SHARADIYA 1431 \ STORY \ NATUNPATA \ RAKTABIJ BADHER GOLPA - SOURAV DUTTA \ 11 OCTOBER 2024

শারদীয়া ১৪৩১ \ গল্প \ নতুনপাতা \ রক্তবীজ বধের গল্প - সৌরভ দত্ত \ ১১ অক্টোবর ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

SHARADIYA 1431  STORY  NATUNPATA  RAKTABIJ BADHER GOLPA - SOURAV DUTTA  11 OCTOBER 2024

শারদীয়া ১৪৩১ 

গল্প  

নতুনপাতা

রক্তবীজ বধের গল্প

সৌরভ দত্ত

শৈশব হারিয়ে গেলে সবাই কিশোর তারপর যুবক শেষে বুড়িয়ে গিয়ে নটেগাছটা মুড়িয়ে যাওয়ার পালা।কবি বলেন–‘ফুরয় না তার কিছুই ফুরায় না।’পাড়ার সাবেকিবাড়ির পুজো। একঝাঁক বাচ্চা যেন নোটন নোটন পায়রা।চুলে ঝুঁটি বেঁধেছে।সবাই নানা পোষাকে দারুণ সেজেছে।চাতালে বসে রিয়া,টিয়া,আপনারা খেলছে গানের লড়াই তাদের একজন গান ধরেছে–“আলো আমার আলো।আলো ভুবন ভরা”। ঝাড়বাতির রোশনাই ঠিকরে পড়ছে। বাচ্চারা অদ্ভুত কৌতূহলী নিজের অজান্তেই দারুণ কিছু প্রশ্ন করে বসে।ক্যাপ বন্দুক ফাটায় দুম ফটাস্।কত বেলুন ,ঘুগনি নিয়ে বসেছে বিক্রেতা।পুজো আসে আর যেন এরোপ্লেনের মতো হুঁশ করে চলে।পুজো‌ এলেই চিলছাদে লক্ষ্মীপেঁচাদের আনাগোনা। ষষ্ঠী পুজোয় জোড়া বেল খুঁড়তে দীপুকাকারা অস্থির।কলাবউকে শাড়ি পরানো।ছোটু দেওয়াল পত্রিকায় একটা কমিক্স বানিয়েছে তার ক্যাপশন–যার বৌ নেই তার কলাবউ আছে।অষ্টকলসের জলে নবপত্রিকা স্নান।সন্ধ্যা আরতি শুরু হলে ওপাড়ার বিদ্যাবালান এসে এলোচুলে মণ্ডপে বসে।সেলফি আর তুরন্ত রিলস বানানোর প্রতিযোগিতা চলে। সন্ধ্যায় ঢাকের সাথে নেচে ওঠে ভোলামন। পঙক্তি ভোজনে খাবার দাবারে থাকে ষোলআনা বাঙালিয়ানা।পুজোর কদিন এককথায় কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া। পোলাও,মাংস খেয়ে সমীর বাবু জোর ঢেঁকুর তোলেন। তারপর ঢকঢক করে লিকুইড অ্যান্টাসিড খান।পাড়ার ক্লাবের পুজোয় যুবদল চলে দলবেঁধে চাঁদা কাটতে ।কেউ বলল–ও দাদু আর পঞ্চাশ টাকা বেশি দিন না আমাদের অন্নকূট আছে।অষ্টমী মানেই নষ্টালজিক দিন ধোপদুরস্ত পাঞ্জাবি পরে অঞ্জলি দেওয়া।অঞ্জলির মন্ত্রোচ্চারণে দশবার ঢোঁক গেলা ।বদমায়েশি করে কেউ কেউ ফুল ছুঁড়ে দেয় পুরুত‌ মশাইয়ের মাথায়।রাতে বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখতে বেরোনো।মেয়েরা ১০৮ পদ্ম ফোটাতে ব্যস্ত।যদিও পদ্মের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোথাও ২৮টা কিনেই কাজ সারতে হচ্ছে।সন্ধি পুজোয় বেজে ওঠে নন্দলালের ঢাকা। মাত্র আটচল্লিশ মিনিট সবাই চুপচাপ।টু শব্দটি বন্ধ।পুরুত উচ্চারণ করেন–ওঁং ঐং হ্রীং কীং চামুণ্ডায় নম:। সন্ধিপুজো নিয়ে রয়েছে রক্তবীজ বধের গল্প।পুরাণে কথিত আছে রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়লে সহস্র সহস্র রক্তবীজ অসুরের সৃষ্টি হত। কালী রক্তবীজের রক্ত পান করেন। সেই মুহূর্তে ভূপতিত রক্ত থেকে সৃষ্ট অসুরদের ধ্বংস করেন চণ্ডী। রক্তবীজ বধে কালীকে সাহায্য করেন দেবী দুর্গা।এ গল্প রিয়া,টিয়াদের বলছিল বুড়ো দাদু।সব পদ্ম উৎসর্গ হলেই কচিকাঁচাদের সাথে বড়রা ১০৮ প্রদীপ জ্বালাতে ব্যস্ত।অষ্টমী শেষ মানেই মনখারাপের শুরু বিসর্জনের সুর–রিয়া‌ ,টিয়াকে বলে দ্যাখ-দ্যাখ ঠাকুরের মুখটা কিরকম তিলোত্তমার মতো লাগছে।অহনা‌ পাশ থেকে বলে তাহলে অসুরটা কে? কৌতূহলী হয়ে দেখতে থাকে মায়ের কমলা মুখ।মণ্ডপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল বেচো সে বলে–সত্যিই তো !ঠিক বলেছিস রিয়া,টিয়া আমাদের ঠাকুরের মুখটা কিরকম চেনা একটা মেয়ের মুখ লাগছে।একটা মজা‌ করা যাক ।দাঁড়া বিজয় পটুয়াকে কল  করে একটু ভড়কে দিই।সে ফোন লাগায়। দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় ফোন ধরে বিজয় পটুয়া‌।বেচো বলে–আমি লোকাল থানার ও.ছি স্যার বলছি। আপনি মি এটা কি করেছো? রায়বাড়িতে  ঠাকুরের কি সব চোখ এঁকে এসেছেন। আপনার তৈরি ঠাকুরের মুখ খুব ভাইরাল হয়েছে।লোকে দূরদূরান্ত থেকে দেখতে আসছে। টি.ভি তে দেখুন মিডিয়া লাইভ করছে দেখুন।ওই মুখের সাথে তিলোত্তমার মুখের হুবহু মিল খুঁজে পেয়েছে ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির লোকেদের দাবি।কাল সকাল এগারোটায় নিজাম প্যালেসে দেখা করবে।ছিবি-আই তোমাকে খুঁজছে।বিজয় পটুয়া কাঁদোমাদো হয়ে বলে–বাবু সে কি কথা!এতো খুব মুশকিল হল।আমি কিন্তু ওরকম করতে চাইনি কি করে ওইরকম হয়ে গেছে জানি না! হঠাৎই হাসতে হাসতে বেচো ফোনটা কেটে দেয়।বাচ্চারাও হাসতে হাসতে দেবীর পদতলে পদ্ম ফুল হয়ে ফুটে ওঠে।

Comments :0

Login to leave a comment