Modi Parliament

কাজের জায়গা তবে সেটা স্বৈরতন্ত্রের নয়

সম্পাদকীয় বিভাগ


সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের উদ্দেশ্যে জ্ঞান বিতরণ করে বলেছেন সংসদ নাটক করার জায়গা নয়, কাজ করার জায়গা। যদি তাই হয় তাহলে সেই কাজের জায়গায় কাজ করার সময় তাঁর জমানায় ক্রমাগত কমে যাচ্ছে কেন? সংসদ যেমন আইন তৈরি করে, বা‍‌জেট অনুমোদন করে তেমনি বহু জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা বিতর্ক করে এবং অনেক বিরোধ-বিতর্কের মীমাংসা করে। শাসক যদি আধিপত্যবাদী, স্বৈরাচারী হয় তাহলে আলোচনা-পর্যালোচনার এবং ভিন্ন মতকে গুরুত্ব দেবার পরিসর সঙ্কুচিত হয়ে যায়। আর শাসক যদি ফ্যাসিবাদের অনুগামী হয় বা একদলীয় শাসনের ঝোঁক থাকে তাহলে সংসদ তথা সংসদীয় ব্যবস্থাটাই তাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তখন বিভিন্ন বিল নিয়ে, বাজেট নিয়ে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ও জ্বলন্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা বিতর্ক নিয়ম রক্ষায় পরিণত হয়। নমো নমো করে বিল পেশ করে বিরোধীদের বিল পড়ে দেখার সময় না দিয়ে। কোনোরকম আলোচনা-বিতর্ক ছাড়াই পাশ করিয়ে নিয়ে গণতন্ত্রের ধ্বজা ওড়ানো হয়। মোদী জমানায় ভারতের সংসদ এখন গণতন্ত্রের অবনমনের এমন শেষ সীমায় এসে ঠেকেছে। আর একটু নামলেই গণতন্ত্রের পাঠ চুকিয়ে স্বৈরতন্ত্রের ধ্বজা উড়বে।
সংসদ কাজের জায়গা সন্দেহ নেই। কিন্তু মোদী যাদের নাটক করছে বলে আক্রমণ করেছেন সেই বিরোধীরা তো কাজের জন্যই সোচ্চার হচ্ছে। বিরোধীরা বলছে কাজের জন্যই সংসদের অধিবেশনের বাড়ানো হোক। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হোক বর্তমানে চলা এসআইআর নিয়ে। এসআইআর নিয়ে দেশজুড়ে আতঙ্ক ও ভীতি প্রকট আকার নিয়েছে। অসংখ্য প্রশ্ন, অসংখ্য অভিযোগ। পদ্ধতির জটিলতায় জেরবার সাধারণ মানুষ। সংসদে এই বিস্তারিত আলোচনা করে আতঙ্ক কাটিয়ে মানুষ স্বস্তি দেওয়া দরকার। কিন্তু ‘কর্মবীর’ মোদী কোনও আলোচনা করবেন না। মোদীরা চান সংসদে যদি কোনও বিষয়ে আলোচনা করতে হয় তবে সেটা সরকার ঠিক করবে, বিরোধীদের সেখানে নাক গলাতে হবে না। যা বলার সরকার বলবে, যা করার সরকার করবে। বিরোধীরা শুধু শুনবে আর দেখবে। সরকার তাদের প্রয়োজন মতো বিল পেশ করবে। আলোচনা ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাশ করিয়ে নেবে। তার যৎসামান্য যে ক’দিন দরকার স’সদ চলবে, তারপর বন্ধ হয়ে যাবে।
মোদী জমানায় সংসদ চলে সরকারের মরজিতে। বিরোধীদের মতামত গুরুত্বহীন। সবচেয়ে বড় কথা যিনি সংসদকে কাজের জায়গা বলে বর্ণনা করেছেন তিনি নিজে এতটা ‘কর্মবীর’ যে সেই কাজের জায়গায় পারদপক্ষে যান না। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ভাষণ দিতে যান, ভাষণ দিয়ে ফিরে আসেন। তিনি অন্যদের বিশেষ করে বিরোধীদের বক্তব্য শোনা প্রয়োজন মনে করেন না। কারণ তিনি যা বলবেন সেটাই শেষ কথা। সরকার সেটাই করবে। বিরোধীরা, বিরোধীদের বক্তব্য, ভিন্ন মত তাঁর এবং তাঁর সরকারের কাছে অপ্রাসঙ্গিক। এমন এক একদলীয় সরাসরি প্রবণতামুখী সরকারের অধীনে সংসদের কাজের সময় দিন কমতেই থাকবে। গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত ফিকে হয়ে যাবে। গণতন্ত্র রূপান্তরিত হবে আধুনিক রাজতন্ত্রে যেখানে ভিন্ন মতের, বহুত্বের কোনও জায়গা থাকবে না। সংসদকে গণতন্ত্রের কাজের জায়গার বদলে স্বৈরতন্ত্রের কাজের জায়গা বানাতে চান মোদীরা। এটা ঠেকানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

Comments :0

Login to leave a comment