West Bengal Kisan Conference

কারচুপি ঠেকানো, ভোটাধিকার রক্ষা: এসআইআর-এ দুই দায়িত্বই নিচ্ছে কৃষকসভা

রাজ্য

বর্ধমান উৎসব ময়দানে প্রাদেশিক কৃষকসভার সমাবেশে বলছেন অমল হালদার। ছবি: প্রিতম ঘোষ

অরিজিৎ মণ্ডল: বর্ধমান
কারচুপিতে ভরা ভোটার তালিকা রাখতে চাইছে তৃণমূল। বিজেপি কমিশনকে দিয়ে চাইছে ভোটাধিকার কেড়ে নিতে। দু’য়ের বিপক্ষে লড়তে হবে প্রতি বুথে। 
রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়া ঘিরে এই আহ্বান জানালো বর্ধমানের কৃষক সমাবেশ। কৃষকের পক্ষে, শ্রমজীবী সব অংশের পক্ষে থাকে রাজ্যে এমন সরকার গড়ার লড়াইয়ে নামার আহ্বানও জানিয়েছে সমাবেশ।
পশ্চিবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার রাজ্য সম্মেলনের প্রকাশ্য অধিবেশন শুক্রবার হয়েছে বর্ধমান শহরের উৎসব ময়দানে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসআইআর প্রসঙ্গে এই আহ্বান জানিয়েছেন প্রাদেশিক কৃষকসভার সম্পাদক অমল হালদার এবং দেশের প্রবীণ কৃষকনেতা হান্নান মোল্লা। 
অমল হালদার বলেছেন, ‘‘এসআইআর আটকাতে চেষ্টা করছে তৃণমূল। নাম ঠিকানা নেই। এমন গ্রাম, যেখানে কেবল মুসলিম ভোটদাতারা রয়েছেন, কোনও হিন্দু থাকেন না, সেখানেও ২০ জন ভোটারের নাম রাখা হয়েছে যাদের পদবি ভট্টাচার্য। নানা ভাবে ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে তৃণমূল। বিএলএ হয়ে ভূমিকা নিতে হবে। ওরা চায় কারচুপি করতে। মৃত, ভুয়ো ভোটার বাদ দিতে হবে। সেই সঙ্গে দেখতে হবে কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ না যায়।’’
হান্নান মোল্লা এসআইআর প্রসঙ্গে বলেছেন, নির্বাচন আসছে। বিজেপি ভোট চুরি করছে। ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে। এসআইআর চলছে। দেখতে হবে কারও ভোটাধিকার যেন না যায়। এই নির্বাচন কমিশনার মোদীর নির্দেশে কাজ করছে। ভোটার তালিকা দিয়ে নাগরিকত্ব ঠিক করতে চাইছে। কমিশনকে দিয়ে নাগরিকত্বকে চ্যালেঞ্জ করানো হচ্ছে।’’ 
হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘বিহারে ৬৫ লক্ষ নাম বাদ গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রয়াস রুখতে হবে। বিএলও-দের বসিয়ে রেখে তৃণমূলের গুণ্ডারা ফর্ম বিলি করছে। বোঝা যাচ্ছে তৃণমূল এবং বিজেপি ষড়যন্ত্র করে গণতান্ত্রিক শক্তিকে খতম করতে চাইছে। গণতন্ত্রকে রক্ষা লড়াইয়েও ভূমিকা নিতে হবে কৃষক আন্দোলনকে।’’
রাজ্যের কৃষকের কঠিন অবস্থা তুলে ধরেছেন অমল হালদার। জানিয়েছেন বর্ধমানে সম্মেলন সংগঠিত করার উৎসাহজনক অভিজ্ঞতাও। 
হালদার বলেছেন, ‘‘সম্মেলনে বাড়িতে বাড়িতে সংগ্রহ করেছি। তার ওপর ভিত্তি করে টাকা উঠেছে। ডেকে ডেকে টাকা দিয়েছেন, যাইনি বলে অভিমান করেছেন। সংখ্যালঘু গ্রাম, যেখানে চার বছর আগে ঢুকতে পারতাম না, ৪৫ হাজার টাকা উঠেছে।’’ 
অমল হালদার বলেন, ‘‘মানুষ নতুন করে ভাবছেন। দেখছেন যে বিজেপি-তৃণমূলের ফারাক নেই। দুটোকেই চালায় আরএসএস। মানুষ বুঝছেন। লড়াই চাইছেন। মানুষের এই প্রত্যাশা পূরণ করার শপথ নিতে হবে সম্মেলনে। পশ্চিমবঙ্গে গ্রামেগঞ্জে আন্দোলন কিভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারি, তার রূপরেখা ঠিক করতে হবে।’’
সমাবেশ থেকেই তৃণমূল এবং বিজেপি’র সমর্থক অংশের কৃষিজীবির কাছে প্রশ্ন তোলেন হালদার। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল সমর্থক কৃষক বা বিজেপি করেন যে কৃষক, যাঁরা ধর্মীয় বিভাজনে মেতে থাকেন, আপনি কি অল্প টাকায় বীজ পান, সার পান? আপনার জন্য কোনও স্পেশাল মার্কেট আছে? না নেই।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘সব কৃষককে ভাবতে হবে। কেরালা চরম দারিদ্র মুক্ত করেছে রাজ্যকে।  আবাস যোজনার ঘর করেছে। আর এরাজ্যে যারা আবাসের টাকা পেলে ২০ হাজার টাকা দিয়ে দিতে হয়। তারপরও বাড়ি হয় না। লুটের রাজত্ব চলছে। ধান বিক্রি করবেন, সেখানে ফড়েরা বসে আছে। তৃণমূল কংগ্রেস মানে চোর, মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল হচ্ছে প্রতিদিন।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘আরেকদিকে কেন্দ্রের বিজেপি প্রতিদিন সর্বনাশ করছে। কৃষি বিপণন আইন আনছে। কর্পোরেটের হাতে যাবে সব উপকরণ। আপনি আপনার জমিতে খেতমজুর হবেন। জামালপুরে আদানি বড় বড় রাইসমিল কিনছে। ডানকুনি পর্যন্ত বিশাল বিশাল গোডাউন কিনছে। ২ কোটি ৫০ লক্ষ টন মাল রাখবে। সস্তায় পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার শস্য জমা হচ্ছে। চড়া দামে ব্র্যান্ড তৈরি করে বিক্রি হবে। আপনি কিনতে পারবেন না। আমেরিকার চাপে গোটা কৃষিক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থার বদল ঘটাতে হবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment