MONDA MITHAI – KLAYAN DAS | RATH – NATUNPATA | SATURDAY 13 JULY 2024

মণ্ডা মিঠাই – কল্যান দাস | রথের সেকাল একাল – নতুনপাতা | শনিবার ১৩ জুলাই ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHAI  KLAYAN DAS  RATH  NATUNPATA  SATURDAY 13 JULY 2024

মণ্ডা মিঠাই

রথের সেকাল একাল
কল্যান দাস

নতুনপাতা

       সকাল থেকেই বিভিন্ন রথের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে পাশাপাশি দু'টি রথ দেখতে গেলাম। 
বেলগাছিয়া রথতলার পালচৌধুরিদের ১৫৮ বছরের প্রাচীন রথ, ১৮৭৫-এ এর সূচনা। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের থ্যাকর্স ডাইরেক্টরিতে পাই মধুসূদন পালচৌধুরির উল্লেখ। হাওড়ার দেশীয় উদ্যোগে পরিচালিত ফাউন্ড্রিগুলির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মধুসূদন পালচৌধুরি। ৭৪ গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড (উত্তর)-  মধুসূদন পাল চৌধুরী-এর আয়রন ওয়ার্কস (থ্যাকার -১৮৯৭)।  মধুসূদন পালচৌধুরিরা চার ভাই - মধুসূদন, বিধুভূষণ, বেণীমাধব, রামনারায়ণ। প্রত্যেকেই কৃতি। সেকালের রীতি ছিল বড় ভাই, পরিবারের কর্তার নামে পারিবারিক পরিচয় দেওয়া। তাই মধুসূদনবাবুর নাম সর্বত্র। মধুসূদন পালচৌধুরির নামে রয়েছে রাস্তা, ব্যাঁটরা মধুসূদন পাল চৌধুরি স্কুল ইত্যাদি। অবশ্য বিধুভূষণ পালচৌধুরির নামেও একটি স্কুল আছে। এখন পরিবার বহু ধারায় সম্প্রসারিত, অনেকে এখানে থাকেন না, সকলের আর্থিক অবস্থাও সমান নয়। পারিবারিক মন্দিরে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বন্দনা হয়। 
 

      এখন এই রথযাত্রা পরিচালিত হয় স্থানীয় মহামানব সংঘ এবং পরিবারের তত্তাবধানে। এ প্রজন্মের সন্তানরা হলেন সৌমেন, বলরাম, কৃষ্ণ। মহামনব সংঘ অত্যন্ত মর্যাদার সাথে এর দায়িত্ব নিয়েছে। এটাকে তারা নিজেদের আইডেন্টিটি মনে করে। এই রথের জন্য ওই অঞ্চলটাই রথতলা নাম পেয়েছে, এটা তাদের গর্ব।
রথের সেই জৌলুষ আর নেই। কাঠের রথ, করিগর কে ছিল আজ আর জানা যাচ্ছে না। তবে মহামানব সংঘ রথটিকে সংরক্ষণ করেছে। তাদের খেলার মাঠে একপাশে টিনের চালা ঘরে সারা বছর রথটি থাকে। প্রতিবছর রথের আগে রং, মেরামতি হয়।  
রথটি চারতলা, নয়চূড়া, লোহার কাঠামোর উপর কাঠ নির্মিত। উচ্চতা আনুমানিক ৩০ ফুট,  কিছু জায়গায় সিইএসসি-র ইলেকট্রিক লাইনে আটকে যায়। তাই রথের দিনে সিইএসসি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। সকাল থেকেই সিইএসসি-র লোকজন  এসে গেছে। 
রথের বেস ১২X১০ ফুট, ছয়টি লোহার চাকা। রথ দড়ির টানে চলে-থামে। রথযাত্রার শেষ বেলগাছিয়া পেট্রোলপাম্পের পাশে মাসির বাড়িতে থেকে যায়।


     আগে পালচৌধুরিদের দু'বিঘার বেশি জমিতে মেলা বসত। এখন বিভিন্ন শরিকরা জমি বিক্রি করে দেওয়ায় মাত্র ছয় কাঠা জমি মেলার জন্য নথিভূক্ত আছে। সেখানে শিবমন্দিরে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা থাকে। মূর্তিগুলি দারু-বিগ্রহ। সেকালে রথে বিভিন্ন দিনে ভোগ হত, প্রসাদ বিতরণ হত। এখন সে সব আর হয় না। মেলাটাও ছোট হতে হতে পাশে  ছাত্র মিলন সংঘের মাঠে নতুন একটা মেলায় মিশে গেছে। কেবল বেলগাছিয়া পেট্রোল পাম্পের আশে পাশে ড্রেনের উপর কয়েকটি জিলিপি-গজার দোকান বসে। পুরানো বিক্রেতারা কিসের টানে আসে, দোকান লাগায় তারাই বলতে পারবে। পার্শ্ববর্তী পাড়াগুলির  ১২০০ মানুষ রথ টানায় অংশগ্রহণ করে। ২০০ মহিলা সারিবদ্ধভাবে  শঙ্খ বাজিয়ে অংশ নেয়। ঢাক-ঢোল-খঞ্জনি থাকে। প্রাচীন এই রথের কথা সেভাবে প্রচারে নেই। কিন্তু এ নিয়ে রথতলার মানুষের কোনও ক্ষোভ নেই। তারা নিজের মধ্য আনন্দ-উৎসবে রথযাত্রা উপভোগ করে।

Comments :0

Login to leave a comment