MODI SERVING CORPORATES

মোদীর কর্পোরেট সেবা

সম্পাদকীয় বিভাগ

উদারনীতি তথা খোলাবাজার অর্থনীতির হাত ধরে ২০১০ সালে পেট্রোলের এবং ২০১৪ সালে ডিজেলের ওপর থেকে সমস্ত সরকারি ভরতুকি প্রত্যাহার করা হয়। অর্থাৎ ভরতুকি দিয়ে সরকার অপেক্ষাকৃত কম দামে পেট্রোল বা ডিজেল কেনার সুযোগ দেশবাসীকে আর দেবে না। বলা হয় বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলে দাম ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের বাজারেও পেট্রোল ডিজেলের দাম কমবে বা বাড়বে। অর্থাৎ খোলাবাজারে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না বা নিয়ন্ত্রণ করবে না। ২০১৭ সালে চালু হয় প্রতিদিন খুচরো বাজারে পেট্রোল-ডিজেলের মূল্য সংশোধনের ব্যবস্থা। বিশ্ববাজারে দাম যেদিন যেমন হবে সেইমত দেশের বাজারে ডিজেল-পেট্রোলের লিটার প্রতি দাম নির্ধারিত হবে। যদিও এই ব্যবস্থা শুধু অযৌক্তিক নয়, অবৈজ্ঞানিকও। বিশ্ববাজারে আজ ভারত যে অশোধিত তেল কিনবে সেটা ভারতে এসে পরিশোধিত হয়ে পেট্রোল-ডিজেলে পরিণত হতে পাঁচ ছয় মাস সময় লাগবে। তেমনি আজ দেশের বাজারে যে পেট্রোল ডিজেলের দাম নির্ধারিত হবে সেটা পাঁচ-ছয় মাস আগে বিশ্ববাজার থেকে কেনা হয়েছে। এই ব্যবস্থাকে আর যাই হোক বাজার নিয়ন্ত্রিত মূল্য নির্ধারণ বলা যায় না।
যাই হোক ২০১৭ সালে প্রতিদিন দাম সংশোধনের ব্যবস্থা চালু হলেও কয়েকদিন তা অনুসরণ করা হয়েছে। পরে সেটা কখনও সাতদিন, কখনও ১৫দিন, কখনও এক মাস, এমনকি তারও বেশি সময় ধরে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। দাম নির্ধারণে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করে তেল কোম্পানির ওপর ছেড়ে দেবার গালভরা সিদ্ধান্ত ঘোষিত হলেও মোদী দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরও কড়া হয়েছে। গত মে ২০২২-এর পর পেট্রোল-ডিজেলের আর পরিবর্তন হয়নি। অথচ এই সময়কালে বিশ্ববাজারে তেলে দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার থেকে কমে ৮০ ডলারের নিচে নেমে গেছে। অর্থাৎ তেলের দামের বিপুল পতন হলেও তার সুবিধা জনগণের ভাগে আসেনি। পুরোটাই ভোগ করছে তেল কোম্পানিগুলি। আর মালিক যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার তাই লভাংশ হিসাবে তা ঢুকে পড়ছে সরকারি কোষাগারে।
মোদী যখন ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন তখন বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ১২৫ডলার। তারপরে ধাপে ধাপে তার দাম কমে এক সময় ৭০ডলারের কাছাকাছি এসে যায়। অথচ অশোধিত তেলের মূল্য হ্রাসের পুরো ফায়দা‍‌ লোটে মোদী সরকার। দেখা গেছে বিশ্ববাজারে দাম কমলেই সরকার পেট্রোল-ডিজেলে কেন্দ্রীয় শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। আর দাম বাড়লে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দেয়। সবটাই হয় পেছনের দরজা দিয়ে সরকারি নির্দেশে মোটেই খোলা বাজারের নিয়মে নয়। এইভাবে প্রতারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মোদী জমানায় লিটার প্রতি পেট্রোল-ডিজেলের দাম ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
পেট্রোপণ্যকে মোদী সরকার কামধেনু হিসাবে ব্যবহার জনগণের পকেট মেরে সরকারি কোষাগার স্ফীত করেছে। জনগণের থেকে বাড়তি রাজস্ব আদায় করে কর্পোরেট কর হ্রাসের ঘাটতি পূরণ করেছে। একইভাবে বিপুল কর্পোরেট ঋণ মকুব ও বকেয়া কর্পোরেট কর ছাড়ের ঘাটতি সামাল দিয়েছে। সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে এটাই মোদীর কর্পোরেট সেবা।

Comments :0

Login to leave a comment