Editorial

বামাল ধৃত জোচ্চোর

সম্পাদকীয় বিভাগ


আবার প্রমাণ হয়ে গেল বিজেপি একটি জোচ্চোরের দল। জোচ্চোরিকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেই তারা ভোটে জেতার জন্য সর্বাত্মক অভিযান চালায়। জোচ্চুরির আশ্রয় নিয়েই গণতন্ত্রের চিতা সাজায়। জোচ্চুরি করেই তারা চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনে আপ-কংগ্রেস জোট প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিল। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নতুন করে ব্যালট গণনার পর ধরা পড়ে যায় সেই জোচ্চুরি। আদালত আগের ভোট গণনা ও ফল ঘোষণাকে বাতিল করে দিয়ে আপ-কংগ্রেস জোট প্রার্থীকে জয়ী অর্থাৎ নবনির্বাচিত মেয়র হিসাবে ঘোষণা করে। পাশাপাশি মেয়র নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারকে (আদতে তিনি একজন বিজেপি নেতা) নির্বাচন প্রক্রিগায় অবৈধ হস্তক্ষেপের অপরাধে এবং আদালতকে মিথ্যে কথা বলার অপরাধে কেন সাজা দেওয়া হবে না তার কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার কাম বি‍‌জেপি নেতা মেয়র প্রার্থীদের এজেন্টকে গণনা কেন্দ্রে প্রবেশাধিকার না দিয়ে নিজেই বন্ধ ঘরে ভোট গণনা করেন। ৮টি ব্যালট বাতিল করে দিয়ে তিনি বিজেপি প্রার্থীকে জয়ী বলে ঘোষণা করে দেন। পরে সিসিটিভি’র ফুটেজে দেখা যায় রিটার্নিং অফিসার নিজেই ৮টি ব্যালটে অতিরিক্ত একটি টিক মেরে সেগুলিকে বাতিল বলে ঘোষণা করেন। অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসার জালিগাতি করে সঠিক ব্যালটে অতিরিক্ত দাগ দিয়ে বাতিল করার ব্যবস্থা করেন যাতে বিজেপি প্রার্থীকে জেতানো যায়। একেবারে আগে থেকে পরিকল্পনা করেই একাজ করা হয়েছে। আপ-কংগ্রেস প্রার্থীর পক্ষে পড়া ৮টি ব্যালট বাতিল হলে সহজেই বিজেপি প্রার্থীর পক্ষের ব্যালট সংখ্যা বেশি হবে। তখন তার অনায়াস জয় হয়ে যাবে। বাস্তবে তেমনটাই করা হয়েছে। কিন্তু সব জাল-জুয়াচুরি ধরা পড়ে গেছে সুপ্রিম কোর্টে। ব্যালটগুলি আগেই নষ্ট হয়েছিল বলে রিটার্নিং অফিসার আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। একেবারে বামাল ধরা পড়ে গেছেন।
এই বিজেপি নেতা কাম রিটার্নিং অফিসারের এমন দুঃসাহস হলো কি করে? তিনি নিশ্চিতভাবেই যে সর্বোচ্চ জায়গা থেকে নির্দেশ পেয়েছেন এবং অভয় পেয়েছেন সন্দেহ নেই। ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়।’ মোদী যখন মাথার উপর আছেন তো কুচ পরোয়া নেহি। তার কেশাগ্র স্পর্শ করে এমন বান্দা ভূভারতে নেই। অতএব উপরতলার হুকুম তামিল করে জোচ্চুরির আশ্রয় নিয়ে দলের পরাজিত প্রার্থীকে জিতিয়ে দিয়েছেন ভবিষ্যতে প্রশাসন পদন্নোতি ও দলে প্রভাব প্রতিপত্তির আশায় এবং মোদী-শাহদের গুডবুকে আসার আশায়।
জনগণের প্রকৃত সমর্থনে বি‍‌জেপি জেতে না। পদে পদে ছল-চাতুরি, কারচুপি, জোচ্চুরি করেই জয় হাসিল করে। গত লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপি মোট প্রদত্ত ভোটের এক-তৃতীয়াংশ ভোটও পায়নি। দুই তৃতীয়াংশ মানুষই আরএসএস-বিজেপি তথা মোদী-শাহদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। এই সামান্য জনসমর্থন নিয়েই সারা দেশে সবার উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছেন তারা। জনসমর্থন নেই বলেই তাদের জোচ্চুরির আশ্রয় নিতে হয়। কীভাবে কারচুপি-জোচ্চুরি করে তার হাজারো প্রকরণের মধ্যে অন্যতম একটি হাতেনাতে ধরা পড়েছে চণ্ডীগড়ে। আগামী লোকসভায় ৪০০ আসন জেতার যে আগ্রাসী ধ্বনি তোলা হচ্ছে তার পেছনেও প্রবলভাবে রয়েছে জাল-জোচ্চুরির সাজানো ছক। ন্যায়ের পথে, সততার পথে, স্বচ্ছতার পথে বি‍‌জেপি’র পক্ষে সংখ্যা গরিষ্ঠের সমর্থন আদায় সম্ভব নয়। তাই জোচ্চুরি হয়ে ওঠে তাদের প্রধান অস্ত্র। অন্যদিকে টাকার জোরে অন্য দলের জয়ী প্রতিনিধিদের কিনেও তারা ক্ষমতা দখল করে। বেশিরভাগ রাজ্যে জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে তারা ক্ষমতা দখল করেনি। মোটা টাকায় বিধায়ক কিনে সরকারে গেছে। তেমনি টাকা দিয়ে অন্য দলের নেতা কিনেও তারা ভোটে জেতার চেষ্টা করে। ক্ষমতার জন্য এরা পারে না এমন নিকৃষ্ট কাজ নেই।

Comments :0

Login to leave a comment