সরকারি খাস জমির পাট্টা পেলেও ১০ বছরেও হাতে সেই জমি তুলে দেয়নি প্রসাশন। হঠাৎ করে সেই জমি দখল নিতে এলাকায় হাজির হয় জমি হাঙরের দল। জনরোষের চেহেরায় রুখে দিলো জিতুশোল গ্রামের মানুষ। এমন ঘটনায় এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। ঝাড়গ্রাম জেলার শালবনী গ্রাম পঞ্চায়েতের জিতুশোল এলাকায়।
স্থানীয়রা বলেন, "২০১৫ সালে জমির পাট্টা তুলে দেওয়া হলেও আজ অবধি সেই জমি কোনও পরিবারকে প্রশাসন তুলে দেয়নি। হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার সাত সকালে সেই জমি রশ্মি মেটালিক সংস্থার হাতে তুলে দিতে জমি হাঙরের দল দখল করতে হাজির হয়। লরিতে করে পীলার তৈরীর লোহার খাঁচা, সিমেন্ট, বালি, জলের গাড়ি এবং ঢালাই করার মেসিন নিয়ে হাজির হয়। গ্রামের মানুষের নজরে পড়লে জিজ্ঞেস করলে জমি হাঙরের দল বলে, এটা রশ্মি মেটালিক কারখানার জায়গা। অথচ ভূমি দপ্তরের মন্ত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ২০১৫ সালে ঘটা করে 'নিজ ভূমি নিজ গৃহ' প্রকল্পে জিতুশোল সহ পাশের গ্রাম মিলিয়ে ১৪১ টি পরিবারের প্রত্যেককে তিন কাঠা করে জমির পাট্টা তুলে দেন। আজ অবধি ঘরের বরাদ্দ টাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়া যেমন হয়নি, তেমনই প্রসাশনকে বারে বারে জানিয়েও তাঁদের নামের পাট্টা মতো তিন কাঠা করে জায়গাও দেওয়া হয়নি। গ্রামের মানুষের প্রশ্ন তাহলে কী তাঁদের নামে খাস জমির পাট্টা বিলি করা হয়েছিল। আজ ১০ বছর পর রশ্মি মেটালিক সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। সদ্য জেলা শাসক স্থানান্তরের তিন দিনের মাথায় নতুন জেলা শাসক আসার আগেই জমি হাঙর দলের এমন পদক্ষেপ। ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির আওতাধনী জিতুশোল গ্রামে এমন ঘটনা ঘটলেও তৃণমূল কংগ্রেস নীরব।
পাট্টা পাওয়া গ্রামবাসীরা বলেন, "নিজ ভূমি নিজ গৃহ প্রকল্পে আমাদের নামে পাট্টা বিলি হলেও আজ অবধি সেই জমি ও ঘর পায়নি। এই কারনে
আবাস যোজনা থেকে বঞ্চিত। এখন ভগ্ন ঘরে ত্রিপলের ছাওনি দিয়ে পরিবার নিয়ে বাস করি। এখানে সরকারের খাস জমি পাশাপাশি রয়েছে বিকাশভারতী ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নামে কিছু জায়গা।"
প্রায় ২০ বিঘে সেই জমি আচমকা ঘিরে নেওয়ার কাজ চালাচ্ছিল বাইরে থেকে আসা লোকজন। খড়্গপুর এর চৌরঙ্গী থেকে দক্ষিনে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ৮ কিমি ও পশ্চিমে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক জুড়ে ১২ কিমি এলাকা জুড়ে রশ্মি মেটালিক এই ভাবে শত শত বিঘা জমি দখল নিয়ে কাচা লোহার কারখানা গড়ে পরিবেশ দূষন করেছে। ঝাড়গ্রাম জেলার লোধাশুলিতে রশ্মি মেটালিক সংস্থার কারখানার দুইটি ইউনিট রয়েছে। আরও কারখানা বিস্তারে এই ভাবে সরকারী খাস জমি, পাট্টা জমিও দখল করতে মরিয়া। এর পিছনে ভূমি দপ্তর সহ প্রসাশন জড়িত থাকার অভিযোগ। আরও অভিযোগ এই কোম্পানীর বিরাট অংশের শেয়ার রয়েছে অভিষেক ব্যানার্জি। এর আগেও এই কোম্পানীর একটি ব্যাঙ্ক একাউন্টের কোটি কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছিলো ইডি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ভূমি দপ্তরের এমন কার্যকলাপ হলেও প্রসাশন নির্বিকার। ঝাড়গ্রামের জিতুশোলে যেমন ১৪১ টি পরিবার আজ ১০ বছর ধরে নিজ ভূমি নিজ গৃহ থেকে বঞ্চিত, তেমনি খেমাশুলিতে ৭৮ টি পরিবারও আজ ১০ বছর নিজ ভূমি নিজ গৃহ থেকে বঞ্চিত। এদের নামে বরাদ্দ হলেও জমি সহ ঘর কোনো কিছুই হাতে পায়নি। জিতুশোল গ্রামের মানুষ জনরোষের চেহেরায় প্রতিরোধ সহ প্রতিবাদে সামিল হওয়ায় জমি হাঙরের দল এলাকা ছেড়ে জিনিস পত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। এখন জেলা প্রসাশন কী পদক্ষেপ নেয় সেই দিকে তাকিয়ে গ্রামের মানুষ।
Comments :0