ELECTORAL BOND MODI

আতঙ্কের ফল

সম্পাদকীয় বিভাগ

কর্পোরেট বন্ধুদের কাছ থেকে দলের তহবিলের জন্য বস্তা বস্তা টাকা নিতে মোদী সরকার যে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল এবং গত ছ’বছর ধরে সেই টাকায় প্রচারের ঝড় তুলে জয়ের রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছিল সেই বন্ড ইতিমধ্যে দে‍‌শের সর্বোচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অস্বচ্ছ ও গোপনভাবে কর্পোরেট চাঁদা তোলা অসাংবিধানিক। তাই নতুন করে এই বন্ড বিক্রি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত বন্ড বিক্রি হয়েছে, তার মোট অর্থমূল্য কত, কে বা কারা সেই বন্ডগুলি কিনেছে এবং কোন রাজনৈতিক দলকে কোন কর্পোরেট কত টাকা দিয়েছে তার সম্পূর্ণ হিসাব ৬ মার্চের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেবার নির্দেশও দিয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে। তিন সপ্তাহের মধ্যে যে রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনে জমা দেবার কথা সেটা জমা তো দেয়ইনি উলটে সুপ্রিম কোর্টের কাছে ১১৬ দিন অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছে নির্ধারিত দিনের দু’দিন আ‍‌গে। অজুহাত খাড়া করেছে বেশ কয়েক হাজার বন্ডের সব তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরি করতে অনেক সময় লাগবে। স্টেট ব্যাঙ্কের এমন যুক্তি শুধু হাস্যকর নয়, বিরক্তিকরও। নরেন্দ্র মোদীর বহু প্রচারিত ডিজিটাল ভারতে দে‍‌শের সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্ক নাকি ২২ হাজারের মতো বন্ডের হিসাব বানাতে তিন মাসেরও বে‍‌শি সময় লাগবে। বোঝা যাচ্ছে না স্টেট ব্যাঙ্কে কি অষ্টম শ্রেণি পাশ করার কাজ করেন যে সাধারণ যোগ-বিয়োগ করতে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এমন অজুহাত খাড়া করে শুধু অসত্যের বেসাতি করেনি একই সঙ্গে ব্যাঙ্ক কর্মীদের অপমান ও অসম্মান করেছে। যে অত্যুন্নত সফটওয়ারের মাধ্যমে ব্যাঙ্কের যাবতীয় কাজ চলে সেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লেনদেন হলেও সঙ্গে সঙ্গে সারাদিনের যাবতীয় হিসাব নিকেশ তৈরি হয়ে যায়। তারজন্য ঘণ্টা ঘণ্টা ধরে বিস্তর কাঠখড় পোড়ানোর দরকার হয় না। অথচ গুটিকতক বন্ডের হিসাব করতে নাকি কর্মীদের চার মাস সময় লেগে যাবে।
এমন এক উদ্ভট অজুহাত দেবার পর সু‍‌প্রিম কোর্টের তরফে কোনও শব্দ শোনা যায়নি। ফলে শেষ তারিখ পেরিয়ে গেছে এবং সেটা আদালত অবমাননা হিসাবে গণ্য হবার যোগ্য। রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেটব্যাঙ্কের ঘাড়ে পাঁচটা মাথা নেই যে তারা সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অবজ্ঞা করার দুঃসাহস দেখাবে। এ‍‌ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে ব্যাঙ্ককে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে রিপোর্ট প্রকাশ হলে দেশবাসীর সামনে তথ্য উন্মোচিত হবে তাতে ‍ স্টেট ব্যাঙ্কের কিছু যাবে আসবে না। ধরা পড়বে মোদী সরকার। ধরা পড়বে মোদীর ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট ও ধনকুবের বন্ধুরা কে কত হাজার কোটি টাকা মোদীর প্রচারের জন্য মোদীর দলকে দিয়েছে। এবং এই চর্চাও জোর কদমে শুরু হয়ে যাবে মোদীর দলকে বান্ডিল বান্ডিল টাকা দিয়ে মোদীর সরকারের কি কি সুবিধা আদায় করেছেন। সবটা প্রকাশ্যে এলে বামাল ধরা পড়বেন মোদী-শাহরা। ঠিক ভোটের আগে এমন তথ্য ভোটারদের কাছে চলে এলে মোদীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা তৈরি হতে পারে। ৩৭০ আসনের জেতার যে হামবড়া ভাব দেখাচ্ছেন তখন সেটা ২০০ আসন হওয়াও অনি‍‌শ্চিত হয়ে যাবে। অতএব যেভাবেই হোক ভোটের আগে বন্ডের তথ্য প্রকাশ আটকাতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment