magician of politics

রাজনীতির জাদুকর

সম্পাদকীয় বিভাগ

সেই পি সি সরকার থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দেশ-বিদেশের জাদুকররা কত না বিস্ময়কর খেলা দেখিয়ে থাকেন। সেসব অভাবনীয়, অকল্পনীয় ঘটনাগুলি চোখের সামনে দেখে সাধারণ দর্শকরা ভেবে কুলকিনারা খুঁজে পান না এসব কি করে সম্ভব! মানুষকে কেটে দু’টুকরো করে আবার জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। খালি বাক্স থেকে বার করা হচ্ছে একটার পর একটা পায়রা। চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য করে দেওয়া হচ্ছে গোটা একটা গাড়ি। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এইসব ঘটনাগুলি যতই সত্য বলে মনে হোক না কেন আসলে এসব কোনও কিছুই ঘটে না। জাদুকরের কারসাজিতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে দর্শকদের সামনে সেগুলি সত্য বলেই মনে হয়। জাদুকরের দক্ষতা সেখানেই। এইসব সকল জাদুকরদের অনেকেই পরবর্তীকালে সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়েছেন তারা যদি একটা ৫০০ টাকার নোটকে ছিঁড়ে বা পুড়িয়ে পাঁচটা একইরকম নোট বানাতে পারতেন তাহলে জাদু দেখিয়ে কষ্ট করে রোজগার করতে হতো না।
আজকাল রাজনীতির রঙ্গমঞ্চেও এমন জাদুকরদের উদয় হচ্ছে। জাদুকরদের কথার মারপ্যাঁচ, ভাষার ভঙ্গি, সাজের বহর, অভিনয় পটুত্বকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিকরা জনগণকে সম্মোহিত করতে চেষ্টার কসুর করছেন না। রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে বিরাজমান রাজনীতিক জাদুকরদের সেরার সেরা স্থানটি দখল করে আছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথা বলার ভঙ্গি, শব্দচয়ন, বিষয় নির্বাচনের দক্ষতা শ্রোতা-দর্শকদের এতটাই মগ্ন করে দেয় যে তারা ঘুণাক্ষরে বুঝে উঠতে পারেন না লোকটি অনর্গল মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছেন অথবা যা বলছেন বাস্তবে কোনোটাই হবার নয়। তথাপি একটা বড় অংশের মানুষ মোহগ্রস্ত হয়ে অবাস্তব-অসত্যকেই সত্য বলে ভেবে না। যেমন একটা লোক বছরে দু’কোটি চাকরি দেবে বলে কথা দিয়েছিল দশ বছর আগে। মানুষ বিশ্বাস করেছিলেন। ভেবে দেখেননি এটা আ‍‌দৌ সম্ভব কি না। শেষ পর্যন্ত দু’কোটি দূরের কথা বছরে দু’লক্ষ চাকরিও হয়নি। সব ভারতীয়র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে উদ্ধার করা কালো টাকা থেকে ১৫ লক্ষ করে পাঠানোর কথা বলেছিলেন। এক পয়সাও আসেনি। উলটে গত দশ বছরে আরও হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে ‍পাচার হয়ে গেছে। মার্কিন ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় মূল্য ৪০ টাকা করার গ্যারান্টি দিয়ে এখন ৮৩ টাকায় পৌঁছে দিয়েছেন। কেন্দ্রী‌য় ঋণের পরিমাণ ৫৫ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭২ কোটি টাকা করেছেন। রান্নার গ্যাস ৪১০ টাকা থেকে ৯২৯ টাকা হয়েছে।
এইভাবে মোদী জাদুকর গত দশ বছরে ১৪২টি প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। তার অনেকগুলিই বাস্তবের আলো পায়নি। কিছু শুরু হয়েই হারিয়ে গেছে। কিছু মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। একটি প্রকল্পও নেই যেখানে মোদী দাবি করতে পারবেন তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি বা গ্যারান্টি রক্ষিত হয়েছে। কোথাও ঘোষিত লক্ষ্য পূরণের নিদর্শন নেই। স্বপ্ন ফে‍রির জাদুকর প্রতিশ্রুতি বা গ্যারান্টি দিতে যতটা দক্ষ ঠিক ততটাই ব্যর্থ কাজে। তিনি স্বপ্ন দেখানোর প্রধানমন্ত্রী। কাজের প্রধানমন্ত্রী নন। কৃষকের আয় দ্বিগুণ করতে পারেননি, বেকারকে কাজ দিতে পারেননি, জিনিসের দাম কমাতে পারেননি, মানুষের আয় বাড়াতে পারেননি। অথচ অমৃত মহোৎসব করছেন, অমৃতকালের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। পাঁচ ট্রিলিয়নের গল্প শোনাচ্ছেন। তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির শিরোপা বানা‍চ্ছেন। উন্নত ভারতের রুপকথার গল্প বলছেন। রাজনীতিক না হয়ে জাদুকর হলেই ভারতবাসীর মঙ্গল হতো।
 

Comments :0

Login to leave a comment