বেশ চড়া হয়েছে রোদ। বেলা প্রায় এগারোটা। মালদহ শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে মিলকি মোড়ে পৌঁছেছে বাইক মিছিল। সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দকে সম্বর্ধনা দিতে জড়ো হয়েছেন আশপাশের গ্রামের মানুষ। সেখানেই ছোট্ট নাতিকে নিয়ে মিছিলে হাঁটছিলেন লায়লা বিবি। হাতে লাল পতাকা।
সিপিআই(এম)’র মিছিলে কেন?
জিজ্ঞেস করতেই বললেন শুধু আমার জন্য না আমার এলাকার জন্য এসেছি এই মিছিলে। লিস্টে নাম ওঠার পরেও মেলেনি আবাসের টাকা। নাম কেটে দিয়েছে। এমন আরো অনেকেরই হয়েছে। আবাসের নামে নয়ছয় আমরা দেখেছি। মিছিলে না হাঁটলে দাবি মিটবে না।
লায়লা বিবির বাড়িতে রয়েছেন কন্যা এবং নাতনি। মারা গিয়েছেন জামাতা। মেয়ে আর নাতনিকে লালন পালন করছেন তিনিই।
বললেন বিড়ি বাঁধি দাদা। কিন্তু এ টাকায় সংসার চলে না।
কেন চলে না সংসার?
কেননা এই বয়সে ৫০০ বিড়ির বেশি বাঁধতে পারেন না দিনে। মেলে মাত্র ৫০ টাকা।
এক হাজার বিড়ি পিছু মজুরি সরকারি হিসেব ২২০ টাকা। লায়লা বিবির পাওয়ার কথা অন্তত ১১০ টাকা। সেই বিচারে, প্রতিদিন মার যায় ৬০ টাকার আয়। মাসে মোটামুটি ১৮০০ টাকা।
মিলকি মোড়ের এই মিছিলে মহিলাদের অংশগ্রহণ চোখে পড়বেই। নানা বয়সের মহিলারাই এসেছেন ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’-র এই কর্মসূচিতে।
এসেছেন জয়শ্রী ঘোষও। তিনিও বিড়ি বাঁধেন। তাঁরও এখন বয়স হয়েছে। তিনিও দিনে ৫০০ বিড়ির বেশি বাঁধতে পারেন না। তাঁরও মজুরি দিনে ৫০ থেকে ৭৫ টাকার উপরে ওঠে না।
মালদহে তৃণমূল এবং বিজেপি বারবার ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে ভোট কামিয়েছে।
আর এখানেই জেলা জুড়ে বামপন্থীদের প্রচারে মজুরির কথা, জীবিকার কথা, কাজের কথা। কেন তা বুঝিয়ে দিচ্ছে লায়লা বিবি আর জয়শ্রী ঘোষের জীবনযুদ্ধ।
ধর্মের জন্য কারো মেলে না বাড়তি মজুরি, কমে না শোষণের মাত্রা এতটুকু।
এই মানিকচকে নদী ভাঙ্গনের জেরে তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে জনপদ। তবু তৃণমূলের লুট কমছে না।
মিছিলে হাঁটছিলেন যুবতী রুম্পা রায়। রুম্পা বিবাহিতা। ক্লাস টেন অব্দি পড়াশোনা করেছেন। জানা গেল স্বামী পরিযায়ী শ্রমিক। দিনমজুরের কাজ করেন ওড়িশায়।
মানিকচকে কেবল একটি বিধানসভা এলাকা থেকেই এক লক্ষের বেশি কর্মঠ যুবক বাইরের রাজ্যে পরিযায়ী। যাচ্ছেন কেননা রাজ্যে কাজ নেই। যাচ্ছেন কেননা অনেক বেশি মজুরি মিলছে বাইরের রাজ্যে। নবান্ন থেকে বের করা উন্নয়নের পাঁচালী আদৌ মিলছে না এখানকার জনজীবনের একদিন প্রতিদিনের সঙ্গে।
রুম্পা বললেন তাঁর ছেলেটা ক্লাস নাইনে উঠেছে। কতদিন পড়াশোনা করবে মা হয়ে তিনি নিজেই জানেন না। আরো কিছু কথায় বললেন, “স্বামীর মজুরি দিয়ে সংসারের কিছুটা হয়, অনেকটাই হয় না।”
রেশনে চাল মেলে না?
জিজ্ঞেস করতেই ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, সে চাল খেয়েছেন? সঙ্গের মহিলারা প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে একরাশ অভিযোগ উপুর করে দিলেন রেশনের চাল নিয়ে।
চালে কাকঁর, চালে পোকা, চাল ভাঙা।
রুম্পা বললেন, “ওই চাল ছেলেদের দেওয়া যায়? বাচ্চাদের দেওয়া যায় কখনো!”
মিছিল পৌঁছেছে ধরমপুরে হয়েছে ছোট জনসভা। বক্তব্য রেখেছেন সিপিআইএম নেতা শতরূপ ঘোষ এসএফআই নেত্রী দীধিতি রায়, প্রবীণ নেতা অম্বর মিত্র। বলেছেন মীনাক্ষী মুখার্জি।
Bangla Bachao Jatra
লায়লা-জয়শ্রীর ধর্ম মানে না মজুরি চুরির কল
×
Comments :0