বয়স ১৭ বছরও পেরোয়নি, সন্তান সম্ভবা এক নাবালিকা গর্ভপাতের অনুমতি চেয়েছিল গুজরাট হাইকোর্টের কাছে। বিচারপতি নাবালিকাকে ভালো করে মনুস্মৃতি পড়ার পরামর্শ দিলেন। ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদীদের কাছে মনুস্মৃতি অবশ্য পাঠ্য এবং অনুসরণীয় হতে পারে কিন্তু ভারতের আইন ও সংবিধানের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তথাপি বিচারপতি কেন ভারতীয় আইন মতে অপরিণত বয়সের কোনও সন্তান সম্ভবা গর্ভপাত চাইলে এমন পরামর্শ দিলেন বোধগম্য নয়।
আসলে নাবালিকার বয়স ১৬ বছর ১১ মাস। ২৩ বছর বয়সি এক যুবক তাকে ধর্ষণের পর সে গর্ভধারণ করে। লজ্জায়, ভয়ে এতদিন গোটা বিষয়টি সে চেপে রেখেছিল। শেষ পর্যন্ত গর্ভপাত করার জন্য উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়। আইন অনুযায়ী গর্ভধারণের ২৪ সপ্তাহের মধ্যে যে কোনও মহিলা স্বেচ্ছায় গর্ভপাত করাতে পারেন। কিন্তু তার পরে গর্ভপাত করাতে হলে আদালতের অনুমতি লাগে। নাবালিকা বর্তমানে সাত মাসের গর্ভবতী। তাই গর্ভপাতের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে।
অন্যান্য অনেক কিছুর সঙ্গে মনুস্মৃতি সমাজে ও পরিবারে মহিলাদের অবস্থান নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সেই অবস্থান অবশ্যই আধুনিক উন্নত সমাজের অবস্থানের মতো নয়। প্রাচীন পশ্চাৎপদ চিন্তা, অযৌক্তিক-অবৈজ্ঞানিক-অমানবিক ভাবনার মিশেলে মহিলাদের ইতিকর্তব্য নির্দিষ্ট করেছে মনুস্মৃতি। সেখানে নারী-পুরুষের সেবিকা ও ভোগ্য। ঘরেই তার অবস্থান। ঘরে থেকে সংসারের যাবতীয় কাজ করবে, পুরুষকে সেবা করবে। বাইরে যাওয়া শিক্ষা গ্রহণ।, উপার্জনশীল কাজে যুক্ত হওয়া নিষেধ। সর্বোপরি সন্তান ধারণ, লালনপালন তাদের প্রধান কাজ। সন্তান সম্ভবা নাবালিকাকে এহেন মনুস্মৃতি পাঠ করার কথা বলা হয়েছে।
নাবালিকার আইনজীবীকে মা-ঠাকুমা-দিদিমার কাছে বিচারপতি খোঁজ নিতে বলেছেন তাদের সময় কত বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে হতো এবং কত বছরে তারা মা হতেন। বিচারপতি নিজেই বলেছেন আগে ১৪-১৫ বছরে বেশিরভাগ মহিলার বিয়ে হয়ে যেত এবং ১৭ বছর বয়সে তারা অন্তত একটি সন্তানের মা হয়ে যেতেন।
একটি গর্ভপাতের মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতির এভাবে মনুস্মৃতি, আগেকার কম বয়সে বিয়ে ও সন্তান ধারণের অবতারণা অনেকের কাছেই বোধগম্য হয়নি। তিনি গর্ভপাত না করার জন্য আইনের বাইরে গিয়ে যুক্তি দিতে চাইছেন? আগে কম বয়সে বিয়ে হতো এবং ১৭ বছর বয়সে অন্তত এক সন্তানের জননী হতো বলে কি ১৭ বছরে ধর্ষিতা নাবালিকাকেও এখন মা হতে হবে? আর মনুস্মৃতি পড়ে তাকে বুঝে নিতে হবে মহিলাদের প্রধান কাজ সন্তানের জন্ম দেওয়া?
আইন কিন্তু সে কথা বলে না। ১৮ বছরের কমে বিবাহ বেআইনি, সন্তান ধারণের তো প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া মহিলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন মিলন ধর্ষণ। আর মহিলা যদি নাবালিকা হয় তাহলে সম্মতিতে যৌনমিলন হলেও আইনের চোখে সেটা ধর্ষণ। এক্ষেত্রে ধর্ষণের পরিণতিতে গর্ভধারণ। তাই গর্ভপাতের পূর্ণ অধিকার নাবালিকার আছে। গর্ভাবস্থাকে বহন করার বা না করার অধিকার প্রত্যেক মহিলার আছে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত গর্ভপাতের অধিকার সব মহিলার আছে। ২০২২ সালে দিল্লি হাইকোর্ট ৩৩ সপ্তাহের এক সন্তান সম্ভবাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়ে বলেছে মায়ের পছন্দই শেষ কথা।
গুজরাট হাইকোর্টের বিচারপতি ৭ মাসের নাবালিকা সন্তান সম্ভবার আবেদনের দ্রুত মীমাংসা না করে আরও এক সপ্তাহ পরে পরবর্তী শুনানির ব্যবস্থা করলেন।
Comments :0