MAMATA 'INDIA'

প্রলাপের আড়ালে

সম্পাদকীয় বিভাগ

মোদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে বিজেপি বিরোধী সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির জোট ইন্ডিয়াতে যে তিনি শেষ পর্যন্ত থাকবেন না, থাকা সম্ভব নয় সেটা জানাই ছিল। শুরুতে ব্যাপক শোরগোল তুলে দেখাতে চেয়েছিলেন জোটের প্রতি তিনি কতটা দায়বদ্ধ। জোট ছেড়ে পরে পালিয়ে অন্তত এইটুকু বলা যাবে তারা তো ভীষণভাবে জোট চেয়েছিলেন। অন্যরা বাগড়া দিচ্ছে বলেই জোট ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। বামপন্থীরা অবশ্য সেই গোড়া থেকেই বলে আসছে যতই নাচন-কোদন করুন আর ভড়ং দেখান যার টিকি বাঁধা আছে নাগপুরে আরএসএস’র সদরে তিনি শেষ পর্যন্ত কোনও অবস্থাতেই বিজেপি বিরোধী জোটে থাকতে পারবেন না। কোনও না কোনও অজুহাত বা ওজর-আপত্তি খাড়া করে জোট তাঁকে ছাড়তেই হবে। জোটে ঘোট পাকিয়ে তাকে এমন নাটক মঞ্চস্থ করতে হবে যাতে মনে হতে পারে তিনি বিজেপি-কে হারাতে এক পায়ে খাড়া ছিলেন কিন্তু অন্যরা সেটা হতে দেয়নি। তাই জোটের মধ্যে উপজোটের ঘোঁট পাকিয়ে বিজেপি-কে সুবিধা করে দেবার রাস্তাতেই তাঁকে ফিরতে হলো। ভাইপো সহ দলের নেতা-মন্ত্রীদের বাঁচাতে তাকে নাগপুরের হুকুম মোতাবেক চলতেই হবে। অবশ্য বাইরে সেটা প্রকাশ করা যাবে না। বাইরে দেখাতে হবে তিনি ভীষণভাবে ‍‌বিজেপি বিরোধী।
জোট ছাড়ার জমি তৈরি করার জন্য তিনি গত বেশ কিছুদিন ধরে টার্গেট করেছেন সিপিআই(এম)-কে। বিশেষ করে রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা মণিপুর থেকে আসাম হয়ে প‍‌শ্চিমবঙ্গে ঢোকার পর থেকে এক যোগে কংগ্রেস এবং সিপিআই(এম)-কে প্রধান লক্ষ্য করেছেন। প্রতিদিনই সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করছেন। মিথ্যার বেসাতি করে যাচ্ছেন। মুখে যা আসছে তাই বলে চলেছেন। রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পর থেকে তিনি সিপিআই(এম)-কে দূরবিন দিয়েও দেখতে পেতেন না। অন্তত দশ বছর মুখে লিওকোপ্লাস্ট লাগিয়ে ঘরে বসে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন যাতে তিনি নিশ্চিন্তে লুঠতরাজ চালাতে পারেন। শূন্য বলে সকাল বিকাল উপহাস-বিদ্রূপ করতেন। সেই সিপিআই(এম) কিনা এখন তাঁর মাথা ব্যথার প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। রাতের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে। সেই সিপিআই(এম)’র জন্য এখন তাকে অনর্গল প্রলাপ বকে যেতে হচ্ছে। বলছেন তিনি জোট চেয়েছিলেন সিপিআই(এম)-ই সব ভেস্তে দিয়েছে। পাশাপাশি আক্রমণ তীব্র করেছেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। রাহুল গান্ধীকে যা নয় তাই বলে বিদ্রূপ করছেন। আশ্চর্যের বিষয় এরাজ্যে রাহুলের ন্যায় যাত্রা ঢোকার পর থেকেই বিজেপি’র বিরুদ্ধে তিনি প্রায় নীরব। রাহুলের যাত্রা বানচাল করতে, মানুষ যাতে কোনোভাবেই যাত্রায় শামিল হতে না পারে তারজন্য গোটা দল ও সরকার ঝাঁপিয়ে পড়েছে। প্রতিটি পদক্ষেপে অসহযোগিতা করছে, বিরুদ্ধাচরণ করছে। এতদ্‌সত্ত্বেও যাত্রায় বিপুল জনসমাগমও উৎসাহ উদ্দীপনার প্রাবল্যে রীতিমতো মাথায় হাত পড়ার অবস্থা। অতঃপর সিপিআই(এম) রাহুলের যাত্রায় যোগ দেওয়ায় এবং যাত্রা আশাতীত সফর হয়ে ওঠায় নেত্রীর পক্ষে আর মাথা ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। তার যত রোষ গিয়ে পড়ে সিপিআই(এম)’র ওপর। বস্তুত দূরবিনে অদৃশ্য এবং শূন্য সিপিআই(এম)-ই এখন তার দুঃশ্চিন্তার প্রধান কারণ। এরপর কংগ্রেস-সিপিআই(এম) জোট হলে তার হাল যে শোচনীয় হয়ে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই।
এই অবস্থায় তিনি প্রতিদিন সিপিআই(এম)-কংগ্রেসকে তুমুল আক্রমণ করে বিজেপি-কে বার্তা পাঠাচ্ছেন তিনি ঠিক জায়গাতেই আছেন। বিজেপি’র উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। ভোটের সময় বিজেমূলে বোঝাপড়া যথারীতি হয়ে যাবে বাইরে সব আসনে সকলে প্রার্থী দিলেও। অর্থাৎ জোটের বিরুদ্ধে গিয়ে মোদী-শাহদের প্রত্যাশা পূরণের রাস্তা প্রশস্ত করাই তার রাজনৈতিক জীবনের ভবিতব্য। আরএসএস তার দুর্গাকে এভাবে গড়েপিঠে দম দেওয়া পুতুলের মতো ময়দানে ছেড়ে দিয়েছে। অতএব গণতন্ত্রের শত্রু, মানুষে মানুষে বিদ্বেষ-বিভাজন সৃষ্টিকারী স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ত বিজেপি-কে হারাতে হলে একযোগে তৃণমূল-বিজেপি উভয়কেই হারাতে হবে। বাংলা তারই প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment