষকে সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘চণ্ডীগড় পাঞ্জাবের এবং এটি ছিনিয়ে নেওয়ার যে কোন প্রচেষ্টার গুরুতর প্রতিক্রিয়া হবে।’
লুধিয়ানার সাংসদ ওয়ারিং বলেন, কেন্দ্রের উচিত বিলটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা। তিনি বলেন যে কংগ্রেস সংসদে এই আইনটির তীব্র বিরোধিতা করবে এবং এটি যাতে পাশ না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য বিরোধী দলগুলির সাথে কথা বলবে।
তিনি পাঞ্জাবের বিজেপি নেতাদের এই বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মানকে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করেন।
শিরোমণি আকালি দলের (এসএডি) সভাপতি সুখবীর সিং বাদল বলেছেন যে বিলটি চণ্ডীগড়কে পাঞ্জাবের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।
এক বিবৃতিতে বাদল বলেন যে সংবিধান (১৩১তম সংশোধনী) বিলটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিকে পাঞ্জাবের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থেকে স্থায়ী ভাবে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।
প্রস্তাবিত আইনটিকে পাঞ্জাবের অধিকারের উপর আক্রমণ হিসাবে বর্ণনা করে বাদল বলেন যে এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বিরুদ্ধ। তিনি বলেন এই বিল চণ্ডীগড়কে রাজধানী হিসেবে পাঞ্জাবের দাবি শেষ করার চেষ্টা করে।
১৯৬৬ সালে পাঞ্জাব পুনর্গঠনের পর, চণ্ডীগড়কে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার রাজধানী করা হয়েছিল। পরবর্তীতে একাধিক চুক্তির অধীনে কেন্দ্র চণ্ডীগড়কে পাঞ্জাবের রাজধানী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
পাঞ্জাবের রাজ্যপাল বর্তমানে চণ্ডীগড় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসক। ১৯৬৬ সালের ১ নভেম্বর যখন পাঞ্জাব পুনর্গঠিত হয়েছিল, তখন থেকে এটি স্বাধীনভাবে মুখ্য সচিব দ্বারা পরিচালিত হত।
১৯৮৪ সালের ১ জুন থেকে চণ্ডীগড় পাঞ্জাবের রাজ্যপাল দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে এবং মুখ্যসচিবের পদটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রশাসকের উপদেষ্টা হিসেবে রূপান্তরিত হয়।
২০১৬ সালের আগস্টে কেন্দ্র প্রাক্তন আইএএস অফিসার কে জে আলফোনসকে শীর্ষ পদে নিয়োগ করে স্বাধীন প্রশাসক থাকার পুরনো রীতি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছিল।
তৎকালীন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল যিনি এনডিএ-র অংশ ছিলেন এবং কংগ্রেস, আপ সহ অন্যান্য দলগুলির তীব্র বিরোধিতার পর এই পদক্ষেপ প্রত্যাহার করা হয়।
চণ্ডীগড় পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা উভয়েরই যৌথ রাজধানী।
এর আগে ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বিলোপ করে কাশ্মীরকে তিন ভাগ করে তিনটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিনত করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই সময় সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে এর ফলে সেখানকার মানুষদের সমস্যার সমাধান হবে কিন্তু কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিনত হয়ে কাশ্মীরের কোন সমস্যার সমাধান হয়নি।
Punjab
চণ্ডীগড়কে আলাদা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করতে চায় মোদী সরকার, বিক্ষোভ পাঞ্জাবে
×
Comments :0