MGNREGA Bengal

কোনও ঝগড়া নেই, একশো দিনের প্রকল্প তুলে দিতে চান মোদী-মমতা: সেলিম

রাজ্য

ছবি প্রতীকী।

একশো দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে ঝগড়া নেই। প্রধানমন্ত্রী কমিয়েছেন বরাদ্দ। মমতা ব্যানার্জিও এই আইনের বিপক্ষে ছিলেন। কেন্দ্র এবং রাজ্য, দুই সরকারই, অন্য খাতে টাকা সরিয়েছে। তৃণমূল বা বিজেপি কেউ চায় না একশো দিনের কাজ চলুক।
কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
গত জুনে কলকাতা হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টও পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজ চালুর নির্দেশ দিয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় এই প্রকল্প বন্ধ রাজ্যে। হাইকোর্ট কাজ চালুর নির্দেশ দেওয়ায় তাকে বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু দুর্নীতি হয়েছে বলে কাজ বন্ধ করার যুক্তিকে সমর্থন করেনি। 
মঙ্গলবার কোচবিহারে জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী একশো দিনের কাজ চালুর জন্য কেন্দ্রের নির্দেশিকার বিরোধিতা করেন প্রকাশ্য মঞ্চে। নির্দেশিকার প্রতিলিপি ছিঁড়েও ফেলেন। 
তিনি বলেন, কাজ চালু করার শর্ত হিসেবে তিন মাস অন্তর হিসেব দিতে বলছে কেন্দ্র। সামনে ভোট। এত সময় কোথায়। 
বছরে একবারের বদলে তিন মাস অন্তর ‘লেবার বাজেট’ রাজ্যকে দিতে বলেছে কেন্দ্র। উল্লেখ্য, তৃণমূল সরকার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত বন্ধ করতে বারেবারেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। কিন্তু একশো দিনের কাজের জন্য মামলা দায়ের করেনি। সেই মামলা করে একটি খেতমজুর সংগঠন। রাজ্যে একাধিক কৃষক ও খেতমজুর সংগঠন মঞ্চ গড়ে একশো দিনের কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 
এই প্রসঙ্গেই সেলিম বলেন, কেন্দ্রে কংগ্রেস জোট সরকারকে সমর্থনের সময় একশো দিন কাজের আইন পাশ করিয়েছে বামপন্থীরা। সেই সময় এমন একাধিক আইন পাশ হয়। তৃণমূল তখন বিজেপি জোট এনডিএ’র শরিক হিসেবে বিপক্ষে ছিল। 
সেলিম মনে করিয়েছেন যে বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার সময় থেকে নরেন্দ্র মোদীও এই আইনের বিরোধিতা করেছেন। কেন্দ্রীয় বাজেটে কমানো হয়েছে বরাদ্দ। 
সেলিম বলেন, ‘‘প্রতি বছর টাকা কমাচ্ছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের দুর্নীতি উপরি পাওনা কেন্দ্রের। কারণ টাকা বন্ধ করে গরিবকে শাস্তি দিল। অথচ আইনে সংস্থান থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি দিল না।’’
সেলিমের প্রশ্ন, ‘‘সত্যি কথা বললে রাজ্য কেন শ্বেতপত্র দিয়ে বলছে না কত টাকা প্রাপ্য এবং কত কেন্দ্রের থেকে পেয়েছে। কেন্দ্রই বা দুর্নীতির বিশদ জানিয়ে শ্বেতপত্র দিচ্ছে না কেন।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘নজরদারির জন্য উত্তর প্রদেশের এজেন্সিকে ‘থার্ড পার্টি’ হিসেবে নজরদারির দায়িত্ব দেয় কেন্দ্র। এই এজেন্সি ক’টা দুর্নীতির ঘটনা ধরেছে? তার ভিত্তিতে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক ক’টি এফআইআর করেছে।’’ 
এসআইআর সংক্রান্ত এক প্রশ্নে সেলিম বলেন যে রাজ্যের সিইও’র কাজে ভরসা থাকছে না বলে পর্যবেক্ষক পাঠাতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে। বারবার বলছি মৃতদের নাম বাদ দিতে হবে। আগে সেই নাম বাদ দিয়ে ফর্ম বিলি করলেই একাজ হয়ে যেত। তৃণমূল এবং বিজেপি এই নাম রাখতে চায়। তা আটকানোর জন্য কড়া নজরদারি দরকার। 
এদিকে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষী আহত হয়েছেন গাড়ি দুর্ঘটনায়। মারা গিয়েছেন তাঁর পুত্র। সেই সাক্ষী ভোলানাথ বসুর অভিযোগ শাহজাহানের ইশারায় খুন করানো হয়েছে। এটি দুর্ঘটনা নয়।  
এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘এজন্যই সাক্ষী এবং সতর্ককারীদের রক্ষায় আইন এসেছে। 
সিবিআই তদন্ত করছিল। সাক্ষীকে রক্ষার দায়িত্ব তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে সিবিআই এবং পুলিশের। এর আগে বগটুই কাণ্ডে হেপাজতে মারা গিয়েছে অভিযুক্ত। ইডি, সিবিআই, পুলিশ কিভাবে চলছে আমরা পশ্চিমবঙ্গে দেখছি।’’ 
তৃণমূলের সাসপেন্ডেড বিধায়ক হুমায়ুন কবীর সংক্রান্ত এক প্রশ্নে
সেলিম বলেন যে আমরা বলেছি তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে অবস্থান হতে হবে। রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য ধর্ম হতে পারে না। কৃষির ফসলের দাম, শ্রমিকের মজুরি, জীবিকার দাবি নিয়ে রাজনীতি হবে। ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মেলানোর বিরোধী সিপিআই(এম)।
এক প্রশ্নের ঊত্তরে তিনি বলেন যে তৃণমূলের এই বিধায়ক জানিয়েছিলেন যে দল তাঁকে সাসপেন্ড করে দিল। লোকসভা ভোটে অধীর-সেলিমকে হারানোর জন্য বিভাজন উসকে দিতে লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁকে দিয়ে বলানো হয়েছিল। তৃণমূল দল বা মুখ্যমন্ত্রী বা নির্বাচন কমিশন কেউ কোনও ব্যবস্থা নিল না। 
সেলিম এই ঘটনাক্রমের রাজনৈতিক তাৎপর্য হলো সংখ্যালঘুদের যে অংশ তৃণমূলকে সমর্থন করছিলেন তাঁদেরও ক্ষোভ বাড়ছে। কারণ বামফ্রন্ট সরকারের সময় কেন্দ্র গঠিত রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ‘ওবিসি-এ’ সংরক্ষণ চালু হয়েছিল। অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ চালু হলো। দেখা গেল তৃণমূল সরকারের সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বা চাকরির তালিকায় ওবিসি-’এ’ অংশ একেবারে ভ্যানিশ! 
সেলিম বলেন, ওয়াকফ সংশোধনী আইন মমতা ভাইপোকে বাঁচানোর জন্য পিছনের দরজা দিয়ে লাগু করাচ্ছেন। কালেক্টর বা কেন্দ্রের সরকারের নামে খাস করে দেওয়া হচ্ছে। আরএসএস’র ইচ্ছা অনুযায়ী চলছেন তিনি। যাঁরা তাঁকে ভরসা করেছিল, তাঁরা সেটা বুঝছেন।

Comments :0

Login to leave a comment