Editorial

ধর্মের নামে বজ্জাতির মোদী সংস্করণ

সম্পাদকীয় বিভাগ

কাজের বেলায় কাজি আর কাজ ফুরোলেই পাঁজি। নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দলের রাজনৈতিক ধান্ধাবাজি এখন এই সুরেই বাঁধা। প্রয়োজনে ব্যবহার করবে। বাবা বাছা বলে তোয়াজ করবে। প্রশংসায় ভরিয়ে দেবে। তারপর প্রয়োজন ফুরোলেই ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হাত ধুয়ে নেবে। এই দল এবং তাদের নেতাদের ন্যূনতম মানবিকতাবোধ ও কৃতজ্ঞতাবোদ বলে কিছু নেই। স্বার্থ সিদ্ধিই শেষ কথা।
নরেন্দ্র মোদীর সাধের চারধাম প্রকল্পের জন্য উত্তর কাশীর সিল্কিয়ারায় ভঙ্গুর পাহাড়ের ভেতর দিয়ে সুড়ঙ্গ বানাতে গিয়ে সুড়ঙ্গের ভেতরেই আটকে পড়েন শ্রমিকরা। সুড়ঙ্গের মুখে ধস নামায় বাইরে আনার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। দেশ বিদেশের বিষেজ্ঞদের এনে, নানান ধরনের যন্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেও উদ্ধার করা যাচ্ছিলো না আটকে পড়া শ্রমিকদের। দেশজুড়ে সরকারি ব্যর্থতায় ক্ষোভ বাড়তে থাকে। দিশাহারা অবস্থা কেন্দ্রের ও উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের। ৫৬ ইঞ্চি ছাতি চুপসে ৬ ইঞ্চি হবার জোগাড়। ১৭ দিন কেটে যাবার পর যখন শ্রমিকদের জীবিত উদ্ধারের সব আশা মিলিয়ে যেতে শুরু করে তখন ছেনি-হাতুড়ি নিয়ে হাজির হন কয়েকজন র্যা ট মাইনার। অকুতোভয়ে পাহাড় কেটে ছোট গর্ত তৈরি করে তার ভেতর দিয়ে তারা হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ে সুড়ঙ্গের ভেতরে আটক শ্রমিকদের কাছে। তারপর এক এক করে বের করে আনে শ্রমিকদের। এই র্যা ট মাইনারদেরই দলপতি ভাকিল হাসান।
সঙ্গীদের নিয়ে যিনি নিজেদের জীবন বাজি রেখে আটক শ্রমিকদের উদ্ধার করে প্রিয়জনের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সকলের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন। তাদের কল্যাণেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল নরেন্দ্র মোদীরা। সেই ঘটনার কয়েক মাস কাটতে না কাটতেই সেই র্যা ট মাইনার ভাকিল হাসানের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রতিদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উন্নয়নের নামে গরিবের মাথা গোঁজার ঠাঁই ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে তাঁর ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ স্লোগানের স্বার্থক রূপায়ণ করেছেন। হাসানের বাড়ি নাকি বেআইনিভাবে নির্মিত। তাই কোনোরকম আগাম নোটিস ছাড়া হাসানকে থানায় আটকে রেখে তার দুই কিশোরী কন্যাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বুলডোজার চালিয়ে নিমেষে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। সিল্কিয়ারার ন্যাশনাল হিরো হাসানের এখন ঠাঁই হয়েছে ধ্বংস্তূপের পাশে রাস্তার উপর ত্রিপলের তলায়। যথাযোগ্য প্রতিদান দিয়েছে মোদী সরকার।
মোদী সরকারের পরিকল্পনায় দিল্লিতে উন্ন‌য়ন করবে দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সেই উন্নয়নের জলুসে ভাকিল হাসানরা শুধু শ্রেণিগতভাবে বেমানানই নয়, ধর্মগতভাবেও অপাঙ্‌ক্তেয়। তাই সবার আগে উৎখাত হতে হলো হাসানকেই। আশপাশে একাধিক কলোনিতে দু’লক্ষাধিক মানুষের বাস। সেখানে আছে বিজেপি’র নেতা-কর্মীরাও। তাদের বাড়ি ভাঙা হয়নি। বেছে বেছে ভাঙা হয়েছে হাসানের মতো সংখ্যালঘুদের ঘর। ধর্মের নামে বজ্জাতির মোদী সংস্করণ।
হাসানের ঘর ভাঙার খবরে দেশ জুড়ে ছি ছি রব। তখন কেউ কেউ জুড়েছেন কুমিরের কান্না। অনুশোচনায় গদগদ। কিন্তু পাশে নেই কেউ। ঘর হারিয়ে পরিবার নিয়ে কোথায় কিভাবে আছে খোঁজ নেয়নি কেউ। কিন্তু মোদীরা খোঁজ না নিলেও পাশে আছে সিপিআই(এম)। বিকল্প বাসস্থানের লড়াইয়ে সামনে আছে। ঘোষণা করেছে মোদী সরকার ঘর ভাঙলেও বিকল্প ঘরের ব্যবস্থা করবে। মোদীরা গরিবের মাথার ওপর থেকে ছাদ কেড়ে নেয়, সিপিআই(এম) গড়ে দেবার লড়াই করে।

Comments :0

Login to leave a comment