STORY — SOURISH MISHRA | KAGAJER NOUKA — NATUNPATA | SUNDAY 11 AUGHST 2024

গল্প — সৌরীশ মিশ্র | কাগজের নৌকা — নতুনপাতা | রবিবার ১১ আগস্ট ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  KAGAJER NOUKA  NATUNPATA  SUNDAY 11 AUGHST 2024

গল্প

কাগজের নৌকা

সৌরীশ মিশ্র

 নতুনপাতা


"জুলি, কি করছিস এখানে?"
বসার ঘরে ঢুকেই সামনে মেয়েকে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে কথাগুলো বললেন জুলির মা বিশাখাদেবী।
"মা দ্যাখো, কেমন বোট বানিয়েছি!"
বিশাখাদেবী দেখেন, তাঁর ছোট্ট মেয়ে কাগজের নৌকা বানিয়েছে কয়েকটা।
"ভাল হয়নি?" ফের বলে জুলি।
একটা নৌকা হাতে তুলে নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে বিশাখাদেবী বললেন, "খুব সুন্দর হয়েছে। বা-বা, আবার নৌকাগুলোর গায়ে স্কেচ পেন দিয়ে ইন্ডিয়ান ফ্ল্যাগ-ও এঁকে দিয়েছিস দেখছি। ভেরি নাইস।"
"ফিফটিনট্থ আগস্ট, আমাদের কান্ট্রির ইনডিপেনডেন্স ডে তো ক'দিন বাদেই, তাই..."
"খুব ভাল করেছিস। তা, তুই শিখলি কার কাছে এই কাগজের নৌকা বানানো?"
"বাবা ডিনারের পর শেখালো তো কাল।"
"ও।"
"বাবা আজ অফিস থেকে এলে পুকুরে ছাড়ব বোটগুলো। দারুণ মজা হবে, না মা?"
"তা তো হবে, কিন্তু, আজ তো তোর বাবার আসতে রাত হয়ে যাবে। কোথায় যেন যাবে বলছিল অফিসের কাজে অফিসের পর।"
"তা হলে?" জুলির কণ্ঠস্বরে উদ্বিগ্নতা।
"কাল সকালে ছাড়িস পুকুরে।"
"না, কাল না। আজই ছাড়ব।"
বিশাখাদেবী জানেন মেয়েকে। এবার বায়না শুরু হবে ওর। তারপর, জেদ। মেয়েকে এখানেই থামানো দরকার, মনে মনে ভাবেন তিনি। তাই তিনি সাথে সাথে বললেন, "একটা আইডিয়া এসছে মাথায়। চল্, পুকুর পাড়ে।"

মা, মেয়ে পুকুর ঘাটে এল। জুলি একটা ক্যারিব্যাগ করে কাগজের নৌকাগুলো এনেছে।
এই পুকুরটা জুলিদেরই। ওদের বসত বাড়ির ঠিক পিছনেই এটির অবস্থান।
বর্ষাকাল চলছে। স্বাভাবিক ভাবেই ঘাটের সিঁড়িগুলো বেশ পিছল। জুলির হাত শক্ত করে ধরে পুকুর ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে মেয়েকে নিয়ে সাবধানে নামলেন বিশাখাদেবী। তারপর, একদম শেষ ধাপে এসে মেয়েকে বললেন, "ছাড়্ নৌকাগুলো একে একে।"
মায়ের কথামতোন এক এক করে নৌকাগুলো সব ভাসিয়ে দিল জুলি পুকুরের জলে।
বিশাখাদেবী জলে হাত চালিয়ে তরঙ্গ তুললেন কিছুটা। আর তাতেই এগিয়ে চলল নৌকাগুলো।
জুলি একদৃষ্টিতে কয়েকক্ষণ দেখতেই থাকে ঐ দৃশ্য। তারপর বলে, "কেমন সুন্দর দুলে দুলে যাচ্ছে না মা বোটগুলো!"
"হ্যাঁ।" তাঁর মোবাইল ফোনে কি যেন করতে করতে বলেন বিশাখাদেবী।
"কিন্তু..."
"আবার কিন্তু কিসের?"
"বাবা তো দেখতে পেল না আমার বোটগুলো কি সুন্দর যাচ্ছে দুলে দুলে..."
আরো কিসব বলতে যাচ্ছিল যেন জুলি, কিন্তু বলতে পারল না বিশাখাদেবীর হাতে ধরা মোবাইল ফোনটা তখুনি বেজে ওঠায়।
বিশাখাদেবী মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রাখেন। তারপর, কলটা রিসিভ করে, স্পিকার অন্ করে, ফোনটা মেয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, "নে, তোর বাবার সাথে কথা বল্।"
জুলি তো অবাক।
ফোনটা হাতে নেয় সে। 
"হ্যালো, বাবা!"
"তোর নৌকাগুলো তো দারুণ বানানো হয়েছে রে। কি সুন্দর ভাসছে জলে!" জুলির বাবা রাজর্ষিবাবুর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে ফোনের ওপার থেকে। 
"তুমি কি করে জানলে?"
"তোর মা ভিডিও পাঠিয়েছে তো।"
মা-র দিকে তাকায় জুলি। সে দেখে, ওর মায়ের ঠোঁটের কোণে একটা মিষ্টি হাসি লেগে।


 

Comments :0

Login to leave a comment