নতুনপাতা : মণ্ডা মিঠাই
হাতিদের পৃথিবী–জঙ্গলের ঘর চাই ,চাই ফলের বাগান
সৌরভ দত্ত
মানুষের পৃথিবীটা একরকম, বন্যপ্রাণীদের বাসযোগ্য পৃথিবীটা ঠিক কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে পরিবেশবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।প্রায়শই পথ দুর্ঘটনায় একেরপর রাজ্য প্রাণী মেছো বিড়াল, ভাম বিড়াল,খট্টাশ,বেঁজি,গোসাপ, বনবিড়াল প্রভৃতি একাধিক বন্যপ্রাণীর মৃত্যু বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন (১৯৭২) এর দিকে প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দেয়।দাবি ওঠে আলাদা সংরক্ষণ ক্ষেত্র বা বিচরণ ভূমি গড়ে তোলার। সচেতনতা সত্ত্বেও সংবাদপত্রের পাতায় চোখে পড়ে মাঝেমধ্যেই ইচ্ছাকৃত নিরীহ প্রাণী হত্যা। কখনো তিলকাছিম বা অলিভ রিডলে খাওয়ায় প্রচেষ্টা,ভাম,বাঘরোল মেরে খাওয়া হামেশাই ঘটতে থাকে। সম্প্রতি হাতির তান্ডব থেকে বাঁচতে ঝাড়গ্রামে হুলা পার্টির দ্বারা জ্বলন্ত শলাকা বিদ্ধ হয়ে প্রসূতি হস্তির নৃশংস হত্যালীলা আমাদের মধ্যযুগীয় বর্বরতার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।২০১৮ যেখানে ফায়ার বলের সাহায্যে হাতি মারা চলবে না বলে এক জনস্বার্থ মামলার রায় দেওয়া হয়েছে। সেখানে এই কদর্য ঘটনা অসহনীয়। কলকারখানার দূষণ, বিয়ের পর বিঘে জঙ্গল সাফ হাতি চলাচল এর পথের পরিবর্তন প্রভৃতি একাধিক কারণ হাতিকে লোকালয়ে প্রবেশ করতে বাধ্য করছে। ঝাড়গ্রামে হাতির সংখ্যা নাকি কয়েক বছরে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।উপযুক্ত খাদ্যের সংস্থান না থাকা, ফলের গাছ না থাকা,পুকুর জলাশয় না থাকার জন্য হাতির দল চাষাবাদের ক্ষতি করছে ও নাগরিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে। বর্তমানে এলিফ্যান্ট রিজার্ভ ফরেস্টের ধারণাটিও ঠিক ফলপ্রসূ হচ্ছে না।কিন্তু শলাকা বিদ্ধ গর্ভিনী হাতির মৃত্যুর পর বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের পক্ষ থেকে জাস্টিস এর দাবি উঠেছে। শহরের রাজপথের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাতেও মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত হয়েছে।অন্ত:সত্তা হস্তিনীকে যেভাবে আগুনে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও মঞ্চের তরফে। বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় অসহায় ভাবে হাতিরদল বিপথে মানুষের পরিবেশে চলে আসছে।এরকম অবস্থা থেকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবেশগত সুষ্ঠ পরিকল্পনার দরকার জঙ্গলমহলে হাতি সমস্যার সমাধানের জন্য। বনদপ্তরের তরফে আরো সদর্থক ও উদ্যমী প্রয়াস দরকার।না হলে আধুনান্তিক মানুষের হিংস্রতায় লোমশ ম্যামথের মতো হস্তিকূল ও একটি অস্তিত্বের সংগ্রামে বিপন্ন হতে হতে অচিরেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে।
Comments :0