মণ্ডা মিঠাই
এক পথিকের কাহিনী : প্রথম ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
কৃশানু ভট্টাচার্য
নতুনপাতা
৫৩ বছরের জীবনে অবিভক্ত ভারতের এই প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে মাটির তলায় লুকিয়ে থাকা ইতিহাসের অনুসন্ধানে এই উপমহাদেশের যে মানুষটি প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন তিনি পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। জন্মেছিলেন বাংলায়। প্রাথমিক শিক্ষার পরে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন লখনৌ। কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবার জন্য গিয়েছিলেন মুম্বাই। কর্মজীবনের গোড়ায় লখনৌ তে কাজ শুরু করলেও মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখন্ডে এবং উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি ললিতপুর মোরাদাবাদ আগ্রা মথুরা এলাকায় ব্রিটিশ উচ্চ পদাধিকারীদের রোষচক্ষুকে উপেক্ষা করে কাজ করেছেন।
কিছুকাল কলকাতায় জাদুঘরের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। এরপর পুনরায় চলে যান উত্তর ভারতে। কাজের সূত্রে বিহার এবং উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চলে তাকে যেতে হয় । উদ্ধার করেন পাটলী পুত্রের ভগ্নাবশেষ ।এরপর উপর ওয়ালাদের নির্দেশে তাকে যেতে হয় নেপালের তরাই অঞ্চল। সেখানেই আবিষ্কার করেন গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনী উদ্যানের। এটা ১৮৯৯ এর গোড়ার কথা। এর পরের ধাপে উত্তরপ্রদেশের মথুরা নিকটে জৈনতীর্থ স্থান কংকালী কিলার অনুসন্ধানের কাজ করেন । জীবনের শেষ পর্বে তিনি উড়িষ্যায় কোনারক সূর্য মন্দিরের খননকার্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ৫৩ বছরের কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি ১৯০৩ এর ৪ আগস্ট। প্রথম ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের এ হলো সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত।
কিন্তু যে কথা বলা হলো না তাহলো এই, কোন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে সেই যুগে পূর্ণ চন্দ্রদের মতো উদ্যমী পুরুষদেরকে কাজ করতে হয়? ব্রিটিশ প্রশাসনের একটা অংশ
এই উদ্যোগী ভারতীয়র পাশে থাকলেও একটি অংশ চিরকালই মনে করেছে সৃজন এর জগতে সারস্বত সাধনায় শ্বেতাঙ্গদের প্রাধান্যের কথা। আর তাই বারে বারে সেই শ্রেণীর শ্বেতাঙ্গদের হাতে অপমানিত হয়েছেন পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন পূর্ণচন্দ্র পিছনে ছিলেন তার শ্বেতাঙ্গ উপরওয়ালা। সেই উপরওয়ালা ডক্টর ফুয়েরার কপিলাবস্তু নিয়ে যে কাল্পনিক প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করেছিলেন পূর্ণচন্দ্রের প্রায় ১৫ বছর বাদে অনুসন্ধানকার যে তা ধরা পড়ে গিয়েছে। সে কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ। পূর্ণ চন্দ্রের অনুসন্ধানের প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম একজন ভারতীয় লিখিত প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের প্রতিবেদন।
পূর্ণচন্দ্রের জন্ম পানিহাটিতে। লেখাপড়া করেছিলেন সোদপুর হাই স্কুল। কর্মজীবনের বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকলেও অসুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছিলেন পানিহাটিতে। তৈরি করেছিলেন নিজের বসত বাটি। নাম দিয়েছিলেন কপিলাবস্তু ভিলা। ১৯০৩ এর ৪ আগস্ট পানিহাটিতেই তার প্রয়াণ।
২০০৩ সালে পানিহাটি পৌরসভার পক্ষ থেকে তাঁর স্মৃতি রক্ষা করবার জন্য স্থাপিত হয়েছে ফলক এবং তাঁর আবক্ষ মূর্তি। আজো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে যারা চর্চা করেন নেপালের তরাই অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে যাদের গবেষণা তাদের সকলের কাজেই পূর্ণচন্দ্র তাঁর গবেষণার নিপুণতার কারণে বারেবারে উল্লেখিত হন।
Comments :0