SHARADIYA 1431 \ STORY \ NATUNPATA \ CHOK GELO PAKHIR SANDHANE - SANDIP JANA \ 13 OCTOBER 2024

শারদীয়া ১৪৩১ \ গল্প \ নতুনপাতা \ চোখ-গেল পাখির সন্ধানে - সন্দীপ জানা \ ১৩ অক্টোবর ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

SHARADIYA 1431  STORY  NATUNPATA  CHOK GELO PAKHIR SANDHANE - SANDIP JANA  13 OCTOBER 2024

শারদীয়া ১৪৩১ 

গল্প  

নতুনপাতা

চোখ-গেল পাখির সন্ধানে 

সন্দীপ জানা

 

তখন পুজো অনেক রাত, অদ্ভুত একটা শব্দে শুভ-র ঘুম ভেঙে গেল। সন্ধ্যার পর পিংকুদের বাড়ির উত্তর দিকে ঝোপ থেকে মাঝে মাঝে শেয়ালের ডাক শোনা যায় ঠিকই, কিন্তু এটা সেরকম নয়। প্যাঁচা,  চামচিকে বা তার চেনা কোনও নিশাচর পাখির ডাকও নয়। ডাকটা হঠাৎ থেমে গিয়ে আবার শুরু হল, একেবারে সপ্তমে সুর চড়িয়ে। গোটা পাড়া জেগে ওঠার উপক্রম হল যেন! শুভ ভয়ে ভয়ে চাদরটা ভালো  করে টেনে নিয়ে মায়ের বুকের কাছে সরে এসে মিন্ মিন্ করে বলে, ‘ ও…ওটা কিসের ডাক’?
মায়েরও বোধহয় ঘুমটা ভেঙেছিল, বলল, ‘ওটা তো চোখ-গেল পাখি’।
-‘চোখ-গেল পাখি আবার কেমন নাম! কেমন দেখতে তাকে?’
-‘অত জানি না, সকালে বাবাকে জিজ্ঞেস করো। এখন ঘুমও দেখি’।
ওই যে আর একটা ডাকছে, কুক্‌-কু…কু…… কুক্‌-কু…কু…… কুক্‌-কু…কু…। শুভ মনে মনে ‘চোখ-গেল’, ‘চোখ-গেল’ আওড়াচ্ছিল। হঠাৎ তার মনে হল আশ্চর্য তো, পাখিটার ডাক, আর ‘চোখ-গেল’ শব্দটাকে সুর করে বললে একই রকম শোনাচ্ছে যেন! সে পাখিগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চোখ-গেল…চোখ-গেল আওড়াতে আওড়াতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। 
ঝলমলিয়ে রোদ উঠেছে। শুভ পিটপিট করে অলসভাবে চোখ খুলতে খুলতে শুনতে পেল পাখিগুলো তখনও ডাকছে। এরা কি সারারাত এভাবেই ডাকছিল! সে ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে বাইরে এসে কান খাড়া করে কি শোনে, তারপর ছোটো রাস্তার পাশে হেলে পড়া শিরিষগাছটাকে লক্ষ করে দৌড়াতে থাকে। ততক্ষণে ডাক থেমে গেছে। শুভ অধৈর্য হয়ে বিড়বিড় করে বলে, ‘কই রে, চুপ করে গেলি কেন!’
দূর থেকে তার মা-এর গলা শোনা গেল, ‘আরে ও-শুভ…গেলি কোথায়? ছেলেটা সকাল সকাল কোথায় যে চলে যায়!’ সে সে-দিকে ভ্রূক্ষেপ  করে না।  তার আজ জেদ চেপেছে, অদেখাকে দেখার একটা নেশা লেগেছে।
ওই তো এবারে সেটা হালদারদের শিমুলগাছ থেকে ডাকছে যেন! সে আবার দৌড় লাগাল সেদিকে। কিন্তু এ-পাখির দেখা পাওয়া অত সহজ নয়। সে যেন বুঝতে পারে কেউ তার পিছু নিয়েছে বা তাকে লক্ষ করছে। সে এ-গাছ ও-গাছ লুকিয়ে বেড়ায় আর শুভ তার পিছুপিছু ছুটোছুটি করে ঘেমে একসা। 
এতক্ষণে প্রায় ঘন্টাদেড়েক কেটে গেছে। শুভ এবারে কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফোঁস্ ফোঁস্ করে নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে একটা অর্জুনগাছের নীচে ধপ করে বসে পড়ে। 
হঠাৎ শুভ-র মনে হল পাশের ধানখেত ভেতর একটা সর সর শব্দ হছে।  কাদাজলে কতগুলো পা একসাথে হাঁটলে যেমন শোনায়, সেরকমই। শব্দটা ধীরে ধীরে এদিকেই আসছে। শুভ-র একটু একটু ভয় করছে, বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছে। ভাবল দৌড়ে পালায়, আবার কৌতূহল  চাপতেও পারছে না। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল পাঁচটা ছানাকে সাথে নিয়ে মা-ডাহুক মাঠে চরতে বেরিয়েছে। হুবহু মুরগিবাচ্চার মতো দেখতে ছানাগুলো। শুভকে আচমকা দেখতে পেয়ে মা-ডাহুক মাথা নাড়িয়ে সাবধানসূচক কিসব শব্দ করতেই ছানাগুলো তাড়াতাড়ি ধানখেতের  ভেতর আবার গা-ঢাকা দিল। শুভ খিলখিলিয়ে হেসে বলে, ‘ ইঁ…বড্ড ভীতু’!
নাহ, আজ বোধহয় আর ধূর্ত পাখিটার দেখা পাওয়া যাবে না। শুভ ঘরের দিকে পা বাড়ায়। হঠাৎ তার ঠিক মাথার ওপর অর্জুনগাছের ডাল থেকে কুক্‌-কু…কু…… কুক্‌-কু…কু ডাক শুনে সে প্রায় লাফিয়ে উঠল। সে আনাড়ির মতো এ-ডাল ও-ডাল খুঁজে বেড়াচ্ছে, এত কাছ থেকেও পাখিটাকে চট করে খুঁজে পাওয়া যায় না।  
কিছুক্ষণ পরে তার দেখা পাওয়া গেল। পাতার আড়ালে কাঠের পুতুলের মতো স্থিরভাবে বসে ওই যে ডাকছে! গলার কাছটা শুধু কাঁপছে মাত্র। ধূসর-সাদা পালক, বুক থেকে লেজ অবধি সাদা-কালো ছোটো ছোটো ছোপ কাটা। অনেকটা ঘুঘুর মতো সাইজ। ওকে ইংরেজিতে বলে ‘ব্রেন ফিভার বার্ড’ । দূরের  একটা ঝাউগাছ থেকে আর-একটা তার সাথে গলা মেলাচ্ছে, তারও দূরে কোথাও আর-একটা…। 
প্রায় সারাদিন চলল তাদের পালা করে ডাকাডাকি, তারপর আবার সন্ধ্যা থেকে অনেক রাত পর্যন্ত, সারারাত হয়তো-বা। ওদের ডাকের সাথে মনে মনে তাল মিলিয়ে চোখ-গেল, চোখ-গেল করতে করতে শুভর চোখে ঘুম নেমে আসে…
 

Comments :0

Login to leave a comment