Panchayat corruption

রাজ্যে চলছে ভুয়ো গ্রাম সংসদ

রাজ্য জেলা

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP রাজ্য জুড়ে চলছে ভুয়ো গ্রাম সংসদ

গ্রামের মানুষ জানতেই পারছেন না। অথচ রাজ্যজুড়ে নাকি ঢেউ উঠেছে গ্রাম সংসদ সভার! 


দুর্নীতির অভিধানে নভেম্বরে এরাজ্যের প্রশাসন ও শাসকদলের নয়া সংযোজন হতে চলেছে ‘ভুয়ো গ্রাম সংসদ’ সভা। মৃত ব্যাক্তির ভোট দিয়ে লুট করে এবার ভূতুড়ে সংসদ সভার নজির তৈরি হয়েছে এরাজ্যে। 
ব্যবহার করা হচ্ছে পঞ্চায়েতের লেটারহেড। সেখানে লিখে দেওয়া হচ্ছে পঞ্চায়েতের কোন সংসদে কবে আয়োজন করা হয়েছে সভার। সভার সময় পর্যন্ত উল্লেখ থাকছে গ্রাম সংসদের সভার স্থান থেকে কোন সময়ে সময়ে বসছে সভা। নিচে থাকছে প্রধানের স্বাক্ষর। ব্যস। তাতেই কেল্লা ফতে। 


পঞ্চায়েত প্রধানের স্বাক্ষরিত সংসদ সভার চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ব্লক প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের কাছে। সূত্রের খবর, ওই চিঠিই জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে আপলোড করে দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পোর্টালে। একইসঙ্গে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের পোর্টালে তুলে দেওয়া হচ্ছে প্রধানের স্বাক্ষরিত চিঠিকে। আর তাতেই দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে নভেম্বর মাসজুড়ে রাজ্যে গ্রামের মানুষের অংশগ্রহণে গ্রাম সংসদ সভা। কাকপক্ষী টের পাচ্ছে না অথচ হু হু করে বাড়ছে গ্রাম সংসদ সভার সংখ্যা।


দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলাতে এইভাবেই ভূতুড়ে সংসদ সভার তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে সরকারি পোর্টালে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সঙ্গে জেলাস্তরে যুক্ত এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ কোন পঞ্চায়েতে কবে, কখন সংসদ সভার আয়োজন করা হচ্ছে তার তালিকা চেয়ে আমাদের কাছে উপর মহল থেকে চাপ আসছিল। পঞ্চায়েতের সরকারি প্যাডে নোটিস আকারে সংসদ সভা আয়োজনের তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকা পোর্টালে আপলোড হওয়ার পর থেকেই আর গ্রাম সংসদ সভা নিয়ে কোনও চাপ আসছে না।’’ রাজ্য প্রশাসনের হাবভাব দেখে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কর্মচারীদেরও ধারণা হয়ে গেছে, আসলে সরকার কাগজে কলমেই গ্রাম সংসদ সভার আয়োজন হয়েছে দেখাতে চাইছে। রাজ্যের বেশ কিছু জেলার  পঞ্চায়েত প্রধানের স্বাক্ষরিত সংসদ সভা আয়োজনের তালিকা দেখে এলাকা থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের মানুষ জানেনেই না তাঁদের এলাকায় সভা হয়েছে। 


নভেম্বর মাসে রাজ্যজুড়ে তিন হাজারের ওপর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি সংসদে গ্রামের মানুষকে জড়ো করে সভা করার নির্দেশিকা জারি করেছিল পঞ্চায়েত দপ্তর। নির্দেশিকার কড়া মনোভাব দেখে রাজ্যের মানুষের মনে হয়েছিল, এবার হয়তো মানুষের অংশগ্রহণে গ্রামোন্নয়ন কাজ শুরু হতে চলেছে। আসলে দুর্নীতিতে নাজেহাল হয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ জোগাড় করার অন্যতম শর্ত ছিল সংসদ সবা থেকে গ্রাম সভার আয়োজন করার। কাগজে কলমে সেই কাজ করেই দায় সারতে চাইছে সরকার।


কেন মানুষের অংশগ্রহণ চাইছে না শাসকদল?
পঞ্চায়েত দপ্তর সূত্রেই জানা গেছে, কোনোভাবেই মানুষের উপস্থিতিতে নিয়ম মেনে সংসদ সভা হোক তা শাসকদলের পঞ্চায়েত চাইছে না। পঞ্চায়েত ভোটের মানুষের মুখে ‘চোর’ শোনার দায় এড়াতে চাইছে তৃণমূল নেতারা। একইসঙ্গে গ্রামে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চোরা স্রোত বইছে। সংসদ সভায় সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসলে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি কোন জায়গায় যাবে সেটাও ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে। তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে সবদিক বিবেচনা করে গ্রামের মানুষকে নিয়ে সভা আয়োজন থেকে বিরত থাকার কথাই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। 


অথচ সংসদ এলাকার ১০শতাংশ মানুষের অংশগ্রহণ, গত পঞ্চায়েত ভোটে দ্বিতীয় বিজেতা প্রার্থী, আইসিডিএস, আশাকর্মী, এলাকার ক্লাব, স্বেচ্ছসেবী প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আইনে সংসদ সভা করার কথা বলা হয়েছিল নির্দেশিকাতে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করা থেকে গ্রামের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণ করার কথা বলা হয়েছিল রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের নির্দশিকাতে। এমনকি জেলা শাসকদের উদ্দেশ্যে পঞ্চায়েত সচিব নির্দেশিকাতে লিখেছিলেন, ‘‘স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা ফিরিয়ে আনতে এই ধরনের সভা এবার থেকে নিয়মিতভাবে করতে হবে। এটা করলে মানুষের অভিযোগ কমানো সম্ভব হবে। একইসঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কাজ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে।’’ 

গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে এলাকার উন্নয়নে কী ভূমিকা নেওয়া হয়েছে, সেটারও ‘শো কেস’ করার কথা নির্দেশিকাতো বলা হয়েছিল। জেলাস্তর থেকে এমনকি বিডিওদের গ্রামসভায় বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকাতে। এখন গ্রামের মানুষ জানতেই পারছে না, অথচ সংসদ সভার কাজ প্রায় শেষ হওয়ার মুখে। 


চলতি মাসে কেন্দ্র থেকে এসেছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার টাকা। গত দু’দিন আগে কেন্দ্রীয় সরকার একাধিক শর্ত চাপিয়ে বরাদ্দ করেছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার জন্য কেন্দ্রীয় অংশের জন্য বরাদ্দ ৮হাজার ২০০ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসে এই টাকা আসার পর আগামী এপ্রিলের মধ্যেই ১১লক্ষ বাড়ি তৈরি করতে হবে। 


টাকা আসার পর কেন্দ্রের শর্ত মেনে আবাস যোজনার উপভোক্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করতে গ্রামসভা বৈঠক করতে বলা হয়েছে। ২২ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রামসভার বৈঠক শেষ করতে বলা হয়েছে। পঞ্চায়েত দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আবাস যোজনার জন্য বিশেষ গ্রামসভার বৈঠক আয়োজন করা হবে। জেলাভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট দিনে প্রতিটি জেলার সব পঞ্চায়েতেই বৈঠকের আয়োজন হবে। তবে ওই বৈঠকে মানুষের কথা বলার সুযোগ থাকবে না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের কর্মসূচিতেই পর্যবসিত হবে।

 

Comments :0

Login to leave a comment