মণ্ডা মিঠাই
ফুটবলের রূপকথায় মোহনবাগান
সৌরভ দত্ত
নতুনপাতা
আমাদের এখানে একটা বসার পাকাপোক্ত পাড়া হয়েছে।পাড়াটার নাম মোহনবাগান পাড়া। বিকেলে সেখানে বসে থাকে–বয়স্করা। গল্পে মশগুল হয়।তিমির ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্ত।তার গেঞ্জিতে ও সি আর সেভেন লেখা আছে।কিন্তু তিমিরের সেজদাদু মোহনবাগানের অন্ধ ভক্ত। নিজেও দারুন মিডফিল্ডার ছিলেন।কোহিনুর মাঠে নগেন্দ্রনাথ প্রসাদসর্বাধিকারীর খেলা দেখেছেন।যাকে বলা হত ভারতীয় ফুটবলের পিতা।তখন বর্ষার বিকেলে সারা মাঠজুড়ে ফুটবলের দাপাদাপি। ক্লাবগুলো ছিল ফুটবলের প্রাণকেন্দ্র।নিতাই মণ্ডল ছিল পাঁড়াগার সবচেয়ে পুরনো ফুটবলার।ধন্যি মেয়ে সিনেমার শুটিং হয়েছিল গোহালপোতা মাঠে।আগে সেসময় এলাকার মাঠগুলোতে ফুটবলের কি চর্চাটাই না ছিল। চায়ের টেবিলে ফুটবলের কথা উঠলেই জমে যেত মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল বিতর্ক । পাশাপাশি ময়দানে কত ছোটো বড়ো ক্লাব। ক্লাবের জন্য তখন এত দান খয়রাতি ছিল না।পাঁতিহালের স্বরস্বতী স্পোর্টিং মাঠে ভালো গোলকিপিং করতেন স্কুলের মাস্টারমশাই প্রাণকৃষ্ণ বাগ ওরফে পেনো স্যার।সেজদাদুর সজোরে ভলি রুখতে গিয়ে একবার হাড় ভেঙেছিল প্রাণ কৃষ্ণ স্যারের।নিতাই মণ্ডল মারা গেছেন।কিন্তু মাজু একাদশের সেই আদি ফুটবলারের বুট,পায়ের গার্ড তোলা আছে তাঁর ঘরের মাঠগুদুমে।তখনকার আমতা স্পোর্টিং কিংবা সোনালী শিবির মাঠে ফুটবল হলেই ভিড় জমত। স্কুল গুলোতে বর্ষার আগমনে ইন্টার স্কুল ফুটবল খেলা হত।মাজু একাদশের মাঠে চলত থানা লিগের ম্যাচ চলত।সেবার সাব্বির ব্যাকভলিতে এক দুর্দান্ত গোল করেছিল।যা আজও তিমিরের চোখে ভাসে।হাঁটাল বিশালক্ষ্মী বরাবর দুর্দান্ত ফুটবল খেলত। ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশনের ফুটবলাররা কাঁপাত জগৎবল্লভপুরের মাঠগুলো।এখন সেসব লাটে উঠেছে।পরিবর্তে এসেছে জগঝম্প মুখরিত–‘খেলা হবে দিবস’।তিমির মোহনবাগানের জোস ব্যারাটোর খেলা দেখেছে, সুব্রত ভট্টাচার্য কে কোচ হিসেবে দারুণ লাগত। সুব্রত ভট্টাচার্য তাঁর ফুটবল জীবনের এক অসামান্য আত্মজীবনী লিখে গেছেন মোহনবাগানের হয়ে কি ফুটবলটাই না খেলেছিল একসময়। স্বাধীনতার আগে বাঙালি ফুটবলারদের পায়ের বুটও জুটত না।মাঝমাঠে খেলা হত খালি পায়েই। ব্রিটিশ বাহিনীর এগারো জনের সঙ্গে খালি পায়ের বাঙালির লড়াই দেখেছিল দেশবাসী। উদ্বুদ্ধ হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে।আজ থেকে একশো তেরো বছর আগে ২৯ জুলাই ১৯১১ সালের এক দিনে হেস্টিংসের মাথা থেকে ইংরেজদের পতাকা নামিয়ে পতপত করে উড়েছিল ।আই এফ এ শিল্ডে প্রথমার্ধে এক গোলে পিছিয়ে পড়েও ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে ২-১গোলে হারিয়েছিল মোহনবাগান। দাপুটে ফুটবল খেলে ব্রিটিশ শত্রুদের হারিয়ে সেদিন শিবদাস,অভিলাষরা এক রূপকথা লিখেছিল সারা মাঠজুড়ে।
Comments :0