Bangla Bachao Jatra

হতাশার আঁধার কাটিয়ে স্বপ্নের খোঁজ মালঞ্চ পল্লীতে

রাজ্য

অরিজিৎ মণ্ডল: মালদহ

পাশেই রেল লাইন। উত্তরবঙ্গের দিকে ছুটে চলছে একের পর এক দূরপাল্লার ট্রেন। কিন্তু সেলস  ট্যাক্স বস্তির বাসিন্দাদের স্বপ্নগুলো থমকে থাকছে। 
সর্বদা উচ্ছেদের ভয় নিয়ে মাথা গুঁজে রয়েছে একগুচ্ছ পরিবার। 
মালদহে বাংলা বাঁচাও যাত্রার অংশ হয়ে এই বস্তিতে সরাসরি কথা বলেছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। ছিলেন মীনাক্ষী মুখার্জি, সুমিত দে। সিপিআই(এম) মালদহ জেলা সম্পাদক কৌশিক মিশ্র। ছিলেন জেলা এবং এই বস্তি এলাকার সংগঠক রাও। পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির মালদহ জেলা সম্পাদক বিপ্লব দাস ও ছিলেন এই সরাসরি মতবিনিময়ে। 
আধো অন্ধকারে শীতের রাতে চলেছে কথা। তার মধ্যেই দুই ছাত্রী সাহসী সুরে নিজেদের যন্ত্রণা জানিয়েছেন। জানিয়েছেন স্বপ্নের কথা।
জানা গেল যে জমিতে বাস সে জমি রাজ্য সরকারের। ৪০-৪৫ বছর বা তার বেশি রয়েছেন এমন পরিবার নেহাত কম নয়। কিন্তু মেলেনি স্থায়ী কোন পাট্টা। বরং প্রতিদিন উচ্ছেদের ভয় বাড়ছে। 
সুমিত দে আলোচনায় জানিয়েছেন সারা পশ্চিমবঙ্গেই বস্তিবাসীদের নতুন বিপদ হলো সর্বদা উচ্ছেদের ভয়। তার বিরুদ্ধে লড়াইও চলছে রাজ্যজুড়ে। এমনকি ব্রিগেডের ময়দানে কৃষক, শ্রমিক, খেতমজুরদের সঙ্গে বস্তি আন্দোলনও জানিয়েছে এমন বাসিন্দাদের কথা, তাঁদের অধিকারের দাবি।
মালদহের ইংরেজবাজার শহরের মালঞ্চ পল্লী দক্ষিণ এলাকায় অবস্থিত সেলস ট্যাক্স বস্তির উঠোনে এই বস্তির স্নাতকোত্তর পাঠরত এক ছাত্রী বললেন, গ্রাজুয়েশন পাস করেছি। বর্তমানে মাস্টার্স করছি কিন্তু চাকরি কী পাবো। এখন তো মনে হয়ে এত পড়াশুনো না করে আগে থেকে কাজ করলে এত দিনে হাজার দশেক টাকা আয় হতো। অনেকেই এমন ভাবছে। তাই পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে।
এই বস্তিতেই প্রায় ৩০০ মানুষের বসবাস। এই এলাকায় প্রায় ৪০ বছর আগে বসবাস শুরু করেন পরিবার গুলি। পরবর্তীকালেও অনেকে এসে এখানে বসতি করেছেন। কিন্তু কারোর জমিরই পাট্টা নেই। সময় গড়ানোর পর পরবর্তী প্রজন্ম পড়াশোনা করেছে। কিন্তু কাজ নেই। 
স্নাতকোত্তর এবং বিএড পাঠরত আরেক ছাত্রী জানিয়েছেন চরম দুর্নীতিতে কিভাবে শেষ হচ্ছে স্বপ্ন। তিনি বলেছেন, টাকা না দিলে স্কুলের চাকরি মিলবে না। এটা এখন সবাই বুঝে গিয়েছে। আমার মত অনেকেই পাস করার পরেও কাজ পায়নি। এরপরে যারা পড়াশোনা করবে অন্তত তাদের যেন এমন হতাশার মধ্যে থাকতে না হয়
এই বস্তিরই সিপিআই(এম) নেতা জানাচ্ছেন এখানের প্রায় সব  পুরুষই রাজ্যের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে। বাকিরা জেলার বিভিন্ন জায়গায় রাজমিস্ত্রি বা ঘরামির কাজ করে। বাড়ির মহিলারা প্রায় সবাই গৃহ সহায়িকার কাজ করেন। তিনি আরও জানাচ্ছেন, এই পরিবারগুলোর যা আয়, তাতে বাড়ির দুজনের কাজ করেও সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। 
বস্তির মূল রাস্তা দিয়ে ঢুকেই দুপাশে সারি সারি বাড়ি। সবগুলোই কাঁচা পাকা অবস্থায় অর্ধেক তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। বাড়ির দেওয়ালে ইটের গাঁথনি রয়েছে কিন্তু মাথায় নেই পাকা ছাদ। যদি উচ্ছেদ করাই হয় সেই আশঙ্কা নিয়েই মাথায় শুধুই অ্যাসবেসটস লাগিয়ে রেখেছেন বাসিন্দারা। 
শুধুমাত্র সরকারি বঞ্চনা নয়, সাথে রয়েছে সামাজিক বঞ্চনাও। এই বস্তি লাগোয়াই পাশে বড় বড় ফ্ল্যাট গুলি রয়েছে। সেই দিকে বাড়ির জানালা করা যাবে না। মহিলারা জানিয়েছেন ছাত্রীরা জানিয়েছেন ফ্ল্যাটের লোক তাদের মুখ দেখতে চান না সেজন্য জানালা করা নিষেধ। নতুন শতাব্দীর পর পঁচিশ বছর কাটতে চলল। তার পরেও এই মানসিকতা যন্ত্রণায় রাখছে এখানকার বাসিন্দাদের। 
রাস্তায় জল জমে থাকে বর্ষায় দীর্ঘ সময় যাতায়াত প্রায় অসম্ভব তবু তার মধ্যেই দিন কাটাতে হয়। সমস্যা রয়েছে পানীয় জলের। অন্য সমস্যা রয়েছে। মহিলারা জানিয়েছেন তাদের কাউকে কাউকে ঘরেই নির্যাতনের শিকার হতে হয়। রেল লাইনের উল্টোদিকে ছোট বড় মদের দোকানে দেদার বিষয়ে মদ। চায়ের দোকানেও চাইলে মেলে মদ। সারাদিনের যন্ত্রণা বঞ্চনা পর মদ খেয়ে ঘরে এসে ঘরেরই মহিলাদের নির্যাতন নিয়মিত ঘটনা প্রায়। 
বাসিন্দারাই বলেছেন মীনাক্ষীকে বলতে। মীনাক্ষী বলেছেন একজোট হতে হবে। এই যে বছরের পর বছর দিনের পর দিন যন্ত্রণা সয়ে আসা, এটি সব নয়। একে বদলাতে হবে বদলানো সম্ভব। বলেছেন উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইও হচ্ছে এবং সেই অধিকার আছে। কিন্তু তার জন্য একজোট হওয়া জরুরি। আর বললেন, নিজেদের দাবির কথা, অধিকারের কথা নিজেদের জানাতে হবে। সিপিআই(এম) সেই লড়াইয়ের পাশে থাকছে, থাকবে।

Comments :0

Login to leave a comment