Editorial

এভাবে চলতে পারে না

সম্পাদকীয় বিভাগ

পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২ রা‍জ্যে, বলা যায় অর্ধেক ভারতে চলছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী বা এসআইআর।  ঘোষিত লক্ষ্য ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করা। কিন্তু যে পদ্ধতিতে এবং অস্বাভাবিক দ্রুততায় এসআইআর চলছে, তাতে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করা কোনোমতেই সম্ভব হবে না। ভোটার তালিকা তো ত্রুটিমুক্ত হবেই না উলটে বিপুল সংখ্যক প্রকৃত ভোটারের নাম তালিকায় জায়গা পাবে না। যে কোনও গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সমস্ত নাগরিকের নাম ভোটার তালিকায় যুক্ত করা এবং সমস্ত মৃত, স্থানান্তরিত ও ভুয়ো ভোটারদের নাম ছেঁটে ফেলা। সে দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আর এটাই কমিশনের প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং লক্ষ্য। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় যে এসআইআর চলছে তাতে কমিশনের প্রশাসনিক লক্ষ্য যতটা স্পষ্ট তার থেকে অনেক বে‍‌শি প্রকট শাসক দল বিজেপি’র রাজ‍‌নৈতিক লক্ষ্য। আদতে এসআইআর হয়ে উঠেছে বিজেপি’রই ভোট রাজনীতির কৌশলগত প্রকল্প। আরএসএস-বিজেপি’র এঁকে দেওয়া ছক অনুযায়ীই এসআইআর করছে নির্বাচন কমিশন।
বস্তুত, এই এসআইআর’র উদ্দেশ্য মোটেই নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করা নয়। বিপুল সংখ্যক বৈধ ও ন্যায্য ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ভোটে বিজেপি-কে সুবিধা করে দেওয়াই আসল লক্ষ্য। হিন্দুত্ববাদের মনুবাদী সংস্করণে মুসলিমদের পাশাপাশি দলিত, আদিবাসী তথা গরিব পিছিয়ে পড়া মানুষদের কোনও জায়গা নেই। আর এই অংশের মানুষরাই বাম, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক বিরোধী দলগুলির প্রধান ভিত্তি। বিজেপি চায় এই অংশের মানুষকে যথা সম্ভব ভোটার তালিকার বাইরে রাখতে। তাহলে ভোটে জেতা সহজ হয়ে যাবে।
এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন এমন পদ্ধতিতে এবং এমন দ্রুততায় এসআইআর করার পরিকল্পনা করেছে। এত কম সময়ে সমস্ত প্রমাণপত্র জোগাড় করা সচ্ছল, শিক্ষিত মানুষের পক্ষে সম্ভব হলেও গরিব, কম শিক্ষিত, প্রযুক্তিতে সড়গড় নয় এমন মানুষের পক্ষে অসম্ভব। তাছাড়া ভারতের মতো একটি অতি জনবহুল দরিদ্র ও অশিক্ষার দেশে বেশিরভাগ মানু‍ষের ঘরেই যথেষ্ট প্রমাণপত্র থাকে না। অতীতে সেসব কাগজপত্র তেমন জরুরি প্রয়োজনীয় না থাকায় সেগুলি সংরক্ষণের গরজ অনুভূত হতো না। এদেশে এমন লক্ষ লক্ষ পরিবার আছে বংশ পরম্পরা বাস করলেও হাতের কাছে তেমন কোনও কাগজপত্র নেই। বলাবাহুল্য এরা বেশিরভাগই অর্থে, শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা সংখ্যালঘু, দলিত, আদিবাসী। অল্প সময়ের কারণে তালিকায় এদের নাম ওঠা অনিশ্চিত। এছাড়া যে চাপের মুখে অস্বাভাবিক দ্রুততায় বিএলও-দের কাজ করতে হচ্ছে তাতে নির্ভুল কাজ অসম্ভব। তার উপর রয়েছে মৃত ও ভুয়ো ভোটারদের নাম রেখে দেবার প্রবল রাজনৈতিক চাপ। এই অবস্থায় মৃত ও ভুয়ো ভোটার বাদ দিয়ে নির্ভুল তালিকা তৈরি কোনোদিনই সম্ভব হবে না। উলটে বিপুল সংখ্যক বৈধ ভোটারের নাম বাদ চলে যাবে। তার সঙ্গে উপরি যন্ত্রণা, সমস্ত নাগরিকদের অকারণে নাজেহাল করা এবং উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রাখা।
 

Comments :0

Login to leave a comment