Dengue Death in West Bengal

রাজ্যে দুদিনে ডেঙ্গুতে মৃত ৪

রাজ্য জেলা

dengue death in west bengal


যত দিন যাচ্ছে রাজ্যে তত ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে ডেঙ্গু সংক্রমণ। গত দুইদিনে ডেঙ্গুতে আরও ৪ টি মৃত্যুর খবর মিলেছে রাজ্যে। বৃহস্পতিবার রাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে সল্টলেকের বাসিন্দা পিনাক সরকার(৬৬)’র। জ্বর ও ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি বাইপাসের ধারে একাটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকলে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রাত সোয়া দশটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ডেঙ্গুর কথা উল্লেখ রয়েছে। 
এদিন কলকাতায় আরো এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতের নাম কল্পনা দত্ত(৭৮)। কলকাতা পৌরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের রিজেন্ট এস্টেটের আই ব্লকের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। পরিবার সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, গত শুক্রবার তাঁর জ্বর হয়। পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গু পজেটিভ পাওয়া যায়। রবিবার তাঁকে আরএন টেগোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। 
ডেঙ্গুতে গত দুদিনে পশ্চিম মেদিনীপুরে ২জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তর সংখ্যা ইতিমধ্যেই হাজার ছাড়িয়েছে। মেদিনীপুর মেডিকেলে বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা রুনিতা বিবি (৩৭) নামে এক মহিলার। ঘাটাল হাসপাতালে মৃত্যু হয় গড়বেতার বাসিন্দা সাবিনা বিবি নামে এক মহিলার। এই নিয়ে জেলায় সরকারি ভাবে ৪ জনের মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। বাকি ২জন মেদিনীপুর শহরেরই বাসিন্দা। চন্দ্রকোনায় এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে। তাঁকে নিয়ে জেলায় এখনো পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা যে বাড়ছে সে কথা স্বীকার করেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডক্টর সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী। গ্রামে গঞ্জে প্রচার চলছে জল জমতে দেবেন না। অথচ স্বাস্থ্য দপ্তরের ঘরেই জমা জল। ঘাটাল হাসপাতাল চত্বর হয়ে উঠেছে মশার আঁতুড়ঘর। যত্রতত্র জমে রয়েছে জল, ভাঙা নালা নর্দমায় কিলবিল করছে মশার লার্ভা। স্বাস্থ্য পরিসেবা নিতে এসে ভয় পাচ্ছেন রোগী ও পরিজনেরা। এরই মধ্যেই প্রতিদিনই চোখ রাঙিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সংখ্যা।

শাঁড়াপুল হাসপাতাল চত্বরে।


সরকারিভাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না। ডেঙ্গু হলেও বেশিরভাগ সময়ে তা গোপন করে শুধু জ্বর বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে বক্তব্য বহু ভুক্তভোগী পরিবারের। বেসরকারি সূত্র মতে চলতি বছরে এখনো পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ৪৪ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। জানুয়ারি মাস থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের শেষে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে। 
রাজ্যে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং সহ রাজ্যের প্রায় সমস্ত জেলার বাসিন্দারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। উত্তর ২৪পরগনার স্বরূপনগর ব্লক জুড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। যদিও ডেঙ্গুর আতুরঘর হয়ে রয়েছে ব্লকের শাঁড়াপুল গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বর। অভিযোগ, উদাসীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে ব্লক প্রশাসন। স্বরূপনগর ব্লকে ডেঙ্গু যথেষ্ট  উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে দিনদিন।  শুক্রবার পাওয়া জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এই মুহূর্তে স্বরূপনগরে ৮৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। শাঁড়াপুল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে বেশ কয়েকজন। আউটডোরে জ্বরে আক্রান্ত শ'য়ে শ'য়ে রোগী ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে ভিড় করছেন প্রতিদিন। আর ঠিক সেই সময় শাঁড়াপুল হাসপাতাল চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় জমে রয়েছে জল, নোংরা আবর্জনায় ড্রেনগুলি বন্ধ হয়ে রয়েছে। চতুর্দিকে নোংরা আবর্জনা, ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে হাসপাতালে চত্বর। সেখানে তৈরি হচ্ছে মশা। এই বিষয়ে এলাকার বাসিন্দা বলরাম দাস, সৈকত মুখার্জিদের দাবি হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার করা হোক এবং ব্লক অফিস এবং স্বাস্থ্য দপ্তর একটু নজর দিক হাসপাতালের দিকে। শীঘ্রই এই সমস্যা থেকে সমাধান চায় এলাকার মানুষ।

 


ডেঙ্গুর প্রকোপ স্বরূপনগরে বাড়ছে এটা স্বীকার করলেন বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবিউল ইসলাম গাজী। পাশাপাশি তিনি এটাও বলেন ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমস্ত রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।  হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: তন্ময় সরকার জানান, প্রতিদিন শ'য়ে শ'য়ে জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখাতে আসছেন এবং হাসপাতালে এই মুহূর্তে বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। স্বরূপনগরের বিডিও অজয় কুমার দণ্ডপাত তিনি ক্যামেরার সামনে কিছু না বললেও ফোনে জানান, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সাথে কথা বলে শীঘ্রই সমস্যার সমাধান করা হবে। এলাকার মানুষের দাবি অতি শীঘ্রই হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হোক। ডেঙ্গু থেকে মুক্ত হোক স্বরূপনগরবাসী।

 

শাঁড়াপুল হাসপাতাল চত্বরে নোংরা আবর্জনার স্তুপ।


শুধু উত্তর ২৪ পরগনা নয় এই মরশুমে ডেঙ্গু উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কালনায়ও। বাড়িতে জ্বরের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ইতিমধ্যেই কালনা পৌরসভায় দুজন যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জ্বর হলেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে রোগীকে। তার জ্বরের চিকিৎসা শুরু করার পাশাপাশি রক্তের ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া পরীক্ষা হয়ে যাবে সঙ্গে সঙ্গে। তাই জ্বরে আক্রান্ত রোগীর আর জীবন সংশয় থাকবে না। কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার ডাঃ চন্দ্রশেখর মাইতি এদিন বলেছেন, ১৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি আছেন হাসপাতালে। এই মরশুমের এটাই সর্বোচ্চ। তিনি আরো বলেন, এই মরশুমে  হাসপাতালে মোট ৩৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৪৯০ জন। তিনি আশঙ্কা করছেন এখন ডেঙ্গুর অনুকূল আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও আরো বাড়তে পারে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন জ্বর হলেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার। তবে সম্ভব না হলে বাড়িতে জ্বরের চিকিৎসার পাশাপাশি সঙ্গে সঙ্গে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর পরীক্ষাটাও করে নিতে হবে। 


ক্যানিং মহকুমার প্রতিটি ঘরেই মানুষ জ্বরে ভুগছেন। সেই সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। এদিন পাওয়া জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এই মুহূর্তে ক্যানিং মহকুমায় প্রায় দেড়শো জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। গত সপ্তাহে এই সংখ্যাটি ছিল ১২১ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বাসন্তী ও ক্যানিং ২ ব্লকেও।

Comments :0

Login to leave a comment